গরুর মাংসের ২ পদ

>

কোরবানি ঈদের বড় একটি অনুষঙ্গ গরুর মাংস। এ মাংস তো কতভাবেই রান্না করা যায়। তবে কিছু পদ আছে স্বাদে-গন্ধে তোফা। সিলেটে যেমন সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস রান্নার প্রচলন আছে, তেমনি খুলনার চুইঝালে রান্না করা গরুর মাংসের স্বাদ তো অন্য কিছুতে মিলবে না। গরুর মাংসের এই ২ পদের রেসিপি দেখে নিন এবার। প্রতিটি রেসিপির সঙ্গে জানানো হয়েছে খাবারের স্বাদ সম্পর্কে।

সাতকরা আচারি মাংস

উপকরণ: হাড়ছাড়া গরুর মাংস ১ কেজি, সাতকরা আধ খানা, পেঁয়াজ কাটা ২টা বড়, সরিষার তেল আধা কাপ, আদাবাটা ২ চা-চামচ, রসুনবাটা ২ চা-চামচ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ২ টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ৫টি, ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ, গরমমসলাগুঁড়া আধা চা-চামচ, জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ, লেবুর রস ৪ টেবিল চামচ, পাঁচফোড়নগুঁড়া ১ চা-চামচ, আস্ত পাঁচফোড়ন ১ চা-চামচ, শুকনা মরিচ ৫টি, সিরকা আধা কাপ, সরিষাবাটা ২ টেবিল চামচ, রসুনের কোয়া ৭টি, লবণ, চিনি ও বিটলবণ স্বাদমতো।

প্রণালি: গরুর মাংসে লেবুর রস ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে মাখিয়ে ১০ মিনিট মেরিনেট করতে হবে। প্যানে তেল দিয়ে পেঁয়াজ হালকা বাদামি করে ভেজে একে একে রসুন, আদা হালকা ভেজে হলুদ, মরিচ, ধনে, জিরাগুঁড়া, গরমমসলাগুঁড়া, পাঁচফোড়নগুঁড়া দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে গরুর মাংস দিয়ে এক ঘণ্টা রান্না করতে হবে। প্রেশার কুকার হলে পাঁচটা সিটি দিলেই হবে। এদিকে আলাদা পাত্রে সাতকরা লেবুর মতো স্লাইস করে পানি দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে পাঁচ মিনিট। পানির স্বাদ দেখতে হবে তিতা কি না। তিতা হলে কয়েকবার পানি বদলাতে হবে।

এবার আলাদা পাত্রে সরিষার তেলে আস্ত পাঁচফোড়ন, আস্ত রসুন কোয়া, সরিষাবাটা, পেঁয়াজ বেরেস্তা, কাঁচা মরিচ, সাতকরা, সিরকা, লবণ ও চিনি স্বাদমতো দেওয়ার পর রান্না করা মাংস দিয়ে ১০ মিনিট রান্না করে ভাজা শুকনা মরিচ ও বিটলবণ স্বাদমতো দিয়ে তেলের ওপর উঠলে পরিবেশন করুন মজাদার সাতকরা আচারি মাংস।

রেসিপি: কুমকুম হাজেরা

এক ঈদে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের এক বাড়িতে টেবিলে এনে রাখা হলো মাংস। বেশ একটু লাল লাল দেখতে। বাটির ওপরে শুকনা মরিচ আর রসুনের কোয়া! ‘সাতকরা’ শব্দটি উচ্চারিত হলো আশপাশে কোথাও এবং সে মাংস মুখে নিতেই সত্যিই জিবটা যেন সাতকরার হাতকড়া দিয়ে বেঁধে ফেলল কেউ। হ্যাঁ, এটা ছিল সাতকরা দিয়ে রান্না করা আচারি মাংস। জিবে দিলেই বোঝা যায় এ মাংস অনেক মেহনতের ফল। তার চেয়ে বড় কথা, লেবু আর সিরকার মিলনে মাংসটা হয়েছে নরম, ফলে একটু স্বাস্থ্যকরও—সিরকা আর লেবু তো একটু হলেও চর্বি কাটে! অনেকেই সাতকরার ব্যবহার জানেন না বলে মাংসের ঝোল তেতো হয়ে যায়। কিন্তু যিনি এই রেসিপি দেখে রাঁধবেন, তাঁর পক্ষে মাংস তেতো করে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। 

চুইঝালে গরুর মাংস

উপকরণ: গরুর মাংস ২ কেজি, রসুনকুচি ১ কাপ, পেঁয়াজ আধা কাপ, জিরা ২ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচগুঁড়া ২ টেবিল চামচ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, এলাচি ৪টি, দারুচিনি ২টি, তেজপাতা ৩-৪টি, তেল ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, লবঙ্গ ৪-৫টি, ভাজা মসলা (ধনে, জিরা, এলাচি ও দারুচিনি) ১ টেবিল চামচ, চুইঝাল ২৫০ গ্রাম (বা ইচ্ছেমতো) ও হলুদ ২ চা-চামচ।

প্রণালি: প্রথমে গরুর মাংসের চর্বি ফেলে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর সব (চুইঝাল ও ভাজা মসলা বাদে) মসলা দিয়ে চুলায় চড়াতে হবে। এরপর মাংস কষাতে হবে। মাংস যখন তেলের ওপরে আসবে, তখন ৫০০ মিলিলিটার গরম পানি দিয়ে আবার ২০ মিনিট কষাতে হবে। মাংস আধা সেদ্ধ হলে চুইঝাল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। মাংস সেদ্ধ হলে ভাজা মসলা দিয়ে নামিয়ে রুটি, পরোটা ও গরম ভাত দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

রেসিপি: শরিফুন হাসান

ভাববেন না, কাঁচা মরিচ বা শুকনা মরিচের মতো কোনো এক মরিচের আবির্ভাব ঘটল এখানে। চুইঝাল মোটেই মরিচ নয়। একটি গাছের কাণ্ড বা লতা থেকেই নেওয়া হয় এই চুইঝাল। রান্নাতে এনে দেয় একেবারে অন্য রকম স্বাদ। খুলনা-যশোর এলাকার মায়েরা আর দাদি-নানিরা এই মাংস রান্না করতে পারেন অনায়াসে। চুইঝালটা কখন দেওয়া হচ্ছে মাংসে, সেটাই আসল। একটু ওদিক–ওদিক হলেই কিন্তু রান্নার বারোটা বেজে যেতে পারে। মাংস খেতে খেতে আমচুরের মতো লম্বা চুইঝালগুলোও চুষে দেখতে পারেন, খারাপ তো লাগবেই না, অনিচ্ছা সত্ত্বেও আরও এক চামচ ভাত বা পোলাও প্লেটে নেওয়ার জন্য মনটা আনচান করে উঠবে। খান ভাই, খান, মন ভরে খান।