যাঁ দে র হা রি য়ে ছি ২ ০ ১ ৩

Untitled-36
Untitled-36

নির্মল সেন
‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’—শিরোনামে প্রকাশিত যাঁর কলাম স্লোগানে পরিণত হয়, সেই নির্মল সেন ৮ জানুয়ারি রাজধানীর একটি হাসপাতালে ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৩০ সালের ৩ আগস্ট গোপালগঞ্জের দীঘিরপাড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনের সময় ছাত্ররাজনীতিতে হাতেখড়ি। তারপর ভাষা আন্দোলন। পরে যোগ দেন জাতীয় রাজনীতিতে। ১৯৫৮ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন। দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক বাংলায় কাজ করেছেন। ১৯৬৮ সালে শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন গঠন করেন। মৃত্যুর আগে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সভাপতি ছিলেন।

আবদুশ শাকুর
কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও সংগীতজ্ঞ আবদুশ শাকুর ১৫ জানুয়ারি ৭২ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা ও পরে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন।
তিনি অনেক গল্প, উপন্যাস, রসরচনা, নাটক ও প্রবন্ধ লেখেন। ১৯৭৯ বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ২০০৩ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে অমিয় ভূষণ পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর লেখা প্রবন্ধগ্রন্থ গোলাপ সংগ্রহ ২০০৪ সালে মননশীল শাখায় প্রথম আলো বর্ষসেরা বইয়ের পুরস্কার লাভ করে। সংগীতশিল্পী হিসেবেও সুধী মহলে সমাদৃত ছিলেন।

বেবী জামান

চলচ্চিত্র অভিনেতা বেবী জামান ২৫ জানুয়ারি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৩৩ সালের ২৮ জানুয়ারি ভারতের বর্ধমানে তাঁর জন্ম। ১৯৬৫ সালে কাজী খালেক পরিচালিত প্রথম ছবি মেঘ ভাঙা রোদ-এ প্রথম অভিনয় করেন। সুভাষ দত্তের পরিচালনায় তাঁর অভিনীত সুতরাং ছবিটিই বেবী জামান অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি।

অধ্যাপক মুশার্রফ হোসেন

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও অধ্যাপক মুশার্রফ হোসেন ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা সংস্থার সদস্য ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন তিনি।

২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার, বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলোশিপ, অর্থনীতি সমিতির বিশেষ সম্মাননাসহ আরও অনেক সম্মাননা পান।

আব্দুল জলিল

রাজনীতিক আব্দুল জলিল ৬ মার্চ সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে ৭৪ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর জন্ম ১৯৩৯ সালে নওগাঁয়। আজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন; ২০০২ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ছিলেন এ দলের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭৩ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত মোট চারবার সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

জামাল নজরুল ইসলাম

গণিতজ্ঞ, পদার্থবিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম ১৬ মার্চ চট্টগ্রামের ক্লিনিকে ৭৪ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর জন্ম ১৯৩৯ সালে ঝিনাইদহ শহরে। বিভিন্ন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গণিত ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর পরিচালকের দায়িত্ব নেন। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বই আলটিমেট ফেইট অব দি ইউনিভার্স।

মো. জিল্লুর রহমান

আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ২০ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর জন্ম ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায়।

ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে প্রবেশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ইতিহাসে অনার্সসহ এমএ ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি ১৯৫৪ সালে আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৫৬ সালে কিশোরগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রপতি হন।

আমানুল হক

আলোকচিত্রশিল্পী আমানুল হক ৩ এপ্রিল ৮৮ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর জন্ম ১৯২৫ সালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে। ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছবি তুলেছেন। ভাষাশহীদ রফিকের মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার ছবি তোলার জন্য পাকিস্তানি শাসকদের কোপানলে পড়ে কলকাতায় গিয়েছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালীসহ অনেক ছবিতে স্থির চিত্রগ্রাহকের কাজ করেন।

Untitled-37
Untitled-37

বিনোদবিহারী চৌধুরী
১০ এপ্রিল কলকাতার এক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন ১০৩ বছর বয়সে অগ্নিযুগের বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী। তাঁর জন্ম ১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে। ১৯৩৪ ও ১৯৩৬ সালে কারাগারে বন্দী অবস্থায় তিনি প্রথম শ্রেণীতে আইএ ও বিএ পাস করেন। ১৯৩০ সালের অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে তিনি ছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেনের অন্যতম তরুণ সহযোগী।

আমীন আহম্মদ চৌধুরী
মুক্তিযোদ্ধা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আমীন আহম্মদ চৌধুরী বীর বিক্রম ১৯ এপ্রিল ৬৮ বছর বয়সে ঢাকায় মারা যান। তিনি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিছু সময় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন।

এম জহির
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম জহির ১১ জুলাই ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৪ বছর বয়সে মারা যান। সংবিধান ও করপোরেট আইনজীবী হিসেবে তিনি দেশে ও বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেন।

বেলাল মোহাম্মদ

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কবি বেলাল মোহাম্মদ ৩০ জুলাই মারা যান। তাঁর জন্ম সন্দ্বীপে ১৯৩৬ সালে। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম চট্টগ্রাম কমিটির সদস্য ছিলেন। একাত্তরের ২৬ মার্চ তিনিসহ কয়েকজন মিলে প্রথম কালুরঘাটের বেতার স্টেশনে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার’ নামে বেতারকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।

আবদুর রহমান বয়াতি

১৯ আগস্ট ৭৭ বছর বয়সে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান লোকসংগীতশিল্পী আবদুর রহমান বয়াতি। তাঁর গানের সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। তাঁর সংগীতজীবন ছিল ৬০ বছরেরও বেশি দীর্ঘ। দেশ-বিদেশে লোকসংগীতের চর্চা ও প্রসারে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল।

আনোয়ার হোসেন

চলচ্চিত্র অভিনেতা আনোয়ার হোসেন ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হাসপাতালে ৮২ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর জন্ম ১৯৩১ সালে জামালপুরে। তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন ১৯৬৭ সালে নির্মিত নবাব সিরাজউদ্দৌলা চলচ্চিত্রে নবাবের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য। তিনি অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি প্রথম দিকে মঞ্চনাটকেও অভিনয় করেন।

সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন

দেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন ২০ ডিসেম্বর ৮১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সহধর্মিণী। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীতে নামের উচ্চক্রমানুসারে প্রথম সদস্য ছিলেন।

তিনি ১৯৩২ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেন। ষাটের দশকে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে রাজবন্দী সাহায্য কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহসভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়ে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত ও সংগঠিত করায় তাঁর ভূমিকা ছিলঅত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজীবন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।

খালেদ খান

মঞ্চ ও টিভি অভিনেতা খালেদ খান ২০ ডিসেম্বর ৫৭ বছর বয়সে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে মারা যান।

১৯৭৫ সালে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে মঞ্চনাটকে তাঁর যাত্রা শুরু। উল্লেখযোগ্য নাটক দেওয়ান গাজীর কিস্সা, গ্যালিলিও, ঈর্ষা ও রক্তকরবী। তিনি অনেক নাটকের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ১৯৮১ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে টিভি নাটকে অভিষেক হয় তাঁর।

l সংকলন: সুচিত্রা সরকার