উত্তরার তৈরি প্লটগুলো পাবেন 'আওয়ামী পল্লী'র ২৪২ জন!

>

রাজধানীর উত্তরা, গুলশান ও বনানী এলাকায় ১৯৯৯ সালে বরাদ্দ করা ৩০১টি সরকারি প্লটের মধ্যে কমপক্ষে ১৮০টির বরাদ্দ পান সেই সময়কার সরকারের মন্ত্রী–সাংসদসহ সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। তা নিয়ে ১০ জুলাই প্রকাশ করা হয় ‘গুলশান বনানী উত্তরায় আওয়ামী পল্লী’ নামের প্রতিবেদনে। এরপরে ২০০১ সালে  সেই আওয়ামী পল্লীর ২৪২ জনকে উত্তরার তৈরি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ নি​েয় ৯ মে প্রকাশ করা হয় ‘উত্তরার তৈরি প্লটগুলো পাবেন “আওয়ামী পল্লী”র ২৪২ জন’ শিরোন​ামের প্রতিবেদন।

ঢাকায় সরকারি জ​িমর প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে সব সরকারের আমলেই নেতা–কর্মীরা অগ্রাধিকার পেয়েছেন। তাই তো ২০০৫ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছে ‘অভিজাত এলাকায় বিএনপি পল্লী’ শিরোনামের প্রতিবেদন।

.
.

রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউনের সম্প্রসারিত তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পে যে ২ হাজার ৬৮৭ জনকে প্লট বরাদ্দের তালিকা গত ৩ মে প্রকাশ করা হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র ২৪২ জন ভাগ্যবান ব্যক্তি অল্প সময়ের মধ্যে জমি পেতে পারেন। অন্যদের দেওয়ার মতো জমি এখনো অধিগ্রহণ করা হয়নি এবং প্রস্ত্তত করা দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ।
আর ওই ২৪২ জন হচ্ছেন ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে একবার বরাদ্দ দিয়ে যে তালিকা বাতিল করা হয়েছিল সেই তালিকারই অন্তভু‌র্ক্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নিজস্ব অথবা কাছের লোক। তখন গুলশান-বনানী ও উত্তরায় বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে ওই ২৪২ জনকে উত্তরায় জমি দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল।
এখন পর্যন্ত রাজউকের ভেতরের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এদেরকেই প্লট দেওয়া হবে উত্তরা ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর সেক্টরে। এই জমিগুলো তৈরিই আছে।
তবে তৈরি এই ২৪২টি প্লট পাওয়ার জন্য ভেতরে ভেতরে প্রতিযোগিতাও আছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মচারী যারা এবার বরাদ্দ পেয়েছেন তারাই আগে ওই প্লটগুলো নেবেন বলে জোট বাঁধছেন।

প্রকৃত সৌভাগ্যবানদের বিষয়ে জানতে গতকাল মঙ্গলবার রাজউকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজুল হক বা বোর্ড সদস্যদের পাওয়া যায়নি। রাজউক চেয়ারম্যান প্লট বরাদ্দ তালিকা প্রকাশের আগের দিন আমেরিকা চলে গেছেন বলে জানা গেছে। তবে প্লট বরাদ্দ কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অতীতের ২৪২ জনকে আগে প্লট দেওয়ার ব্যাপারে চাপ আছে। আবার রাজউকের প্লট বরাদ্দপ্রাপ্ত কর্মচারীরা রাজউকের বাইরের কাউকেই ওই প্লটগুলো দিতে চরম আপত্তি করছে। তারা নিজেরাই ওই প্লটগুলো পেতে চায়।

উল্লেখ্য, এবারের বরাদ্দে রাজউকের ২২৬ জন কর্মচারী রয়েছেন।

রাজউকের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ’৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিতর্কিত তালিকা (‘আওয়ামী পল্লী’ বলে পরিচিতি লাভকারী) বাতিল করা হলেও এবারের তালিকা ঘোষণার পর আগের তালিকা কার্যত বাতিল হয়নি বলে প্রমাণিত হয়ে গেছে। সম্প্রতি ঘোষিত ২ হাজার ৬৮৭ জনের তালিকার মধ্যে তাদের সবাইকে রাখা হলেও তাদের জন্য আরেকটি অগ্রাধিকারভিত্তিক অঘোষিত তালিকা তৈরি হয়েছে। আগে ঘোষিত তালিকায় মন্ত্রীদের মধ্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মওলানা মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম, বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসেন, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সতীশ চন্দ্র রায়, মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন্নেসা তালুকদার প্রমুখ ছিলেন, এবারও সবাই রয়েছেন।

আগের তালিকায় গুলশান-বনানী-উত্তরার জন্য সরকারদলীয় সাবেক ও বর্তমান ৬৫ জন সাংসদ বরাদ্দ পেয়েছিলেন। এদের মধ্যে উত্তরায় বরাদ্দ পেয়েছিলেন ৫১ জন। এবারের তালিকায় এদের সবাইকে রেখে বিরোধী দলগুলোর মধ্য থেকে ১০ জনকে অন্তভু‌র্ক্ত করা হয়েছে, তবে পরে অন্তর্ভুক্তরা উল্লিখিত চারটি সেক্টরে প্লট পাবেন না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চারজন কর্মকর্তা আগের তালিকার মতো এবারের তালিকায়ও স্থান করে নিয়েছেন। একইভাবে তাদের আত্মীয়স্বজন, শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী সৌভাগ্যবানদের তালিকায় এবারও রয়েছেন।

সূত্রমতে, উত্তরা ১১ থেকে ১৪ নম্বর সেক্টরে বিচ্ছিন্নভাবে প্রায় আড়াইশ প্লট রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের মামলাজনিত কারণে ৫০টির মতো প্লট রাজউকের আওতার বাইরে রয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলে তারা মামলা উঠিয়ে নেবে এমন আভাস পেয়েছে রাজউক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তালিকাভুক্ত সৌভাগ্যবান ২৪২ জনের তালিকার বাইরে বাকি ২ হাজার ৪৪৫ জন কবে নাগাদ প্লট পাবেন তা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা আদৌ বলতে পারছেন না। তবে রাজউকের বিভিন্ন প্রকল্পের একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, উত্তরা ও মিরপুরের বাউনিয়া, দিয়াবাড়ি, নলভোগ, চণ্ডালভোগ প্রভৃতি মৌজায় অবস্থিত সম্ভাব্য জমিগুলো এখনো অধিগ্রহণ করা হয়নি। অন্যদিকে অধিগ্রহণ করা হলেও এসব জমি যেহেতু কম-বেশি ১৫ ফুট পানির নিচে রয়েছে এবং সেগুলো ভরাট করার জন্য রাজউকের খোঁজে মাটি নেই, তাই এখানে প্লট তৈরি ও বরাদ্দপ্রাপ্তদের বুঝিয়ে দেওয়া কয়েক বছরের ব্যাপার।

আরও পড়ুন :