পথ দেখাল উইমেন চেম্বার

নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় উইমেন চেম্বারের উদ্যোগে।  সংগৃহীত
নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় উইমেন চেম্বারের উদ্যোগে। সংগৃহীত

পোশাক কারখানার কর্মী থেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বেবী হাসানের গল্পটা অনেকেরই জানা। পোশাক কারখানার চাকরি দিয়ে কর্মজীবন শুরু তাঁর। চাকরিতেই থেমে থাকেননি তিনি। ১৯৯৫ সালে চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন। গড়ে তোলেন বায়িং হাউস। সেই সময় নারীদের ব্যবসায় পদে পদে ছিল বাধার দেয়াল। বেবী হাসানের আগ্রহ দেখে তাঁকে অনুপ্রেরণা দিল তৎকালীন চিটাগাং উইমেন এন্টারপ্রেনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সাহস দেন সংগঠনটির সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী। এরপরের গল্প বেবী হাসানের সাফল্য আর এগিয়ে যাওয়ার। 

এভাবেই নারী উদ্যোক্তাদের পাশে থাকছে এই সংগঠন। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চিটাগাং উইমেন এন্টারপ্রেনার্স অ্যাসোসিয়েশন ২০০৩ সালে এসে চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার হিসেবে যাত্রা শুরু করে। বেবী হাসান অকপটে বলেন, ‘উইমেন চেম্বার তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এমন প্ল্যাটফর্ম না থাকলে তাঁর এগিয়ে যাওয়াটা অনিশ্চয়তায় পড়ে যেত। উইমেন চেম্বারের আয়োজনে নানা প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিয়েছি। উদ্যোক্তা হিসেবে অনেক কিছুই শিখেছি।’  

 উদ্যোক্তা হিসেবে এই সংগঠনটি থেকে লন্ডন, কানাডা, মেক্সিকো, মালয়েশিয়াসহ নানা দেশের বাণিজ্য মেলায় অংশ নেন তিনি। এসব মেলায় বিদেশি ক্রেতাদের ক্রয়াদেশও পান বেবী হাসান। 

বেবী হাসানের মতো চট্টগ্রামের অসংখ্য নারী এখন উইমেন চেম্বারের সহযোগিতায় উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলছেন। কেউবা চেম্বার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন। এরাই আবার ধাপে ধাপে উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছেন। কেউবা প্রশিক্ষণ কোর্স করে নিজেই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। 

নারী উদ্যোক্তাদের এই সংগঠন যখন যাত্রা শুরু করে তখন ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীর অংশগ্রহণ ছিল নামমাত্র। যাঁরা ব্যবসায় আসতেন তাঁরাও মূলত পারিবারিক ব্যবসার আলংকরিক পদে ছিলেন। সেই সময়ে মাত্র ৩০ জন নারীকে নিয়ে চিটাগাং উইমেন এন্টারপ্রেনার্স অ্যাসোসিয়েশন সংগঠনটি গড়ে তোলা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা। কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষ করে গড়ে তোলা। ২০০৩ সালে এই সংগঠনটিকে উইমেন চেম্বার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। 

উইমেন চেম্বারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী শোনান সংগঠন নিয়ে পথচলার গল্প। প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই দশক আগে নারী উদ্যোক্তাদের কোনো স্বীকৃতি ছিল না। কেউ উদ্যোক্তা হতে চাইলে সহযোগিতা করার মতো কোনো সংগঠনও ছিল না। ফলে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও অনেকে হারিয়ে যেতেন। উদ্যোক্তা হতে চান এমন নারীদের একটি প্ল্যাটফর্মে আনতে এই সংগঠন করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, ব্যাংক থেকে অর্থায়ন পেতে সহযোগিতা করা, পণ্যের বাজারজাতকরণসহ নানাভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে এই সংগঠন থেকে।’

শুরু থেকে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছে উইমেন চেম্বার। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ পাওয়া নারীদের অনেকেই উদ্যোক্তা হয়েছেন। আবার নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বাজারজাত করা ও পরিচিতির জন্য মেলা আয়োজন করছে সংগঠনটি। নগরের পলোগ্রাউন্ডে মাসব্যাপী মেলার ১৩তম আসরটি বসেছে এখন। এই মেলায় একটি স্টলে নিজের তৈরি করা পণ্য তুলে ধরছেন শারমিন আক্তার। উইমেন চেম্বার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্যোক্তা হয়েছেন শারমিন আক্তার। বেল্লা বুটিক হাউস নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘চেম্বারের প্রশিক্ষণই উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে আমাকে। পণ্যের প্রসারের জন্য উইমেন চেম্বারের মেলায় অংশ নিচ্ছি। সাড়াও পাচ্ছি।’  

উইমেন চেম্বার জানায়, শুধু প্রশিক্ষণই নয়, নারীরা কোনো ব্যবসা শুরু করতে চাইলে যাবতীয় সহযোগিতা করে সংগঠনটি। 

উইমেন চেম্বারের নেত্রীরা জানান, নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন হিসেবে চট্টগ্রামে প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিল চিটাগাং উইমেন এন্টারপ্রেনার্স সংগঠনটি। পরে যা উইমেন চেম্বার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে সারা দেশে ১২টি উইমেন চেম্বার গড়ে উঠেছে। শিল্প, সেবা ও বাণিজ্য খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। নারীরাও অনেকেই সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন। এসব সংগঠনের দাবিতেই সরকার নারীদের জন্য আলাদা তহবিল দিচ্ছে। ব্যাংকগুলোও নারীদের জন্য আলাদা আলাদা ঋণ পণ্য চালু করেছে। 

প্রায় ১৯ বছর আগে ৩০ উদ্যোক্তা নিয়ে যাত্রা শুরু করা সংগঠনটি এখন দেড় হাজার উদ্যোক্তার সংগঠনে পরিণত হয়েছে। প্রতি মাসেই কোনো না কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বছর শেষে যুক্ত হচ্ছেন নতুন নারী উদ্যোক্তা।