কলসিন্দুরের আলো

২০১৫ সালের ২৭ িডসেম্বরের এই খবরের আগে কয়েক দফা প্রতিবেদনে উঠে আসে কলসিন্দুরের মেয়েদের সাফল্যগাথা
২০১৫ সালের ২৭ িডসেম্বরের এই খবরের আগে কয়েক দফা প্রতিবেদনে উঠে আসে কলসিন্দুরের মেয়েদের সাফল্যগাথা

একটা এলাকা পাল্টে দিতে কয়েকজন বালিকা কী অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে, কলসিন্দুরের ফুটবলার মেয়েরা হলো তার অপরূপ নিদর্শন।

গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। বিদ্যুৎ গেল। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে পাকা ভবন উঠল। মাধ্যমিক বিদ্যালয় আর কলেজটা সরকারি হয়ে গেল। গত ২০ মে স্কুল/কলেজ সরকারি করে আদেশ জারি হয়। এর নাম এখন কলসিন্দুর সরকারি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। তাদের ভবন একটা হয়েছে চারতলা। আরেকটা ছয়তলা ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। সীমানাপ্রাচীর হচ্ছে।

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রাম। মেয়েরা ফুটবল খেলতে শুরু করল। প্রাইমারি স্কুল চ্যাম্পিয়ন হলো বেগম ফজিলাতুন্নেছা কাপে। এরপর মেয়েরা বড় হয়। তারা খেলে অনূর্ধ্ব–১৪ জাতীয় দলে। একটা সময় দেখা গেল, বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের ১৮ জনের ১০ জনই একটা গ্রামের মেয়ে।

প্রথম আলোয় লিখলেন কামরান পারভেজ। ফুটবল রাঙাচ্ছে কলসিন্দুরের মেয়েরা। ২২ আগস্ট ২০১৫ প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা হলো সেই খবর। তারপর ওই মেয়েদের ওপর প্রামাণ্যছবি বানাল প্রথম আলো, পরিচালক রেদোয়ান রনি। মেয়েদের ঢাকায় এনে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সুধী সমাবেশে সংবর্ধনা দেওয়া হলো। মেয়েরা বলল, ‘আমরা তো আপনাদের বানানো ছবি দেখতে পারব না। আমাদের গ্রামে তো বিদ্যুৎ নেই।’ লিখলাম তা। কথাটা কানে গেল জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের। তিনি আদেশ দিলেন, কলসিন্দুর গ্রামে বিদ্যুৎ দাও। গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ গেল। প্রথম আলোর এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দেখলেন সেই প্রামাণ্যচিত্র। ওই গ্রামের স্কুলের ভবন পাকা করার ঘোষণা দিলেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীকে এক অনুষ্ঠানে ধরল চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য খেলোয়াড় মেয়েরা। আমাদের স্কুল সরকারি চাই। প্রধানমন্ত্রী ওই স্কুল/কলেজটাকে সরকারি করার নির্দেশ দিলেন। ক্রীড়ামোদী প্রধানমন্ত্রী মেয়েদের জন্য আরও কিছু আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

আমি বলি, এটা হলো, সরকার, বেসরকারি উদ্যোগ, সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতায় কীভাবে মানুষ নিজের প্রতিভা আর পরিশ্রম দিয়ে নিজেদের এলাকার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে, তার উদাহরণ।

বেগম ফজিলাতুন্নেছা কাপের কারণে মেয়েরা ফুটবল খেলতে শুরু করে। তাদের ঠিকমতো প্রশিক্ষণ দিলেন স্কুলের শিক্ষকেরা। তাদের নিয়ে খবর প্রকাশ করল প্রথম আলো এবং অন্যান্য গণমাধ্যম। ফুটবল ফেডারেশন তাদের ঢাকায় এনে প্রশিক্ষণ দেয়। তারা দেশ-বিদেশে ফুটবল খেলতে যায় এবং বিজয় ছিনিয়ে আনে। সরকার তাদের আবদার পূরণ করে। তাদের পাশে থাকে।

তাদের কারণে আজ আলোকিত একটা জনপদ। আর তাদের কারণে আমাদের মাথা হয়ে ওঠে উঁচু, মুখ হয় উজ্জ্বল।