গত বছর এশিয়ান ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ)। আর এ বছর একই প্রতিযোগিতায় স্কুল পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি সানিডেল স্কুলের আমরা দুজন (দশম শ্রেণির ছাত্র আল ওয়াসী মো. ফাহিমউদ্দৌলা এবং একাদশ শ্রেণির দেবজ্যোতি বিশ্বাস)।
ধরুন, আন্তর্জাতিক কোনো বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব চলছে। নানা দেশের বাঘা বাঘা বিতার্কিকেরা সেখানে উপস্থিত। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, কখন ঘোষণা করা হবে ‘চ্যাম্পিয়ন’ দলের নাম। কিছুক্ষণ পর, বিশাল হলরুমের এক কোণ থেকে শোনা গেল একদল ছেলেমেয়ের উল্লসিত স্লোগান, ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ!’ ১০ বছর আগেও এই দৃশ্যটা অকল্পনীয় ছিল। আন্তর্জাতিক বিতর্কের অঙ্গনে বাংলাদেশ নামটা ছিল প্রায় অচেনা। এখন সময় বদলেছে। বিদেশে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গেলে অন্য দেশের ছেলেমেয়েরা আমাদের সমীহের চোখে দেখে। এই সমীহ আমরা গত কয়েক বছরে অর্জন করেছি।
পঞ্চম শ্রেণি থেকেই কোচের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে আমরা বিতর্ক চর্চা শুরু করি। সিনিয়ররা আসেন, ক্লাস নেন। তাঁদের স্নেহে, পরামর্শে আমাদের সামনে এগোনো সহজ হয়। প্রতি সপ্তাহে আমাদের ২–৩টা বিতর্কের ক্লাস হয়। দেশের ভেতরে বিভিন্ন স্কুল–কলেজ–ইউনিভার্সিটির বিতর্ক উৎসবে, এমনকি বিদেশে বিতর্ক করতে গেলেও স্কুল আমাদের সব রকম সহযোগিতা করে।
বেশ কয়েকটি দেশ ঘুরে বিতর্ক করার অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে। সানিডেল স্কুলের বিতর্ক দল বিতর্কে অংশ নিতে ভারত, ক্রোয়েশিয়া, জার্মানিতে গেছে। বড় বড় মঞ্চে বিতর্ক করতে করতে আড়ষ্টতা, ভয় দূর হয়ে গেছে। জেগেছে আত্মবিশ্বাস ও রোমাঞ্চ। আমাদের কোচ সব সময় বলেন, ‘যদি হারতেই হয়, তাহলে নিজের স্কুলের দলের কাছে হারবে। অন্য কারও কাছে নয়।’ এই কথাটা আমরা মনে রাখি।
পড়াশোনা আর বিতর্ক—দুটোই ঠিকঠাক রাখার কাজটা একটু কঠিন। কখনো পড়ালেখায় একটু ছাড় দিতে হয়, কখনো বিতর্কে। তাই বলে বিতর্ক ছেড়ে দেওয়ার কথা কখনো ভাবিনি।
একসময় বিতর্কের জগৎটা শুধু সানিডেল ডিবেটিং ক্লাস পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ধীরে ধীরে দেশের অন্যান্য স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। আমরা আরও বড় একটা পরিবারের অংশ হয়ে উঠেছি। এখন ভিনদেশের বিতার্কিকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হচ্ছে। প্রতিযোগিতাগুলোতে গেলে ওদের সঙ্গে পরিচয় হয়। ফেসবুকে আমরা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকি। ওদের সঙ্গে কথা বললে আমাদের দেখার, জানার পরিসরটা আরও বড় হয়।
আমাদের দেশে এখন আন্তর্জাতিক মানের বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হচ্ছে। কয়েক দিন আগে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত হলো ‘আইইউবি অ্যাসেনশন ২০১৮’। সামনে নিশ্চয়ই আরও বড় বড় অর্জন আমাদের অপেক্ষায় আছে।
n আল ওয়াসী মো. ফাহিমউদ্দৌলা ও দেবজ্যোতি বিশ্বাস ঢাকার সানিডেল স্কুলের শিক্ষার্থী