অকারণে হর্ন: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ক্ষতির কারণ
উবার বাংলাদেশ ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘অকারণে হর্ন: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ক্ষতির কারণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২৩ নভেম্বর ২০২১। গোলটেবিল আলোচনার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।
অংশগ্রহণকারী
সৈয়দ নুরুল ইসলাম
যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, ট্রাফিক, ঢাকা দক্ষিণ
জিয়াউল হক
পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
প্রধান নির্বাহী, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)
ফাহমিদা খাতুন
নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি
আরমানুর রহমান
উবার প্রধান, বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারত
সৈয়দ আব্দুল হামিদ
অধ্যাপক, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কামাল ইউ এ চৌধুরী
অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সৈয়দ মাহফুজুল হক
ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ঢাকা
মুহম্মদ শহীদ উজ জামান
নির্বাহী পরিচালক, ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)
আহমেদ কামরুজ্জামান মজমুদার
প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফেয়ারিক পলু৵শন স্টাডিজ (ক্যাপস)
আবু সাইয়ীদ
চলচ্চিত্র নির্মাতা
জিয়াউর রহমান
উবার চালক
সূচনা বক্তব্য
আব্দুল কাইয়ুম
সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো
সঞ্চালনা
ফিরোজ চৌধুরী
সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো
সুপারিশ
■ হর্ন বন্ধে আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।
■ ট্রাফিক ব্যবস্থা ডিজিটাল করা জরুরি।
■ একই কোম্পানির বাসের মধ্যে প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে।
■ বিভিন্ন গতির গাড়ির জন্য আলাদা লেনের রাস্তা প্রয়োজন।
■ পরীক্ষামূলকভাবে একটি এলাকাকে হর্নমুক্ত ঘোষণা করতে হবে।
■ পথচারীদের মধ্যে সড়ক পারাপার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
■ সহজভাবে মোড় ঘুরতে প্রতিটি গলির মুখে বড় আয়না লাগানো প্রয়োজন।
■ ফুটপাত হকারমুক্ত করে সাধারণ পথচারী চলাচলের উপযোগী করা উচিত।
■ গবেষণালব্ধ ফল নিয়ে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণ করতে হবে।
■ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
■ গাড়ি আমদানিতে হর্নের শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া জরুরি।
■ বিআরটিএ থেকে চালকদের সতর্কবার্তা পাঠানো উচিত।
■ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও গণমাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম
আমাদের প্রত্যেকের স্বাস্থ্যহানি হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয় হর্নের কারণে। হর্ন বাজানোকে বহুমাত্রিক সমস্যা হিসেবে দেখা দরকার। কারণ, এটি শুধু হর্ন বাজানো নয়, বরং সমস্ত পরিবেশ, আইনকানুন, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, নীতিনির্ধারকদের চিন্তা—সবকিছুই এর সঙ্গে জড়িত। যখন একেকটা হর্ন বাজানো হয়, তখন কানে প্রায় তালা লাগে।
বাংলাদেশে শব্দদূষণ প্রতিরোধে উবার আজ নো হর্ন দিবস পালন করছে। উবারের চালকেরা হর্ন না
বাজানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
উবার কীভাবে চালকদের প্রশিক্ষিত করে, সেটা দেখা দরকার। অন্য চালকদের চেয়ে উবারের চালকেরা দক্ষ হন। মানুষের সচেতনতার খুব অভাব। রাস্তা পারাপারে হঠাৎ মানুষ দৌড় দেয়। সচিবালয়ের সামনে হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ থাকার
পরও সেখানে হর্ন বাজানোর সংখ্যা বেড়ে গেছে।
আশা করি আজকের আলোচনায় হর্ন বাজানো বন্ধে বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকেরা প্রয়োজনীয় পরামের্শ দেবেন।
মুহম্মদ শহীদ উজ জামান
অকারণে হর্ন স্বাস্থ্য অর্থনীতির ক্ষতির কারণ। জাতি হিসেবে আমরা শব্দ পছন্দ করি, যা বেশ মুশকিলের। আমাদের দেশে মানুষ কানের চিকিৎসক নিয়মিত দেখায় না। চোখের মতো নাগরিকদের নিয়মিত কানের পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। তাহলে হয়তো এই সংকটের বিষয়ে বোঝা যেত। সরকারের আইন রয়েছে, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তবে উদাহরণ তৈরি করতে হবে। মিজোরামের রাজধানী আইজলে কোনো গাড়িতেই হর্ন দেওয়া হয় না। অন্তত একটি এলাকাকে হর্নহীন করা গেলে তা মডেল হিসেবে পরবর্তী কার্যক্রমে ব্যবহার করা যাবে।
আইন তৈরির দিক দিয়ে আমরা শুরুর দিকে থাকলেও তা বাস্তবায়ন নিয়ে ভাবায়। ট্রাফিক বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, বেসামরিক প্রশাসন, মালিক সমিতির সামষ্টিক পদক্ষেপ কাগজে যতটা বিদ্যমান, বাস্তবে ততটা দৃশ্যমান নয়।
সরকারের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের এগিয়ে আসতে হবে। জনগণকে অযথা হর্ন ব্যবহার বন্ধে সচেতন করতে বয় স্কাউট, গার্ল গাইডস, রেড ক্রিসেন্ট, বিএনসিসি, বন্ধুসভার মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে কাজে লাগাতে হবে।
সৈয়দ মাহফুজুল হক
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতি পাঁচজনে একজন কানে কম শোনেন। যাঁরা কানে কম শুনছেন, তাঁদের ৮০ শতাংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বাস করেন। এই সচেতনতার জন্য বিভিন্ন দেশ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদেরও তেমন উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া রোধে বৈশ্বিকভাবে আলোচনা হচ্ছে াএবং বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নীতি প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমাদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
হর্নের জন্য আমাদের ধৈর্য কমে যাচ্ছে। হর্নের অন্যতম প্রধান কারণ হলো যানজট। যানজট নিয়ন্ত্রণ করলে হর্ন দেওয়ার প্রবণতা কমবে। অকারণে হর্ন বাজানো প্রাপ্তবয়স্কদের কানে কম শোনার বড় কারণ। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন শব্দদূষণ থেকে বাঁচতে পারে, তার জন্য কাজ করতে হবে। অকারণে হর্ন বাজানো বন্ধে নীতিমালা বাস্তবায়ন ও জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। নিয়মিত শ্রবণশক্তি পরীক্ষা করতে হবে। আশা করি বাংলাদেশ শব্দদূষণমুক্ত জাতি হিসেবে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
‘hearWHO’ নামে মোবাইলে ব্যবহারের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে। জনসাধারণ এর মাধ্যমে বিনা মূল্যে নিজেরাই কানে শোনার মাত্রা পরীক্ষা করতে পারবে। ঠিকভাবে শুনতে কোনো সমস্যা হলে চিকিৎসক দিয়ে কানের পরীক্ষা করার উদ্যোগ নিতে পারবেন। এটা তাঁদের জন্য বেশি প্রজোয্য, যাঁরা কানে শোনার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন।
ফাহমিদা খাতুন
শব্দদূষণের প্রভাব সামগ্রিকভাবে ব্যাপক। অনেক ক্ষেত্রে তা অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ছে। যাঁরা অসুস্থ হচ্ছেন, তাঁদের স্বাস্থ্য ব্যয় হচ্ছে। অসুস্থতার কারণে অনেকে কর্মক্ষেত্রে আবার শিক্ষার্থীরা স্কুলে অনুপস্থিত থাকছে, এর অর্থনৈতিক প্রভাব আছে।
উৎপাদনশীলতার ওপর প্রভাব পড়ে। ঘুমের ব্যাঘাতের কারণে ঠিকমতো কাজ না করতে পারলে উৎপাদন কমে যায়। শব্দদূষণের প্রভাবে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকট হয়। উৎপাদনের পাশাপাশি কাজের পরিসর সংকুচিত হতে থাকে। শব্দদূষণের কারণে স্বাস্থ্য ব্যয়ের পাশাপাশি কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় দেশের জিডিপিতে প্রভাব পড়ছে।
উন্নত দেশে শব্দদূষণ এলাকায় বাড়িভাড়া কম হয়। যেহেতু ঢাকায় জনসংখ্যার চাপ বেশি, জায়গা কম, তাই হয়তো এমন অর্থনৈতিক প্রভাব পড়ে না। তবে আমরা যখন উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশে পরিণত হব, তখন এর আর্থিক মূল্যমান হবে। মানুষের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার বিষয়ে সচেতনতা বাড়বে। দুই ভাবে আমরা অযথা হর্ন বাজানো বন্ধ করতে পারি—এক. চালকেরা যেন হর্ন না বাজান, যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে তা বন্ধ করা; দুই. নগর পরিকল্পনা ও আইন প্রণয়ন করা। ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ না হলে এ শহরে শব্দদূষণ কমবে না। বিকেন্দ্রীকরণের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সুযোগ সৃষ্টি ও বিনিয়োগও জরুরি।
শব্দদূষণ বন্ধে বিদ্যমান আইনের কতটা প্রয়োগ হচ্ছে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সঠিকভাবে আইনের বাস্তবায়ন করতে হবে। বাণিজ্যিক, আবাসিক, হাসপাতাল প্রভৃতি এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। অযথা হর্ন বাজানোর কারণে কত টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়, তার সামগ্রিক কোনো গবেষণা নেই। এ বিষয়ের গবেষণালব্ধ ফল নিয়ে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণ করতে হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
আমি ‘বেলা’য় যুক্ত হওয়ার পর ১৯৯৪ সালে মোটরযান আইনের ধারা উল্লেখ করে প্রথম একটা স্টিকার তৈরি করেছিলাম—‘অকারণে হর্ন বাজানো যাবে না’। সে সময়ের পরিস্থিতির কোনো উত্তরণ ঘটেনি, বরং এখন তার আরও অবনতি হয়েছে। অকারণে হর্ন বাজানো রোধে আইনের চেয়ে মনস্তাত্ত্বিক বিষয় বেশি কাজ করবে। হর্ন বাজানোর অর্থ হলো, এক চালক অন্য চালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। বিদেশে এক চালকের হর্ন বাজানোকে অন্য চালককে অপমান করার মতো বিষয় মনে করা হয়। যাঁরা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে চলেন, তাঁরা হর্নের শব্দ বুঝতে পারেন না। তবে যদি আপনি রিকশায় চড়েন কিংবা গাড়ির গ্লাস নামিয়ে চলেন, তাহলে শব্দের যন্ত্রণা বুঝতে পারবেন। হর্ন না বাজিয়েও গাড়ি চালানো সম্ভব, বাংলাদেশের চালকেরা তা বিশ্বাস করেন না।
এ–সংক্রান্ত আমাদের যে আইন আছে, রেডিও–টেলিভিশনে তার ব্যাপক প্রচার করতে হবে। যত্রতত্র পারাপারে পথচারীদের শৃঙ্খল করতে হবে। ‘বেলা’ অফিসের গাড়ির কেউ অযথা হর্ন বাজান না। বাস, ট্রাক, পরিবহন মালিক সমিতি ও উবারের মাধ্যমে চালকদের অযথা হর্ন না বাজানোর কথা গুরুত্বসহকারে বলা যেতে পারে।
সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন ও বেসরকারি গণমাধ্যমের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের সঙ্গে বাস্তবতার চরম বৈসাদৃশ্য রয়েছে। অভ্যাস পরিবর্তনে সংশ্লিষ্ট আইন ও জনস্বাস্থ্যের ওপর হর্নের প্রভাবের বিষয় প্রচার করতে হবে।
আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার
ঢাকায় বায়ুদূষণ খুব বেশি। এখানে উঁচু ভবনে বসে এক কিলোমিটারের বেশি দেখতে পাই না। কিন্তু দুই কিলোমিটার দূর থেকে হর্ন শুনতে পাই—নিষিদ্ধ হর্ন, হাইড্রোলিক হর্ন। দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স বিভাগের অবসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় এ বছর ১৪৩ দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান ১৪২। আমাদের প্রতিষ্ঠান ক্যাপস ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর ঢাকা শহরের ৭০টি এলাকার শব্দ ও বায়ুর মান পরিমাপ করে থাকে।
কোনো এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করার ক্ষেত্রে যেসব কার্যক্রম দরকার, সেগুলো না করে হঠাৎ নীরব এলাকা ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। সচিবালয় এলাকায় সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ হচ্ছে। সচিবালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রতি ১০ মিনিটে ২৯২ বার, জিরো পয়েন্টে ৩৩২ বার হর্ন বাজে।
বাংলাদেশে ঘোষিত চারটি ‘নীরব এলাকা’ আছে—সচিবালয়ের চারপাশের এলাকা, সংসদ ভবনের সামনে ‘আড়ং’ থেকে সোবহানবাগ মসজিদ পর্যন্ত এলাকা, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও আগারগাঁও এলাকা। কিন্তু শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ অনুসারে কার্যত সমগ্র ঢাকা শহর নীরব এলাকা। স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালত, মসজিদ, মাদ্রাসা ও গির্জার ৩০০ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত নীরব এলাকা। তাহলে ঢাকা শহরের ফাঁকা জায়গা আর কতটুকু থাকে?
২০১৬ এবং ২০১৭ সালে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজে দৃশ্যত তেমন সমন্বয় নেই। প্রকল্প গ্রহণের পর ঢাকায় এলাকাভেদে প্রতিবছর ৭ থেকে ১০ শতাংশ করে শব্দদূষণ বাড়ছে। কিছু এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু এই এলাকার আশপাশে শব্দদূষণ বেশি হচ্ছে।
শব্দের কারণে ঢাকা শহরে পাখি কমে যাচ্ছে। মৌমাছি ও পাখি না থাকলে পরাগায়ন হবে না; পরাগায়ন না হলে গাছের বৃদ্ধি ঘটবে না। ঢাকা শহরে প্রতিদিন শুধু গাছের পাতায় ৫০০ মেট্রিক টন ধুলাবালু পড়ছে। তার ওপরে শব্দদূষণ থাকলে এখানে ইকোলজি কোনোভাবেই আশা করা যায় না।
পরিবেশ অধিদপ্তর শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬–এ ঘোষণা করেছে নীরব এলাকা, মিশ্র এলাকা, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা ও শিল্প এলাকা। তবে নির্ধারিত মানমাত্রা কোথাও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। শব্দদূষণের চেয়ে সরব ঘাতক আর নেই। শব্দদূষণ রোধে সমন্বিত এবং অংশীদারিমূলক কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।
কামাল ইউ এ চৌধুরী
যেকোনো অনুষ্ঠান আমরা শব্দ দিয়ে উদ্যাপন করতে পছন্দ করি। বিশেষ করে শহরে বিভিন্ন দিবস উদ্যাপনে শব্দের ব্যাপক ব্যবহার থাকে। কেউ শুনছেন কি শুনছেন না, সেটি বিষয় নয়; বরং কেউ বাজাচ্ছেন সেটিই মুখ্য! ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় শব্দ নিয়ন্ত্রণ যদি সম্ভব হয়, তবে তা সারা দেশেই সম্ভব। অস্থিরতা ও ট্রাফিক জ্যাম থেকে বাঁচার কারণে অনেক সময় হর্ন দেওয়া হয়। অনেকে আবেগ, রাগ, দুঃখ ও হতাশা প্রকাশের জন্য হর্ন বাজান। ঢাকা শহরে বিভিন্ন গতির গাড়ি একই লেনে চলে, অন্য গাড়ির ধাক্কা থেকে বাঁচার জন্য অনেকে হর্ন বাজিয়ে থাকেন। মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ ঢাকার বাসিন্দাদের মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
হাইড্রোলিক হর্ন ও শব্দদূষণ অস্থিরতা বাড়িয়ে তোলে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। যানবাহনের অতিরিক্ত হর্ন শিশুদের শেখার আগ্রহ কমিয়ে দেয় এবং অনেক ক্ষেত্রে ভুল শেখায়। ২০১১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরোপের বিমানবন্দরের কাছাকাছি যাঁরা বসবাস করেন, তাঁরা অন্যদের চেয়ে শতকরা ২৫ ভাগের বেশি দুশ্চিন্তা কমানোর ওষুধ সেবন করেন। যাঁরা ব্যস্ত সড়কের পাশে থাকেন, তাঁদের বিষণ্নতা দেখা দেয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রাফিক পুলিশ ও চালকদের শ্রবণক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম।
গাবতলী থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত সড়কে বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল আছে, অথচ এই সড়কে রাতের বেলায় ভারী যানবাহন উচ্চমাত্রায় হর্ন বাজিয়ে চলে, ফলে রোগীদের অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করতে হয়। জনস্বার্থে এই রাস্তাকে ‘নীরব’ ঘোষণা করা উচিত।
জিয়াউর রহমান
হর্নের কারণে কানে কম শোনার সমস্যা আছে আমার। উচ্চ শব্দ ছাড়া কথা শুনতে কষ্ট হয়। অনেক সময় কানে ধাঁধা লেগে যায়। বাড়িতে ফেরার পরও মেজাজ খিটখিটে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ কথা শুনতেও ভালো লাগে না। ঘুম ভালো হয় না। উচ্চ শব্দদূষণের কারণে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তার বর্তমান অবস্থায় চালকেরা হর্ন বাজাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।
ফুটপাতে হকার বসাতে সাধারণ মানুষ রাস্তায় চলে আসে। তাদের অতিক্রম করতে গেলে হর্ন দিতে হয়। পথচারীরা ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করেন না। এমনকি রাস্তা পারাপারের সময় তাঁরা ইশারা না দিয়ে গাড়ি বন্ধের চেষ্টা করেন।
পথচারীদের সড়ক পারাপার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। এলোমেলো রিকশা চলাচলের জন্য হর্ন দিতে হয়। রিকশার জন্য আলাদা লেন করা যেতে পারে। বারিধারার মতো প্রতিটি গলির মুখে বড় আয়না থাকলে মোড় ঘুরতে চালকদের হর্ন বাজাতে হবে না। নির্দিষ্ট জেব্রা ক্রসিং দিয়ে মানুষ পারাপারে সচেতন করতে হবে। একই কোম্পানির বাসের মধ্যে প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে।
সৈয়দ আব্দুল হামিদ
অকারণে হর্ন মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের ঘুমের সমস্যা হচ্ছে, অস্থিরতা বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং এর ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব পড়ছে। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ সমস্যা ও গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব আছে। দীর্ঘ মেয়াদে শ্রবণক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এসব বিষয়ে চিকিৎসার জন্য অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। শব্দদূষণের কারণে একদিকে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে উৎপাদনক্ষমতা কমেও ক্ষতি হচ্ছে। এমনকি পথচারীদের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে।
বাংলাদেশের শহরগুলোতে হর্নের মাত্রা সাধারণত ৭০ থেকে ১২০ ডেসিবেলের মধ্যে হয়ে থাকে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে। এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের শেখার ক্ষমতা, আইকিউ কমে যায়। তারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। গর্ভবতী ও তাঁর গর্ভের সন্তানের সমস্যা হচ্ছে।
ইউরোপের দেশগুলোতে হর্ন নিয়ে গবেষণা হলেও হাইড্রোলিক হর্ন নিয়ে গবেষণা হয়নি। কারণ, তাদের দেশে হাইড্রোলিক হর্ন নেই।
তাই হাইড্রোলিক হর্নের ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণে তেমন কোনো গবেষণা হয়নি। তবে যেসব সমস্যা আমরা উল্লেখ করেছি, তা হিসাব করলে অপূরণীয় হবে।
হর্নের ব্যবহারের সঙ্গে সড়ক ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, নগর–পরিকল্পনার মতো বিষয় সংশ্লিষ্ট। আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা ডিজিটাল করতে হবে। সামগ্রিকভাবে অযথা হর্ন বাজানো বন্ধে পদক্ষেপ না নিলে এটি সম্ভব হবে না। অন্যান্য দেশে নিজের গাড়ি মালিক নিজেই চালান। আমাদের দেশে চালক রেখে চালানো হয়। মালিকের সচেতনতা এবং চালকের সচেতনতা এক হবে না।
গাড়ির মালিক তাঁর চালককে এ বিষয়ে অবশ্যই সচেতন করবেন। পথচারীদের ফুটপাত ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে। তা ছাড়া তাঁরা চলাচলের সময় মূল রাস্তায় চলে এলে চালককে সতর্কতার জন্য হর্ন বাজাতে হয়। আমাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে যা যা দরকার, সেগুলোর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
আবু সাইয়ীদ
সবাই জানেন অতিরিক্ত শব্দের কারণে শিশুদের ক্ষতি হচ্ছে, হার্টের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু কেউ তা বলছে না। মেনে নেওয়া আমাদের একধরনের প্রবণতা। আমরা অনেক কিছু মেনে নিই। সে কারণে বিষয়টি জটিল। প্রথমত, মানুষের মননে এ বিষয়ে কাজ করতে হবে। সে কারণে আমার মনে হয় না খুব সহজে এখান থেকে উত্তরণ ঘটবে। আমি গাড়ি চালানোর সময় হর্ন দিই না।
হর্ন ছাড়া গাড়ি চালানো যায়। নেপালের কাঠমান্ডুতে গাড়িতে হর্ন দেয় না। হর্ন বন্ধে ট্রাফিক পুলিশের বড় ভূমিকা রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ কতটা ক্ষমতাবান, সে বিষয়ে তাদের জানার ঘাটতি আছে। তাদের অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হয়। যে শহরে ঘণ্টায় ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার গাড়ির গতি, সে শহরে কেন ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালাতে হবে?
কোনো একটি এলাক বা উপজেলা পরীক্ষামূলকভাবে হর্নমুক্ত ঘোষণা করতে হবে। এলাকাটি হর্নমুক্ত করতে যা যা করা দরকার, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। ভুল করে জেব্রা ক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে গেলেও রাস্তায় মানুষকে সবার ওপরে স্থান দিতে হবে।
জিয়াউল হক
শব্দদূষণ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। আমাদের দেশের নাগরিকেরা যখন বিদেশে যান কিংবা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় প্রবেশ করেন, তখন তাঁদের ব্যবহার এক রকম আর দেশের অন্যান্য সড়কে তা আরেক রকম। এর পরিবর্তন প্রয়োজন। বিদেশ থেকে কেউ এলে প্রথমে ট্রাফিক ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দেখেন। এ দুটি বিষয়ে কোন শহর কতটুকু বসবাসযোগ্য, তা পরিমাপের জন্যও অন্যতম প্রধান সূচক। শব্দদূষণ বন্ধে আমাদের তেমন অগ্রগতি নেই। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা–২০০৪ প্রয়োগে ব্যর্থতা রয়েছে। এখানে তাৎক্ষণিকভাবে জরিমানা করার বিষয়টি নেই।
সচিবালয়ের চারপাশে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা হলেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। তবে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা হবে। ঘোষিত নীরব এলাকা কার্যকর করার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সে এলাকায় হর্ন বাজালে জরিমানার পরিমাণ অন্য এলাকার চেয়ে বেশি হবে।
শুধু ইউরোপে নয়, এশিয়ার দেশগুলোতেও রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা খুব কম। অর্থাৎ সেখানে সবাই ট্রাফিক আইন মানছেন, হর্ন বাজান না। শুধু সচেতনতা বাড়িয়ে কাজ হবে না আমাদের আর একটু কঠোর হতে হবে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। মোটরসাইকেল আমদানিতে হর্নের শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়ে তা মানতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মোটরসাইকেলের ব্যবহার বেড়েছে, যা হর্নের বড় উৎস। এক তথ্যমতে ৭৫ ভাগের বেশি শব্দদূষণের উৎস হলো মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন করা গেলে অযথা হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হতো। হর্নের ব্যবহার বন্ধে সচেতনতার পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে।
আরমানুর রহমান
অযথা হর্ন দেওয়ার অভ্যাস বদলাতে হলে সচেতনতা বাড়াতে হবে। হর্ন না বাজানোর জন্য আমাদের মনমানসিকতায় পরিবর্তন আনা দরকার। উবারে এক ছাতার নিচে বহু চালক রয়েছেন। আমাদের পক্ষে তাঁদের কাছে পৌঁছানো সহজ। আমরা বিশেষজ্ঞ নই। আমরা কোনো বার্তা তৈরি করে দিলে তা গ্রহণযোগ্য না–ও হতে পারে। আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি বার্তা অনুমোদন পেয়েছি এবং সেই বার্তা আমাদের গাড়িতে লাগিয়ে রাখছি। পাশাপাশি আমাদের আবশ্যিক প্রশিক্ষণে অযথা হর্ন না দেওয়ার বিষয়টি যুক্ত করেছি।
আমরা আমাদের চালক ও সহযোগীদের অ্যাপের মাধ্যমে অযথা হর্ন না বাজানোর বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে বার্তা পাঠাচ্ছি। এ বছর উবারের পঞ্চম বর্ষপূর্তি আমরা সপ্তাহব্যাপী উদ্যাপন করছি। ২৩ নভেম্বরকে আমরা ‘নো হর্ন ডে’ হিসেবে পালন করছি। যাঁরা উবার ব্যবহার করেন, তাঁরা অ্যাপের মাধ্যমে বেশি হর্ন বাজানো চালককে নিয়ে অভিযোগ করতে পারেন। তাহলে আমরা সেই চালককে অযথা হর্ন না বাজানোর বিষয়ে সতর্ক করে দিতে পারি।
হর্ন বন্ধে বিভিন্ন গবেষণাসহ পুলিশ, বিআরটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তরের মতো দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উবার কাজ করতে আগ্রহী।
সৈয়দ নুরুল ইসলাম
সবাই মনে করেন আজকের আলোচনার যে শিরোনাম, তার একমাত্র দায়িত্ব আমাদের। ভালো হলে তার ভাগ অনেকেই নিতে চান; কিন্তু ব্যর্থ হলে দায় কেউ নিতে চান না। প্রত্যাশা বাস্তবায়নে আমরা একমত নই। যা চাই তা করতে চাই না। বাইরের দেশে গিয়ে আমরা যে চিত্র দেখি, তা মনেপ্রাণে চাই; কিন্তু তা বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে যার যা কর্তব্য, তা পালন করি না। যদি ইউরোপের মতো কিছু চাই, তাহলে তা রপ্ত করতে হবে।
একজনের কাজ আরেকজন করে দেবেন না। সবাই যদি শব্দদূষণ বন্ধ করতে চাই, তাহলে আমরা ইউরোপ অথবা জাপানের নাগরিকের মতো হয়ে যাই না কেন? সবাই নিজের কাজটি করলে আমাকে ইউনিফর্ম পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। আমি জাপানে ঘুরেছি, ১০-১২ দিনে পুলিশ দেখিনি। ট্যাক্সি, ট্রেন, বুলেট ট্রেন—সবকিছু সেখানে নিয়ম মেনে চলে।
আমি জাতিসংঘ মিশনে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পূর্ব তিমুরে গিয়েছিলাম তাদের মধ্যে কাজ করার জন্য। কিন্তু দেখেছি, তারা হর্ন বাজায় না। চুরি করে না। হর্ন বাজালে তারা অপমানবোধ করে।
২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৮৮ ধারা অনুযায়ী, উচ্চমাত্রায় হর্ন বাজালে অনধিক ৩ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওই কর্তৃপক্ষ পুলিশ নয়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। ফলে অযথা হর্ন বাজানো বন্ধে পুলিশের কার্যত হাত-পা বাঁধা।
মানুষের কথা বলার স্বাভাবিক শব্দমাত্রা ৬০ ডেসিবেল। কার ও ট্রাকের সাধারণ হর্ন ৭০ থেকে ৯০ ডেসিবেল। অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, হাইড্রোলিক হর্ন ১২০ ডেসিবেল। ১২০ ডেসিবেল মাত্রার হর্ন মস্তিষ্ক ও কানের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যু, অকালপ্রতিবন্ধী, মস্তিষ্কবিকৃতি, অল্প বয়সে বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির অন্যতম প্রধান কারণ হর্নের শব্দ।
অযথা হর্ন বন্ধ হোক, আমাদের সবাইকে সেটা চাইতে হবে। সমাধানের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। বাস্তবায়নের জন্য শুধু নির্দেশ দিলে হবে না। বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। দুই কোটি মানুষের শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে পাঁচ-ছয় হাজার ট্রাফিক পুলিশ। ১৬ লাখ গাড়ি আছে ঢাকায়! এর মধ্যে মোটরসাইকেল আছে আট লাখ। প্রতি মাসে ১০ হাজারের বেশি গাড়ি যুক্ত হয়। এর সঙ্গে জনসংখ্যা বাড়ে। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ বাড়ছে না।
আমরা কেউ চাই না যে অকারণে হর্ন বাজুক। এ বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরতে হবে। তাহলে সরকার এ বিষয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ফিরোজ চৌধুরী
রাস্তার হর্ন স্কুলের শিশুসহ প্রায় সব শ্রেণির মানুষের ক্ষতি করছে। এখন এটা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। সবার দিক থেকে এ ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।