মাতুস ক্র্যাচমারিক স্লোভাকিয়ার প্রধান দৈনিক পত্রিকা এসএমইর একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। তাঁর কাজের বিষয় মানবাধিকার, নিরাপত্তা ও ইউরোপের রাজনীতি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গোলাম মোর্তুজা
প্রথম আলো: আপনি মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন। আপনার দেশে কী ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রবণতা দেখতে পান?
মাতুস: দেখুন, আপনি হয়তো জানেন দুটি বিশ্বযুদ্ধে আমাদের অনেক লোক মারা গেছেন। এরপর কমিউনিস্ট আমলে যে একনায়কতন্ত্র কায়েম হয়েছিল, তখনো অনেক মানুষ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। পরে কমিউনিস্ট রাষ্ট্র চেকোস্লোভাকিয়া ভাগ হয়ে ১৯৯৩ সালে স্লোভাকিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের সৃষ্টি হয়। তার আগে ‘ভেলভেট বিপ্লবে’ ১৯৮৯ সালে কমিউনিস্ট একনায়কতন্ত্রের পতন হয়। ১৯৮৯ সালের আগে দেশটিতে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো ঘটনার প্রবণতা ছিল। বিরোধী মতকে দমন করতে সরকার গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে নিজের ক্ষমতাকে সুসংহত করতে এ পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীন স্লোভাকিয়া হওয়ার পর থেকে রাজনীতিবিদেরাই সে পথ থেকে সরে এসেছেন। তাঁরাই উদ্যোগ নিয়েছেন। বিচার-প্রক্রিয়া সুসংহত হয়েছে এবং তাতে মানুষের আস্থা ফিরেছে। কারণ, তাঁরা (রাজনীতিবিদেরা) জানেন, আজ তাঁদের বিরোধীপক্ষের সহকর্মীরা যে ঘটনার শিকার হচ্ছেন, কাল সে পরিণতি তাঁদেরও হতে পারে। আপনাদের দেশের রাজনীতিবিদদের এখনই সে বিষয়টা অনুধাবন করা উচিত। অন্তত কোনো রাজনীতিবিদেরই এটা ভাবা উচিত নয় যে তাঁরা চিরদিনই সরকারে থাকবেন। সরকার পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার পরে তাঁরা কী করবেন, সে সম্পর্কে তাঁদের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা উচিত।
প্রথম আলো: গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
মাতুস: আমি শুনলাম আপনাদের ওপর অনেক চাপ থাকে। এ রকম আরও অনেক দেশেই শুনেছি। চাপ মোকাবিলা করেই আমাদের (গণমাধ্যম) এগিয়ে যেতে হবে। বৈশ্বিকভাবেই গণমাধ্যম, বিশেষ করে মুদ্রণমাধ্যমকে কিছু চাপ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
প্রথম আলো: কী রকম?
মাতুস: আমি যে পত্রিকায় কাজ করি চার বছর আগে তা ৮০ হাজার কপি বিক্রি হতো। এখন বিক্রির সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজারে। কারণ, মানুষ অনলাইনে সংবাদ পড়ছে। এতে আমাদের আয় আশঙ্কাজনক হারে কমছে। যদিও অনলাইনে নতুন ব্যবসার সুযোগ হচ্ছে। তবে এটা জেনে ভালো লেগেছে যে আপনারা অনলাইনেও ভালো করছেন। আমি শুনেছি আপনাদের প্রতিদিনের পাঠকসংখ্যা সাড়ে ৫৫ লাখ, যা আমার দেশের মোট জনসংখ্যার সমান।
প্রথম আলো: মাধ্যমগত সমস্যা ছাড়া গণমাধ্যমের ব্যবসা সংকোচনের আর কী অন্য কোনো কারণ আছে বলে মনে করেন?
মাতুস: স্লোভাকিয়ার চেয়ে বাংলাদেশ আকারে প্রায় তিন গুণ বড়। কিন্তু আমার দেশের চেয়ে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ৩০ গুণ বেশি। তাই বাংলাদেশে হয়তো পত্রিকার ব্যবসা বৃদ্ধির জায়গা থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের ওখানে নেই। কারণ, আপনাদের দেশে এখন লেখাপড়া জানা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আর অনেক মানুষ ইন্টারনেটের বাইরেও রয়েছে। তা ছাড়া, আমাকে এখানে অনেকে বলেছেন, তাঁরা ইন্টারনেটে পত্রিকা পড়তে পছন্দ করেন না। প্রতিদিন সকালে তাঁরা প্রথম আলো পড়েন। তবে বলা যায়, এ ধরনের মানুষের সংখ্যা কমছে, ভবিষ্যতে আরও কমবে।
প্রথম আলো: ঢাকায় কী ভালো লাগল?
মাতুস: আপনাদের আতিথেয়তা অসাধারণ। এখানে নাকি অতিথিকে ঈশ্বরের সঙ্গে তুলনা করা হয়। আমি অবশ্য ঢাকায় খুব বেশি একটা ঘোরার সুযোগ পাইনি।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ মাতুস।
মাতুস: আপনাকে এবং প্রথম আলোকে অসংখ্য ধন্যবাদ।