সুদিন ফেরার অপেক্ষা

ফ্ল্যাট হবে মনের মতো—এমন চাওয়া সব দম্পতির। বাহারি আসবাব আর কল্পনার সব রং মিশিয়ে সাজাতে চান নিজের ঠিকানা। ছবিটি প্রতীকী। মডেল: নাসরিন ও রাজীব। কৃতজ্ঞতা: পিটুপি l ছবি: সৌরভ দাশ
ফ্ল্যাট হবে মনের মতো—এমন চাওয়া সব দম্পতির। বাহারি আসবাব আর কল্পনার সব রং মিশিয়ে সাজাতে চান নিজের ঠিকানা। ছবিটি প্রতীকী। মডেল: নাসরিন ও রাজীব। কৃতজ্ঞতা: পিটুপি l ছবি: সৌরভ দাশ

আবাসন খাতে উত্থান-পতন ছিল গত কয়েক বছর। এ নিয়ে বিপাকে ছিল উদ্যোক্তা-গ্রাহক উভয় পক্ষ। ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে বাজার পরিস্থিতি। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরাও সুদিন ফেরার অপেক্ষায় আছেন। এ জন্য তাঁরা ফ্ল্যাটের নিবন্ধন খরচ কমানো ও বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চান।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত দুই বছরের ব্যবধানে আবাসন খাতে ফ্ল্যাটের মূল্য সংশোধন করা হয়েছে। স্থানভেদে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ কমেছে ফ্ল্যাটের দাম। জমির মালিকদের সাইনিং মানি বা নগদ অর্থের পরিমাণ কমেছে। অংশীদারির অনুপাতও আগের চেয়ে কম। ফলে নির্মাণ ব্যয়ও কমে গেছে। আবার গৃহঋণের সুদের হারও এখন সবচেয়ে কম। এসবের প্রভাবে এক বছরের ব্যবধানে অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা কমেছে। গ্রাহকদের সাড়া মিলছে আগের চেয়ে বেশি। তবে বাজারে মন্দার কারণে নতুন প্রকল্পের সংখ্যাও সেই হারে যোগ হয়নি। ফলে চাহিদার তুলনায় ফ্ল্যাটের সংখ্যাও কমছে। এখন নিবন্ধন ফি ও বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলে এই খাতে সুদিন ফিরবে।

ফিনলে প্রপার্টিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোফাখখারুল ইসলাম খসরু প্রথম আলোকে বলেন, আবাসন খাতের জন্য অনেক কিছুই এখন ইতিবাচক। তবে ফ্ল্যাট নিবন্ধন ফি সবচেয়ে বড় বাধা। একই ফ্ল্যাট যতবার বেচাকেনা হবে, ততবার নিবন্ধন ফি দিতে হবে। ফলে যাঁরা ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করার কথা, তাঁরা আসছেন না। এরপর অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করা গেলেও দুর্নীতি দমন কমিশন ইচ্ছে করলে প্রশ্ন করতে পারবে। ফলে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে না। নিবন্ধন খরচ কমিয়ে এবং বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে সরকারের নীতিসহায়তা নিশ্চিত করা গেলে এ খাত চাঙা হবে। কারণ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ বাকি সবকিছুই আবাসন খাতের অনুকূলে রয়েছে।

আবাসন খাতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছর পর্যন্ত ফ্ল্যাটের দাম কমতে থাকায় গ্রাহকেরা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেছেন। আরও কমবে কি না, এ আশায় ছিলেন তাঁরা। তবে দাম কমে এখন স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে। বর্তমানের চেয়ে ফ্ল্যাটের দাম আর কমার সুযোগ নেই। ফলে ফ্ল্যাটের দাম এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বাজারে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সংখ্যাও কমেছে। যেসব আবাসনপ্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের আস্থা ধরে রেখেছে, তারা এখন বাজারে আছে। এ খাতে বিনিয়োগের এখন ভালো সময় বলে মনে করছে তারা।

ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামে আবাসন খাতে উচ্চবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির বাইরে দীর্ঘ সময় পর মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাড়া মিলছে বেশি। মূলত স্বল্প সুদে ব্যাংকের অর্থায়নের কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণি এগিয়ে এসেছে। এই তালিকায় আছেন ব্যাংকাররাও। ব্যাংকারদের মতো মধ্যবিত্ত শ্রেণির গ্রাহকেরা এগিয়ে এলে সুদিন ফিরবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারাও।

জুমাইরা হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, এখন মূলত ৬০ থেকে ৮০ লাখ টাকার মধ্যে ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে বেশি। এসব ফ্ল্যাটের গ্রাহকেরা হলেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির। ব্যাংকাররাও এখন নিজেদের ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে গৃহঋণ পাচ্ছেন। ব্যাংকারদের মতো মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাড়া মিলছে বেশি। এটি ইতিবাচক। কারণ, ফ্ল্যাটের বড় অংশের বাজার মধ্যবিত্ত শ্রেণির গ্রাহকদের ঘিরে। তাঁরা এগিয়ে আসতে শুরু করায় বাজারের জন্য ভালো।

আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, ২০১২ সালের শেষে এ খাতে মন্দা শুরু হয়। সে সময় অভিজ্ঞ-অনভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের হাতে ছিল এ বাজার। বিশেষ করে মন্দা শুরু হওয়ার পর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গ্রাহকদের প্লট বা ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দিয়ে সটকে পড়েন। মন্দার কারণে বেচাকেনা কমে যাওয়ায় বিনিয়োগ আটকে যায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদেরও। তখন থেকে আবাসন খাতে নতুন প্রকল্পের সংখ্যা কমে আসে। চলমান প্রকল্পগুলোর গ্রাহকদের সাড়া কম থাকায় নির্মাণকাজ শেষ করার সময় পিছিয়ে দেন উদ্যোক্তারা। এসবের ফলে গ্রাহকদের আস্থায় ভাটা পড়ে। সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও ছিল এ অবস্থা।

এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যবসায়ীরা কয়েক বছরে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে ঝুঁকে পড়েন। তবে মন্দার ধাক্কায় যেসব প্রতিষ্ঠান বাজারে টিকে ছিল, তারাই এখন গ্রাহকদের আস্থা ধরে রেখেছে।

 রিহ্যাব জানায়, ২০০৬ সালে ১৭ জন সদস্য নিয়ে চট্টগ্রামে রিহ্যাবের যাত্রা শুরু হয়। এখন সদস্যসংখ্যা ৮৮। এ পর্যন্ত ৯৮০টি বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে সংগঠনের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব ভবনে ২১ হাজার ৭০০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। আবাসিক ভবনের পাশাপাশি রিহ্যাব সদস্যদের শতাধিক বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে, যেখানে ৫০ হাজার অফিস, দোকান ও শোরুম রয়েছে।