চাই অভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষা

আর্থসামাজিক বিকাশ এবং অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেয়েশিশুরা অধিক হারে বিদ্যালয়ে আসছে, ঝরে পড়া হ্রাস পাচ্ছে, উপস্থিতির হারও বাড়ছে। অন্যের বাসার গৃহকর্মী, বিধবা, রিকশাচালক, ভূমিহীন কৃষকও তাঁদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন। এককথায় শিক্ষার পরিমাণগত উন্নয়ন লক্ষণীয়। কিন্তু শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য আমাদের অনেক কিছু করতে হবে। ৫, ৮ বা ১০ বছর বিদ্যালয়ে যাতায়াত করেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত জ্ঞান, জীবনদক্ষতা ও মানবিক মূল্যবোধ অর্জন করে না।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলার এবং ৬৮ শতাংশ গণিতের নির্ধারিত যোগ্যতাগুলো অর্জন না করেই প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে। তারা পড়তে পারে না, সাধারণ গাণিতিক হিসাব–নিকাশ করতে পারে না। শিক্ষার গুণগত মান বহুবিধ প্রভাবকের ওপর নির্ভরশীল, যেমন শিক্ষা অর্জনে সহায়তাকারী হিসেবে শিক্ষক, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষার উপকরণ, আসবাব, বিদ্যালয়ের পরিবেশ, প্রতিষ্ঠানপ্রধানের নেতৃত্ব ইত্যাদি। এসবের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষক।

মানসম্মত শিক্ষার জন্য চাই যোগ্য শিক্ষক। বাংলাদেশে যোগ্য শিক্ষকের অভাব বড় প্রকট। বিদ্যালয় পর্যায়ে যোগ্য শিক্ষকপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হলে সরকারি কর্ম কমিশনের মতো শিক্ষা কর্ম কমিশনের মাধ্যমে সর্বস্তরের শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। মানসম্মত শিক্ষার জন্য শিক্ষকের বিষয়জ্ঞানই যথেষ্ট নয়; পেশাগত প্রবণতা, পেশার প্রতি অঙ্গীকার ও নৈতিক মূল্যবোধ অত্যাবশ্যক। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সমম্বয়ে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কর্ম কমিশন এসব দিক যাচাই করে শিক্ষক নির্বাচন করলে যোগ্য শিক্ষক পাওয়া নিশ্চিত হতে পারে।

বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা চালু আছে। কিন্তু অধিকাংশ ​ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষণের মান সন্তোষজনক নয়। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতা শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগ করতে পারেন না বা করেন না। প্রশিক্ষণ হতে হবে হাতে-কলমে, শিক্ষক শ্রেণি​কক্ষে যা করবেন, প্রশিক্ষণে তা করে দেখাতে হবে এবং প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের দিয়ে প্রশিক্ষণে তা হাতে–কলমে করাতে হবে। ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। পূর্ববর্তী প্রশিক্ষণের ধারাবাহিকতায় পরবর্তী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সাজাতে হবে।

শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করার জন্য শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০–এ শিক্ষক নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএর পরিবর্তে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে জাতীয় শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠনের কথা বলা আছে। শিক্ষকেরা যথাযথ প্রস্তুতি দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত করছেন কি না, প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতা সঠিকভাবে প্রয়োগ করছেন কি না, তা নিশ্চিত করা এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাঁদের সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কর্তৃক নিয়মিত ‘মেনটরিং’ করা প্রয়োজন। শিক্ষা কর্মকর্তা, কর্মকর্তা হিসেবে নয়, সহকর্মী বন্ধু হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালনে শিক্ষকদের পরামর্শ দেবেন, প্রয়োজনে নিজে করে দেখাবেন, কাজে উৎসাহ দেবেন।

মৌলিক শিক্ষার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ‘মৌলিক শিক্ষা হবে একমুখী। এ শিক্ষায় কোনো বিভাজন থাকবে না।’ 

সাধারণত মাধ্যমিক শিক্ষার শেষ পর্যায় থেকে বহুমুখী শিক্ষা আরম্ভ হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের দেশে শিক্ষাজীবন শুরু থেকে বহুমুখী শিক্ষার সূত্রপাত। কেউ যায় সাধারণ শিক্ষায়, কেউ মাদ্রাসাশিক্ষায়, আবার কেউ ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষায়। এই বহু ধারার শিক্ষার ক্ষতিকর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। শুধু জ্ঞানের ​ক্ষেত্রেই ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে তা নয়, জীবনদক্ষতা, বিশেষ করে মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি তথা দেশাত্মবোধের ক্ষেত্রেও চরম তারতম্য সৃষ্টি হচ্ছে, যা দেশ ও জাতির জন্য উদ্বেগের কারণ। মৌলিক শিক্ষার বহুমুখিনতা থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০–এ মৌলিক শিক্ষার জন্য অভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একই শিক্ষাক্রম অনুসারে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির একই পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাতে এ নীতি মেনে চলতে বাধ্য হয়, তার জন্য শিক্ষা আইনে এ–সংক্রান্ত ধারা থাকা প্রয়োজন। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়নের জন্য আলোচ্য বিষয়টিসহ কয়েকটি বিষয়ে শিক্ষা আইন প্রণয়নের জন্য ২০১২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা আইন প্রণয়নের কাজ শুরু করে। কিন্তু শিক্ষা আইন প্রণয়নের কাজ আজও সমাপ্ত হয়নি। ফলে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের অনেক কাজই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

মৌলিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ব্যবহারিক সাক্ষরতা, জীবনদক্ষতা, বাঞ্ছনীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ অর্জন করার কথা। এককথায় মৌলিক শিক্ষা জীবনের ও পরবর্তী শিক্ষার ভিত। ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুর ​পক্ষে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে এসব কোনোভাবেই অর্জন করা সম্ভব নয়। একে তো সময়ের স্বল্পতা, তার ওপর বিষয়বস্তুর বিশালতা, অন্যদিকে দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ বিকাশের জন্য প্রাথমিক বয়ঃক্রমের শিক্ষার্থীরা অপরিপক্ব। এই সবকিছু বিবেচনায় রেখে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০–এ প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বৃদ্ধি করে আট বছর করার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গঠিত কুদরাত-এ–খুদা শিক্ষা কমিশনও আট বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের ওপর জোর দিয়েছিল। আট বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা হবে একমুখী, সর্বজনীন, অবৈতনিক ও সবার জন্য বাধ্যতামূলক। অনেকের ধারণা, ৭০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ জন করে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে, চারটি করে নতুন শ্রেণিকক্ষ ও প্রয়োজনীয় আসবাব তৈরি করে ৮ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। এর জন্য কোটি কোটি টাকার প্রয়োজন। সাধারণ দৃষ্টিতে তা–ই মনে হবে। 

পাবলিক পরীক্ষা শিশুদের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করছে। ছবি: হাসান রাজা
পাবলিক পরীক্ষা শিশুদের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করছে। ছবি: হাসান রাজা

কিন্তু ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করলে কোনো সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি না করে অতি কম খরচ ও কম সময়ে আট বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা সম্ভব। বর্তমানে ৭০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ বছর মেয়াদি শিক্ষা শেষ করে শিক্ষার্থীরা ২০ হাজার নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সবাই প্রাথমিকের লেখাপড়া শেষ করে যদি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়, তাহলে কোনো অবস্থাতেই ২৫ হাজারের বেশি বিদ্যালয়ের প্রয়োজন হবে না। আট বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে হলে (ক) ২৫ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি চালু করতে হবে। যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ নেই, সেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়–সংলগ্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অব্যবহৃত শ্রেণিকক্ষে উচ্চ প্রাথমিকের (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির) কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে, এতে নতুন শ্রেণিকক্ষ বা আসবাবের প্রয়োজন হবে না; (খ) যেসব শিক্ষক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে পাঠদান করতেন, তাঁদের প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে নিবিড় প্রশিক্ষণ দিয়ে উচ্চ প্রাথমিকে পাঠদানের জন্য নিয়োগ দেওয়া যাবে। এতে কারও চাকরি যাবে না বা নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে না। তাঁদের চাকরি জাতীয়করণ করা হলেও সরকারের ব্যয় খুব বেশি বৃদ্ধি পাবে না। কারণ, তাঁরা এমপিওভুক্ত। এখানে মনে রাখা প্রয়োজন, কে পড়ালেন এবং কোথায় পড়ালেন—এসব বড় কথা নয়, মূল বিষয় হলো কী পড়ালেন এবং কীভাবে পড়ালেন। আট বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার ​ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো (১) প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একীভূত শিক্ষাক্রম প্রণয়ন এবং শিক্ষাক্রমভিত্তিক শিখনসামগ্রী, যেমন পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষক নির্দেশিকা ও শিক্ষা উপকরণ তৈরি এবং (২) প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস।

প্রাথমিক শিক্ষার একটি শুভ উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি মূল্যায়নসংক্রান্ত। প্রাথমিক শিক্ষার প্রস্তুতি স্তর থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো ধরনের সামষ্টিক মূল্যায়ন থাকবে না। ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিশুদের অগ্রগতি যাচাই করা হবে। উদ্যোগটি অবশ্যই প্রশংসনীয় কিন্তু শুধু ধারাবাহিক মূল্যায়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। ধারাবাহিক মূল্যায়ন শিখন–শেখানো কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে কোন কোন শিক্ষার্থী নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জন করতে পারল এবং কোন কোন শিক্ষার্থী পারল না, তাদের চিহ্নিত করে যারা পারল না, তাদের নিরাময়মূলক সহায়তা দিয়ে যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করতে হয়। সঠিকভাবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও নিরাময়মূলক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করলে শ্রেণিতে কোনো অপারগ শিশু থাকবে না। তখন সামষ্টিক মূল্যায়ন, অর্থাৎ অর্ধবার্ষিক, বার্ষিক ইত্যাদি পরীক্ষা না থাকলেও তেমন ক্ষতি নেই। 

ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও নিরাময়মূলক সহায়তা কার্যক্রম একটি অপরটির পরিপূরক। এ কার্যক্রমের সার্থক বাস্তবায়ন নির্ভর করে প্রধানত তিনটি বিষয়ের ওপর—শিক্ষকের আন্তরিকতা, তাঁদের দক্ষতা এবং শ্রেণিতে ছাত্র-শিক্ষকের সন্তোষজনক অনুপাত। শিক্ষকের দক্ষতা ও আন্তরিকতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন নিবিড় প্রশিক্ষণ ও সুযোগ–সুবিধা বৃদ্ধি। এখানে উল্লেখ্য, ধারাবাহিক মূল্যায়ন বাংলাদেশে নতুন নয়। তিন দশক আগে অবিভক্ত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ধারাবাহিক মূল্যায়ন চালু করা হয়। কাগজে–কলমে আজও চালু আছে কিন্তু বাস্তবে নেই। 

মূল্যায়ন প্রসঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অন্য একটি বিষয় হলো পঞ্চম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক িশক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। পাবলিক পরীক্ষা শিশুদের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করছে। প্রাথমিক বয়ঃক্রমের শিশুরা পাবলিক পরীক্ষার জন্য মানসিকভাবে অপরিপক্ব। এ পরীক্ষা তাদের মানসিক বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ‘পড় পড় পড়, পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পেতে হবে’—এ চাপে তারা পিষ্ট পরীক্ষার জন্য আমোদ-প্রমোদ, খেলাধুলা, বেড়ানো জীবন থেকে হারিয়ে যায়, জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। স্কুল, টিউটর আর কোচিংয়ে জীবন ঘুরপাক খায়। এসব কারণে পরবর্তী জীবনে অনেকের মধ্যে লেখাপড়ার প্রতি অনীহা বা ভীতি দেখা দেয়। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ফলপ্রসূভাবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও নিরাময়মূলক সহযোগিতা কার্যক্রম চালু করে শিশুদের সমাপনী পরীক্ষা থেকে মুক্তি দেওয়া যায়।

সুস্থ দেহে সুস্থ মন। সুস্বাস্থ্য শিক্ষা অর্জনের পূর্বশর্ত। শিশুদের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে তাদের পক্ষে লেখাপড়ায় মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। শিক্ষক যতই ভালো পড়ান, বইপত্র ও শিক্ষার পরিবেশ যতই উন্নত মানের হোক না কেন, শিশু অসুস্থ থাকলে বিদ্যালয়ে আসবে না বা এলেও লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য স্বাস্থ্য কার্ড চালু করতে হবে। এ ব্যবস্থা সুস্থ ও সুশিক্ষিত জাতি গঠনে সহায়ক হবে।

আরও বলছি, শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। জাতীয় কর্ম কমিশনের মতো জাতীয় শিক্ষা কর্ম কমিশন গঠন করে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষকদের হাতে–কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের যোগ্যতা বৃদ্ধি করে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে না। আট বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন করে সুদৃঢ় মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং বিদ্যালয় স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তনের মতো কার্যক্রম বাস্তবায়নেও খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে না। এসব করা হলে একদিকে শিক্ষার মানোন্নয়নের মাধ্যমে মানবসম্পদ তৈরি সম্ভব হবে, অন্যদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী মাইলফলক স্থাপন করা যাবে।

ড. ছিদ্দিকুর রহমান: অধ্যাপক ও সাবেক পরিচালক, আইইআর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।