রাজনীতিবিদদের কাছে জনগণের খোলা চিঠি

প্রিয় রাজনীতিবিদবৃন্দ

আঁকা: জুনায়েদ আজীম চৌধুরী
আঁকা: জুনায়েদ আজীম চৌধুরী

আমরা অনেক আগে থেকেই জানি, আপনাদের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র। তবে এই ফুলের ঘ্রাণ, বর্ণ, রূপ সহ্য করার ক্ষমতা আমরা হারিয়ে ফেলেছি! এই ফুল যেন ধুতরা ফুল!
আপনারা দু–তিন দলে ভাগ হয়ে সস্তা দু–চারটা প্রাণের বিনিময়ে আমাদেরকে যেভাবে ধারাবাহিক নাটক উপহার দিয়ে যাচ্ছেন, তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। বিনোদনজগতে আপনারা অতি অবশ্যই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। হ্যাঁ, কিছু নিন্দুক জিজ্ঞেস করছে, ‘এখন নাটকের দলগুলো কী করবে? রাজনীতি?’ তবে এই নিন্দুকদের কথায় পাত্তা দিয়ে আপনারা লাপাত্তা হয়ে যাবেন, এটা হতে পারে না! আপনাদের এমন নাটক করার পরই না আমরা জানতে পারলাম, আপনারাও কিছু করতে পারেন! ধন্যবাদ দিয়ে আপনাদের ছোট করব না, এর জন্য আপনারা নিজেরাই যথেষ্ট।
প্রিয় আত্মস্বীকৃত ‘প্রিয়বৃন্দ’, কদিন আগে দেখলাম, আপনাদের ইশারায় কী করে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী বালু ও ইটের ট্রাক নিয়ে নির্মাণকাজে হাত লাগিয়েছে। প্রকৌশলীরা তাঁদের কাজ হাতছাড়া হতে দেখে কিঞ্চিৎ মন খারাপ করলেও এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। অবশ্য মাথা অতি মাত্রায় বিশ্রামে থাকলে এমনিতেও খুব একটা ঘামে না। এ ছাড়া পুলিশকে দিয়ে রোগী নির্বাচন করে হাসপাতালে ভর্তি করানোর ঘটনাও ঘটিয়েছেন আপনারা। এ জন্য আপনাদের নোবেল প্রাইজ না দেওয়া হলে ঘোরতর অন্যায় হবে।
অন্যদিকে নেটওয়ার্কের বাইরে থেকেও দিব্যি ফোনালাপ করার মতো কীর্তি গড়েছেন আপনারা। বিদেশি ব্রাদারদের দিয়ে কাল্পনিক বিবৃতি লিখিয়েও সাহিত্য অঙ্গনে স্থাপন করেছেন বিরল দৃষ্টান্ত। রাজপথে যানবাহন পোড়ানোর উৎসব করে দেশকে রক্ষা করছেন শীতের প্রকোপ থেকে। অবরোধ নামক মিষ্টি এক কর্মসূচি দিয়ে ভাঙছেন বাংলাদেশের কৃষকের কোমর! আহা, কৃষকের জন্য আপনাদের সে কী ভালোবাসা! কৃষককে যেন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে আর কষ্ট করতে না হয়, তার জন্যই তো এই ব্যবস্থা।
আপনাদের এক পক্ষ বলছে, ‘আমরা কেবল জনগণকেই চাই।’ অপর পক্ষ বলছে, ‘না, আমরাও জনগণকে চাই।’ কিন্তু যে হারে আমাদের লাশ ফেলছেন, তাতে মনে হচ্ছে আমরা আপনাদের কিছুটা চাইলেও, আপনারা আমাদেরকে কিছুতেই চান না। এসব বলে কী হবে! আপনাদের তো আর নিরস্ত করা যাবে না। আপনারা আমাদের বন্ধু হয়েই থাকবেন। আপনাদের ব্যবসা আছে, বিদেশে গাড়ি–বাড়ি করার ঝামেলা আছে, টাকা পাচারে মেধা খাটানোর ব্যাপার–স্যাপার আছে। এসবে কান দিয়ে সময় নষ্ট করে লাভ কী!
একবার এক বিধ্বংসী ঝড় বাংলাদেশের দিকে আসতে আসতে নাকি অন্যদিকে ঘুরে গিয়েছিল। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, ওই ঝড় অন্যদিকে ঘুরে যাওয়ার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আপনাদের। আপনারা যে আমাদেরকে ভালোবেসেই এসব করেন, এটাই তার প্রমাণ। তার পরও খুব বলতে ইচ্ছে করে, প্লিজ, আমাদের এতটা ভালোবাসবেন না। বড় প্রেম যে সব সময় কাছে টানে না, দূরেও ঠেলে দেয়!
ইতি
আপনাদের ভালোবাসার চাপে পিষ্ট
বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ
লেখা: মহিউদ্দিন কাউসার