ম্যাডামের অনুপ্রেরণায় লেখাপড়া চলতে থাকে

আইইএলটিএস শিক্ষক সমিরতা কর। ছবি: লেখক
আইইএলটিএস শিক্ষক সমিরতা কর। ছবি: লেখক

ছোটবেলা থেকে দুরন্ত স্বভাবের ছিলাম। লেখাপড়ার চেয়ে খেলাধুলা, মাছ ধরা, গাছের ফল ও ঘোরাঘুরিতে সময় বেশি ব্যয় হতো। তাই স্কুল কামাই হতো আর লেখাপড়ায় মনোযোগ কম ছিল। তাই শিক্ষকদের সুনজর আমার প্রতি ছিল না। কিন্তু পাস করার মতো পরিকল্পনা নিয়ে ঠিকই কোনো রকমে বিএসসি পাস করে জীবিকার তাগিদে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে আসা। এখানে এসে সত্যিকারের পড়ালেখা না করার অভাবটা উপলব্ধি করতে পারলাম।

আবুধাবিতে একটি গিফট আইটেম বিক্রির দোকানে ক্যাশিয়ার পদে কাজ শুরু করি। উদ্দেশ্য, আমি এখান থেকে টাকা উপার্জন করে নিজ অর্থে ইউরোপ যাব। আমার খালাতো ভাই ফয়সাল সুইডেনে থাকে। সে বলল, ইউরোপে আসার সহজ উপায় হলো আইইএলটিএসে স্কোর ভালো এলে অল্প খরচের মধ্যে সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। যেমন কথা তেমন কাজ। আমি ডিউক ইনস্টিটিউটে ৪০ ঘণ্টার একটি কোর্সে ভর্তি হয়ে গেলাম। কাজের ফাঁকে দুপুরের বিরতিতে আমার ক্লাস নির্ধারণ করা হলো। শিক্ষক পেলাম একজন ভারতীয় সমিরতা করকে। ওনাকে আমার উদ্দেশ্যের কথা বলি। কাজের ফাঁকে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ওনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। উনি আমাকে অনেক উৎসাহ দিলেন। আমি ইংরেজিতে বেশ দুর্বল ছিলাম, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

সরোয়ার রানা। ছবি: লেখক
সরোয়ার রানা। ছবি: লেখক

উনি আমাকে প্রতিটি শব্দের অর্থসহ বোঝানো সঠিক উচ্চারণে ও বাচনভঙ্গি কী হওয়া উচিত, তা আমাকে সুন্দর ও সহজ পদ্ধতিতে শেখাতেন। ম্যাডামের অনুপ্রেরণায় আমার লেখাপড়া চলতে থাকে এবং দোকানের মালিক আমার বাবার খালাতো ভাই আমাকে কাজের ফাঁকে পড়তে বলেন। কিন্তু আমার সংগ্রহের বই দেখে আর পড়ার অতি আগ্রহ দেখে ছুটি নিয়ে কোর্স করতে বলেন। আমি ছুটি নিয়ে কোর্সে মনোযোগ দিলাম। ম্যাডাম আমাকে একটি নির্দিষ্ট বিষয় দিয়ে তা ইংরেজিতে লিখে আনতে বলতেন। অনেক ভুল থাকত। উনি লেখা শুদ্ধ করে দিতেন। লেখার অনেক প্রশংসা করতেন এবং বলতেন, কোনো কিছু না বুঝলে ফোন করে জেনে নিতে। ইংরেজিতে কথা বলতে বলতেন, ভুল হলে তা শুধরে দিতেন। শুনতে হাস্যকর মনে হলেও আমি তখন স্বপ্ন দেখতাম, ইংরেজিতে কথা বলতাম নির্দিষ্ট সময়ের পরেও কিছুদিন বাড়িয়ে কোর্স শেষ করে IELTS পরীক্ষা দিলাম। রাইটিং 5.5, রিডিং 6, লিসেনিং 5.5, স্পিকিং 6 সব মিলিয়ে 5.5 পেলাম । আমি মনে করি এ সবকিছুর পেছনে ম্যাডামের উৎসাহ আর অনুপ্রেরণায় অনেক বেশি কাজ করেছে। আমার আত্মবিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছেন ম্যাডাম। সারা জীবনে আমি ওনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখব ওনার অবদান।

লেখক: আবুধাবিতে কর্মরত।