পছন্দ আপনার, ঋণ দেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান

.
.

প্রতি মাসে খরচ শেষে বাড়তি কিছু টাকা জমা হলো। তাহলে তো একটি গাড়ি কেনার স্বপ্ন দেখতেই পারেন আপনি। আর সে স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিতে প্রস্তুত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সুদের হারও যেহেতু কমছে, এ জন্য মধ্যবিত্তদের ঘরের অতিথি হতেই পারে একটি সিডান বা এলিয়েন কার। ব্যাংকগুলো ঋণ হিসেবে দিচ্ছে গাড়ির দামের ৫০ শতাংশ। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুরো দাম দিয়েই আপনাকে গাড়ি কিনে দিতে প্রস্তুত। তাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাকেই।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঋণের সুদের হার গড়ে ১১ শতাংশ। তবে গ্রাহকভেদে সুদের হারের তারতম্য হতে পারে। বিদেশি বা ভালো করপোরেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হলে সুদের হারে ১ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ও পাওয়া যাচ্ছে।
ঋণ নিয়ে গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে মালিকানা ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকের যৌথ নামে হয়। ঋণ পরিশোধ হলে পুরো মালিকানা গ্রাহকের নামে স্থানান্তর হয়। এ কারণে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গাড়ি ঋণে আগ্রহী। ঋণ পরিশোধ না হলে গাড়ি ধরে এনে বিক্রি করে অর্থ আদায় করে প্রতিষ্ঠানগুলো।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংকই গাড়ি কিনতে ঋণ দিতে বেশি আগ্রহী। ব্যাংকটির এ খাতে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬০ কোটি টাকা। প্রতি মাসে গড়ে ১৮ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। ব্যাংকটি মোটরসাইকেল কিনতে ঋণ দেওয়া শুরু করলেও পরে তা বন্ধ করে দেয়।

ব্যাংকটির অটো ঋণ বিভাগের প্রধান মাহবুবুল ফারুক খান বলেন, মূলত চাকরিজীবীরা বেশি ঋণ নিচ্ছেন। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও আসছেন ঋণের জন্য। সিডান গাড়ির জন্যই ঋণের চাহিদা বেশি।

বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংক গাড়ি কিনতে এখন পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এ ব্যাংকেরও ঋণের সুদের হার ১১ শতাংশ। ব্যাংকটির কনজ্যুমার ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান জুবায়ের এরশাদ বলেন, ‘মানুষের আয় বাড়ছে, দেশেরও সমৃদ্ধি বাড়ছে। এ কারণে সাধ্য থাকলেই যে কেউ গাড়ি কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমরাও গ্রাহকদের মনের মতো গাড়ি কিনতে সহায়তা করার চেষ্টা করছি।’

এ ছাড়া ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকও গাড়ি কিনতে ঋণসুবিধা দিচ্ছে।

দেশের শীর্ষ একটি করপোরেট গ্রুপে চাকরি করছেন আরিফ আবসার, তাঁর স্ত্রীও একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। সম্প্রতি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ৩০ লাখ টাকায় গাড়ি কিনেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘১৫ লাখ টাকা জমানো ছিল। বাকিটা ব্যাংকঋণ। বহু দিন পর স্বপ্নের গাড়িটি ঘরে তুলেছি। সড়কে যানজট থাকলেও গাড়িতে ভালোই লাগছে।’

এদিকে ব্যাংকগুলোর ঋণের সীমা বেঁধে দেওয়ায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকভেদে শতভাগ ঋণসুবিধাও দিচ্ছে। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো লিজ সুবিধাও প্রদান করছে। এ ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধের পর মালিকানা গ্রাহকের নামে স্থানান্তর হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান লংকাবাংলা ফাইন্যান্স গাড়ি কিনতে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ঋণের সুদের হার সর্বোচ্চ সাড়ে ১১ শতাংশ। ঋণ ও লিজ দুই ধরনের ঋণ সেবাই দিয়ে থাকে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। প্রতিষ্ঠানটির রিটেইল ফাইন্যান্স বিভাগের প্রধান খুরশেদ আলম বলেন, ‘মধ্যবিত্তদের গাড়ির চাহিদা বাড়ছে। তবে ধনী ও করপোরেট গ্রাহকদের ভালো গাড়ির দিকে নজর বেড়েছে। আমরা ব্যক্তিভেদে শতভাগ ঋণসুবিধা প্রদান করছি।’

.
.

আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি গাড়ি কিনতে আড়াই শ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই গাড়ি কিনতে ঋণ প্রদান করে আসছে। ঋণের সীমা না থাকায় ও লিজ সুবিধা দিতে পারায় ব্যাংকের চেয়ে এগিয়েই রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আইডিএলসির কনজ্যুমার বিভাগের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ জাভেদ নূর বলেন, গাড়ি ঋণে ঝুঁকি কম, ঋণ পরিশোধ না হলে সহজেই জব্দ করে টাকা আদায় করা যায়। এ কারণে গাড়ি কিনতে সবাই ঋণ দিতে আগ্রহী হচ্ছে। পাশাপাশি আর্থিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গাড়ি কেনার চাহিদাও বাড়ছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (আইপিডিসি) পুরোনো গাড়ি কিনতেও ঋণ প্রদান করছে। এক দিনে অনুমোদনের পাশাপাশি ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণসুবিধা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ঋণের সুদের হার ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ। ২১ থেকে ৬০ বছর বয়সী চাকরিজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, নারী উদ্যোক্তা ও তরুণ নির্বাহী পেশার মানুষ উপভোগ করতে পারবেন এ ঋণসুবিধা। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের গ্রাহকেরা এই ঋণসুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ৫-১০ লাখ টাকায় পুরোনো গাড়ি, ২৫-৩০ লাখ টাকায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ি এবং ১ কোটি টাকায় বিলাসবহুল গাড়িসহ সব ধরনের ঋণসুবিধা দিচ্ছে আইপিডিসি। নতুন গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে আইপিডিসি দিচ্ছে ছয় বছর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সুযোগ এবং রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ক্ষেত্রে এ সুযোগ পাঁচ বছর। আইপিডিসির ঢাকার গ্রাহকেরা এক্সিকিউটিভ মোটরস লিমিটেড (বিএমডব্লিউ), প্যাসিফিক মোটরস লিমিটেড (নিশান), হুন্দাই মোটরস বাংলাদেশ লিমিটেড (হুন্দাই), নাভানা লিমিটেড (টয়োটা), র‍্যাংগস্ লিমিটেড (মিতসুবিশি), অটো মিউজিয়াম লিমিটেড (রিকন্ডিশন্ড) এবং সিলেট ও চট্টগ্রামের গ্রাহকেরা বিগ অটোমোবাইল (রিকন্ডিশন্ড) থেকে বিশেষ ছাড়ে গাড়ি কিনতে পারেন।

আইপিডিসির অটো ঋণ বিভাগের প্রধান এইচ এম পারভেজ খান বলেন, ‘এক দিনে গাড়ি ঋণ অনুমোদন করছি আমরা। ঋণের সুদহার ও পরিশোধের মেয়াদেও অন্যদের চেয়ে রয়েছে বেশি সুবিধা। সাড়াও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।’