সংযোজক থেকে উৎপাদক হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি

>

জে একরাম হোসাইন
জে একরাম হোসাইন

মোটরসাইকেল একটি জনপ্রিয় বাহন। দেশের বাজারে সব সময়ই মোটরসাইকেলের চাহিদা আছে এবং তা বাড়ছে। আমদানির বাইরে দেশে মোটরসাইকেল সংযোজিত হচ্ছে। আবার দেশেও উৎপাদন করার উদ্যোগ নিয়েছেন কেউ কেউ। এসব নিয়েই কথা বলেছেন টিভিএস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জে একরাম হোসাইন। সাক্ষাৎকার গ্রহণে আশরাফুল ইসলাম

প্রথম আলো: বর্তমানে বাংলাদেশে টুহুইলার বা মোটরসাইকেল শিল্পের বাজার কেমন?

জে একরাম হোসাইন: এ বছর বাজার গত বছরের চেয়ে ভালো। ২০১৫ সালে সারা দেশে মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার। এবার সেটা আড়াই লাখ হবে বলে আশা করছি। এটাকে খুব ভালো বলা যাবে না এই অর্থে, কারণ, দুই-তিন বছর আগেও মোটরসাইকেলের বিক্রি আড়াই লাখের বেশি ছিল। সে হিসেবে বাজার আগের প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরতে শুরু করেছে, এটা বলা যায়। এ ছাড়া সরকার মোটরসাইকেল নীতিমালা তৈরির একটি উদ্যোগ এ বছর নিয়েছে, যেটি এই শিল্পের জন্য ভালো।

প্রথম আলো: টিভিএসের অবস্থান এখন কেমন?

জে একরাম হোসাইন: বাংলাদেশের বাজারে টিভিএসের যাত্রা শুরু ২০০৭ সাল থেকে। তখন বাজার এত বড় ছিল না, পরিবেশক, অবকাঠামোসহ অনেক কিছুর ঘাটতি ছিল। প্রথম চার-পাঁচ বছরে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। সে সময় বাজার গড়ে তুলতে যেসব কাজ আমরা করেছি, এখন সেগুলোর ফল পাচ্ছি। টিভিএস এখন বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে, তবে এটি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট থাকতে চাই না। প্রতি মাসে আমাদের এখন গড়ে ৪ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হচ্ছে। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিবছর এক লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি করা।

প্রথম আলো: সে জন্য আপনারা বিশেষ কী পরিকল্পনা করছেন?

জে একরাম হোসাইন: আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশে টিভিএস ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে আমরা এখন কাজ করছি। এখন আমরা মোটরসাইকেল সংযোজন করছি। সংযোজক থেকে উৎপাদক হতে হলে যে কাজগুলো করা দরকার, এখন সেই প্রস্তুতি চলছে।

প্রথম আলো: দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদন করতে গিয়ে দু-একটি প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়েছে। আপনারা বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

জে একরাম হোসাইন: টিভিএস মোটরসাইকেল বাজারে একটি প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড। টিভিএসের যে ব্র্যান্ড-মূল্য আছে, সেটি কোনোভাবেই যাতে ক্ষুণ্ন না হয়, সেটি নিশ্চিত করেই বাংলাদেশে মোটরসাইকেল উৎপাদন করা হবে। আর গ্রাহককে যদি আমরা ভালো মানের পণ্য দিতে পারি, তাহলে সেটি না চলার কারণ নেই।

প্রথম আলো: সংযোজনকারী থেকে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করতে সরকারের কাছে আপনারা কী ধরনের সহযোগিতা চান?

জে একরাম হোসাইন: স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেল উৎপাদন করতে গেলে সহযোগী শিল্পের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন বাদেও চাকা, ব্যাটারি, সিটসহ অন্যান্য অনেক উপকরণ তৈরি করতে হয়। সরকার যদি এসব শিল্পকে কর ছাড়সহ জমি, বিদ্যুৎ প্রাপ্তিসহ বিশেষ কিছু সুবিধা দেয়, তাহলে একসঙ্গে এই শিল্পটাকে তাড়াতাড়ি আমরা গড়ে তুলতে পারব। আমরা চাই সবাই একসঙ্গে উঠুক, তাহলে দেশে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

প্রথম আলো: আপনাদের উৎপাদিত মোটরসাইকেলের কত অংশ দেশে তৈরি হবে?

জে একরাম হোসাইন: সরকার যে নীতিমালা তৈরি করছে, সেখানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কতটুকু অংশ দেশে উৎপাদন করা যাবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। তবে কতটুকু অংশ আমরা দেশে উৎপাদন করব, সেটি আসলে বাজারের চাহিদার ওপর নির্ভর করবে। এ ক্ষেত্রে বাজার যত বাড়বে, তত বেশি অংশ আমরা উৎপাদন করব।

প্রথম আলো: টিভিএস ব্র্যান্ড ছাড়া দেশীয় ব্র্যান্ড নামে কী উৎপাদন করা সম্ভব নয়?

জে একরাম হোসাইন: মোটরসাইকেলের একটি নতুন মডেল তৈরি করতে গবেষণায় যে খরচ হয়, সেটি অনেক ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ একটি ব্যাপার। আবার একটি মডেল তৈরির পর সেটি যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে বিক্রি না হয়, তাহলে বিনিয়োগ তুলে আনা সম্ভব নয়। এ জন্য বড় ব্র্যান্ডগুলো টিকে থাকে। ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলো জাপানের সঙ্গে যৌথভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোটরসাইকেল-শিল্পে আজকের অবস্থানে এসেছে। বাংলাদেশের সে অবস্থানে আসতে সময় লাগবে।

প্রথম আলো: মোটরসাইকেল-শিল্পে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কেমন দেখেন?

জে একরাম হোসাইন: ভারতে প্রতি ১০০ জনে গড়ে ৩ জন মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। আর বাংলাদেশে প্রতি ১ হাজারে গড়ে ১২ জন মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। দাম এ ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। দেশে তৈরি করে মোটরসাইকেলের দাম কমিয়ে আনতে পারলে বাংলাদেশে বাজার অনেক বড় হওয়ার সুযোগ আছে।