ইমরান স্যার, আপনার ছাত্র প্রথম হয়েছিল

বিকেএসপির শিক্ষক ইমরান রউফ। ছবি: লেখক
বিকেএসপির শিক্ষক ইমরান রউফ। ছবি: লেখক

সার্টিফিকেট কোর্স ইন ক্রিকেটের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে প্রিয় স্যার (বিদায়ী প্রিন্সিপাল লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান রউফ) আপনাকে প্রথম বার দেখি। এরপর বিকেএসপির এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ছিলেন না আপনি! অবাক হয়ে ভাবতাম, মানুষটার দায়িত্ব তো অফিশিয়াল আওয়ারের পর শেষ, তারপরও কেন সব জায়গায় এই মানুষটি। সেই প্রথম আপনাকে জানার আগ্রহ। পরিচিত সবার কাছে জানতে চাইলাম আপনার সম্পর্কে। একের পর এক অবাক করা তথ্য হাজির হলো আমার সামনে।

বিস্ময়ভরে আপনাকে অবলোকন করে এবং আপনার সম্পর্কে পাওয়া বিস্ময়কর সব তথ্যের ফলে মনের কোনে জন্ম নেওয়া আগ্রহ থেকেই আপনাকে খোঁজার চেষ্টা করলাম ফেসবুকের পাতায়। ভাগ্যগুণে আপনার খোঁজটা পেয়ে গেলাম। আপনার বন্ধু তালিকায় ঠাঁই পেতে অনুরোধ পাঠালাম। আপনি তা সাদরে গ্রহণ করলেন। অজানা আনন্দে ভরে গেল মন। একজন অসাধারণ মানুষের আঙিনায় নিজের ঠাঁই পাওয়ার মুহূর্তটা ভীষণ মনে পরে আজও। এরপর একটা বিষয় নিয়ে জানার জন্য আপনার কাছে কিছু বার্তা প্রেরণ করলাম। আপনার সম্পর্কে যা জেনেছিলাম, সত্যি বলতে সেখান থেকেই সঞ্চয় করেছিলাম বার্তা প্রেরণের সৎ সাহস টুকু। মনে মনে বিশ্বাস ছিল, আপনিও সাড়া দেবেন। আপনি সাড়া দিলেন। কিন্তু যেভাবে দিলেন তাতে অন্তত এটুকু বুঝতে পারলাম, আপনার সম্পর্কে যা জেনেছি, তা অনেক কম। জানার বাকি আরও। আবার শুরু হলে আপনাকে জানার চেষ্টা। যতই জেনেছি ততই মনে হয়েছে আমি মাত্র ১ ভাগ জেনেছি বা তারও কম। সকলের সঙ্গে এবং সকলের প্রতি আপনার আচার ব্যবহার কয়েক’টা তথ্যে বর্ণনা করা বা কিছু কথামালায় সাজানো আমার মতো একজন ক্ষুদ্র মানুষের নিতান্তই বৃথা চেষ্টা। তবু যতটুকু মেধা আছে ততটুকু দিয়ে কেবল এটুকুই অনুধাবন করতে পারি বা পেরেছি, অসীমের সীমারেখা টানা যেমন নিতান্তই বোকামি ঠিক তেমনি আপনার গুনের একটা তালিকা করাটাও বোকামি। তবুও বলার জন্য কেবল এটুকুই বলতে পারি, একজন আপনি ছিলেন বলে অনেকজন মানুষ হাসতো, একজন আপনি ছিলেন বলে অনেক মানুষ স্বপ্ন দেখার সাহস পেত, একজন আপনি ছিলেন বলে অনেকে শত বিপদেও ভয় পেত না, একজন আপনি ছিলেন বলে অনেকে অনুপ্রেরণা পেত সবসময় সবখানে, একজন আপনি ছিলেন বলেই অনেকেই ভেঙে পড়েনি শত প্রতিকূলতায়।

ক্রিকেট কোচ আবদুল্লাহ আল মারুফ। ছবি: লেখক
ক্রিকেট কোচ আবদুল্লাহ আল মারুফ। ছবি: লেখক

আপনার শূন্য স্থান হয়তো কালই পূরণ হয়ে যাবে, কিন্তু অনেকের এই অনেক কিছু কখনো পূরণ হবে কি না, সে প্রশ্ন, সে অনিশ্চয়তা থেকেই যায়। কারণ আপনার মতো কিছু মানুষের অভাব সমাজে সবসময় সবার কাছে থেকেই যায়। কারণ একজন সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষকের মাঝে একজন বন্ধু, একজন বাবা, একজন ভাইকে খুঁজে পেতে প্রথমত প্রয়োজন নিগূঢ়, নিখাদ ভাগ্যের সহায়তা এবং দ্বিতীয়ত প্রয়োজন অনেক সময়ের। জানি না সে সময়ের অপেক্ষা কতদিনের। মাত্র বাইশ টা দিন আপনার কাছে থেকে, আপনার কথা শুনে বারবার মনে হয়েছে, আপনার কাছে থাকলে একজন মানুষ কতটা বড় হতে পারবে, আকাশ ছুঁতে পারবে কি না এসব জানি না, কেবল এটুকু বুঝতে পেরেছি আপনার কাছে থাকলে একজন সাধারণ মানুষও অসাধারণ হয়ে উঠবে, সর্বোপরি মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠতে পারবে। আপনার কাছে দীর্ঘদিন থাকলে আমি কি হতাম বা হতে পারতাম, সে কথার জবাব আজ না হয় তোলা থাক মহাকালের হাতে, তবে এটুকু জানি, সার্টিফিকেট কোর্স ইন ক্রিকেটে খুব বেশি কিছু পাবার আশা নিয়ে যায়নি! বলতে পারেন নিজের ক্রিকেট জ্ঞান টাকে যাচাই করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওরিয়েন্টেশন এ আপনার কথাগুলো এতটাই ভালো লেগেছিল, যে মনে গেঁথে গিয়েছিল।

নিজেকে আপনার খুব কাছের একজন ছাত্র হিসাবে মনে করেছিলাম। পরে যখন আপনাকে জানলাম, তখন নিজের সামনে একটা চ্যালেঞ্জ দাঁড় করাই, কারণ আপনার ছাত্র সেরা হতে না পারা আপনার জন্য অপমানের। একজন ছাত্রের জন্য যা ভীষণ লজ্জার। পারিনি আপনাকে আপনার অজান্তেই অপমান করতে। মনোযোগী হয়েছি, চেষ্টা করেছি সেরা হতে। অবশেষে আপনার অজান্তেই আপনার ছাত্র হয়ে যাওয়া ছেলেটি প্রথম হয়েছিল। অনেক কথা বলে ফেললাম নিজের অজান্তেই। আপনার সঙ্গে আর কখনো দেখা হবে কি না আমি জানি না, তবে কিছু কিছু সময় মাত্র কয়েক দিনের পরিচয় অনেক স্মরণীয় হয়ে যায় মানুষের জীবনে। আপনি তেমনি থাকবেন আমার কাছে। যেখানেই থাকুন অনেক অনেক ভালো থাকুন। আপনার ও আপনার পরিবারের সকলের সুখ-শান্তি, সাফল্য-সমৃদ্ধি, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। বুকের গভীরে থাকা এক টুকরো ঠিক মাঝখান থেকে। যাকে না কি হৃদয় বলে। আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত বর্ষিত হোক আপনার ওপর। আল্লাহ হাফেজ।

লেখক: রাজশাহীর ক্রিকেট কোচ