পারফরম্যান্সে হতাশ পিকেটাররা

প্রচ্ছদ: জুনায়েদ
প্রচ্ছদ: জুনায়েদ

শীতে যেমন ত্বক ফাটে, তেমনি হরতালে ফাটে ককটেল। শিং ছাড়া ছাগল হতে পারে, কিন্তু ককটেল ছাড়া হরতাল হয় না। হরতালে টায়ার ফাটলেও ধরে নিতে হবে ওটা হরতালকারীরাই ফাটিয়েছে। কে জানে, হয়তো ককটেল ফুরিয়ে গিয়েছিল! প্রতি হরতালে মোট কয়টি ককটেল ফাটল তার কোনো হিসাব নেই। কোনো মানে হয়? ককটেল বানানো তো সহজ কোনো ব্যাপার না। দক্ষ হাতে অনেক যত্ন আর মমতা নিয়ে তৈরি করা হয় এক-একটি ককটেল।
ককটেল বানানোটাও তো একটা কুটিরশিল্প। তাই কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হলো তার হিসাবের যেমন দরকার আছে, তেমনি কয়টি ককটেল ফাটল সেই হিসাব রাখাও অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সরকার সে হিসাব রাখেনি। এটিও ব্যর্থতারই পরিচয়। শুধু সরকার কেন, টিভি চ্যানেল, পত্রিকার সাংবাদিক, এমনকি হরতালকারীদের কাছেও এই হিসাব নেই, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। তবে সবচেয়ে বেশি হতাশ পিকেটাররা। হরতালে ককটেল মেরে মানুষকে আহত করাই তো একজন আদর্শ পিকেটারের গুণ! কিন্তু পিকেটাররা তাঁদের শতভাগ ঢেলে দিতে পারছেন কই? শত শত ককটেল ফাটে, অথচ আহত-নিহত হয় অল্প কজন। এই পারফরম্যান্সে পিকেটাররা নিজেরাই হতাশ বলে মনে করছেন অনেকে। তা ছাড়া মাঝেমধ্যে কিছু ককটেল অবিস্ফোরিতই থেকে যায়। ফলে ‘পিকেটার সোসাইটি’তে মুখ দেখানো কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্য কারিগরদের আরও সময় নিয়ে মনোযোগী হয়ে ককটেল তৈরি করতে হবে। দক্ষ হতে হবে পিকেটারদেরও। সুচারুভাবে ককটেল নিক্ষেপ, আতঙ্ক সৃষ্টি এবং মানুষ আহত করার জন্য পিকেটারদের নিয়মিত অনুশীলন অবশ্যম্ভাবী।
কিন্তু টানা হরতাল হওয়ায় তরুণ উদীয়মান পিকেটাররা অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছেন না। এ জন্যই টানা ৮৪ ঘণ্টা হরতালের শেষে কয়েকটা দিন বিশ্রামের জন্য রাখা হয়েছে। পরবর্তী হরতালের আগের এই মুহূর্তগুলোতে পিকেটারদের অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। প্রয়োজনে ঘরে বসেই ইউটিউবে অলিম্পিকের গোলক নিক্ষেপ ইভেন্টের ভিডিও দেখা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, কঠোর অনুশীলনই এনে দিতে পারে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। মানুষের দুর্ভোগের জন্যই তো রাজনীতি। আর ককটেল সেই রাজনীতিরই অন্যতম অস্ত্র!