ফান-জ্যাম!

.
.

গরিব একটা দেশ। ভয়াবহ দুর্নীতিগ্রস্ত সেই দেশটা। সেই দেশে একদিন হঠাৎ করে ক্যু হয়ে গেল। এক জেনারেল রাতের অন্ধকারে না, দিনদুপুরেই ক্ষমতা নিয়ে নিলেন। এবং নিজেকে সেই দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডিক্লেয়ার করলেন। ক্ষমতা নিয়েই তিনি ঘোষণা দিলেন—
: ছয় মাসের মধ্যে এই দেশকে আমি দুর্নীতিমুক্ত করব।
: মহামান্য প্রেসিডেন্ট, সময়টা একটু বাড়ান। তাঁর উপদেষ্টারা বললেন।
: অসম্ভব, মাই ওয়ার্ড ইজ স্টোন ওয়ার্ড...জোশের চোটে তিনি বলে ফেললেন, ‘ছয় মাস না, তিন মাসের মধ্যে আমি এই দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করে ছাড়ব...।’
: ক্ষমতা নিয়েই তিনি প্রথম সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন। সাংবাদিকেরা সব ভিড় করলেন।
: মহামান্য প্রেসিডেন্ট, আপনি বলেছেন ছয় মাসের মধ্যে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করবেন?
: ছয় মাস না, তিন মাসের মধ্যে।
: দুর্নীতিমুক্তকরণে আপনার প্রথম পদক্ষেপ কী হবে?
: আমার প্রথম পদক্ষেপ হবে, আমার দেশ থেকে সুইস ব্যাংকে পাচার হওয়া সব টাকা দেশে ফিরিয়ে আনব। সেই টাকায় দেশের উন্নয়ন করব।
: সুইস ব্যাংক থেকে টাকা ফিরিয়ে আনা এটা কি আদৌ সম্ভব? সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন।
: সম্ভব! হতেই হবে...মাই ওয়ার্ড ইজ স্টোন ওয়ার্ড।

কিছুদিন পর সত্যি সত্যিই সেই জেনারেল কাম প্রেসিডেন্ট তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হলেন সুইস ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে। সুইস ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে হইচই পড়ে গেল, একটা দেশের সদ্য ক্ষমতা নেওয়া প্রেসিডেন্ট স্বয়ং চলে এসেছেন। ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছুটে এলেন—
: মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আপনার জন্য কী করতে পারি?
: আমি আমার দেশকে তিন মাসের মধ্যে দুর্নীতিমুক্ত করব। আপনাদের সহযোগিতা চাই।
: জি, পত্রপত্রিকায় আপনার ঘোষণা দেখেছি।
: আমার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে, আমার দেশ থেকে দুর্নীতি করে আসা এই ব্যাংকে জমা হওয়া সব টাকা যত দ্রুত সম্ভব ফেরত দেবেন আপনারা।
: কিন্তু এটা তো সম্ভব নয়।
: সম্ভব হতেই হবে। আমার দেশের কারা কারা কত টাকা রেখেছে আপনার ব্যাংকে, তা আপনি বলবেন এবং আমার দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। এই টাকা আমার দেশের জনগণের টাকা।
: মাননীয় প্রেসিডেন্ট, এটা সম্ভব নয়। আমাদের ব্যাংকের আইনে এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমরা আমাদের ক্লায়েন্টদের সব তথ্য যেকোনো মূল্যে গোপন রাখি।

এই পর্যায়ে সুইস ব্যাংকের চেয়ারম্যান খেয়াল করলেন, তাঁর সাদা স্যুটের ওপর তিনটা লাল বিন্দু! তিনি আঁতকে উঠলেন। তার মানে তাঁর ওপর অস্ত্র টার্গেট করা আছে। এবার প্রেসিডেন্ট কাম জেনারেল মতান্তরে জেনারেল কাম প্রেসিডেন্ট বললেন—
: আমি ১০ পর্যন্ত গুনব। এর মধ্যে যদি আপনি সব তথ্য না বলেন...বুঝতেই পারছেন...।
: চেয়ারম্যান শুকনো মুখে বললেন, ‘মহামান্য প্রেসিডেন্ট, সম্ভব না...এটা এই ব্যাংকের নীতিবিরুদ্ধ।’
: আমি ১০ পর্যন্ত গুনব। এর মধ্যে আপনাকে বলতে হবে।
: স্যার, সম্ভব নয়।
: এক...দুই...তিন...।
: স্যার, সম্ভব নয়।
: চার...পাঁচ...ছয়...।
: স্যার, কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
: সাত...আট...নয়...।
: স্যার, ইম্পসিবল!
: দশ!
চেয়ারম্যান চোখ বন্ধ করলেন গুলি খাওয়ার জন্য। কিন্তু আশ্চর্য, গুলি হলো না। চেয়ারম্যান ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে দেখেন, হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছেন প্রেসিডেন্ট কাম জেনারেল মতান্তরে জেনারেল কাম প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট এবার গলা নামিয়ে ফিস ফিস করে বললেন, ‘আমি আপনাদের ব্যাংকে একটা অ্যাকাউন্ট খুলতে চাই, ব্যবস্থা করুন।’