আজ পুণ্যময় দিন, আজ বড়দিন
আজ বড়দিন। মহামানব মুক্তিদাতা প্রভু যিশুর জন্মদিন। বিশ্বজুড়ে মহা আড়ম্বরে পালিত হচ্ছে শান্তিরাজ যিশুর জন্মোৎসব। আজকের এই আনন্দঘন মুহূর্তে সবাইকে জানাই খ্রিষ্টীয় প্রীতিপূর্ণ শুভেচ্ছা।
মানুষ স্বাধীন। মানুষ মুক্তি চায়: সব দৈহিক ও আত্মিক বন্ধন থেকে সে মুক্তি চায়; সামাজিক ও রাজনৈতিক অপকর্ম ও দুর্নীতি থেকে এবং সব ধর্মান্ধতার পরাধীনতা থেকে সে মুক্তি চায়; মানুষ চায় পাপের দাসত্ব থেকে মুক্তি। মানুষের এই মুক্তির আর্তনাদ অতীতে যেমন, আজও তেমনি শোনা যায়।
ঈশ্বরের হয়ে যাঁরা বক্তব্য দেন, সেই প্রবক্তারা যুগ যুগ ধরে মানুষের আর্তনাদের পরিপ্রেক্ষিতে ঈশ্বরের মুক্তির বার্তা তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। প্রবক্তাদের বক্তব্যের মূল বাণী ছিল: পরমেশ্বর তোমাদের আর্তনাদ শুনেছেন। তিনি তোমাদের জন্য একজনকে পাঠাবেন। তিনি হবেন ‘মসিহ’ অর্থাৎ মুক্তিদাতা। যখন মানব-জন্ম হবে, তখন তাঁর নাম হবে ‘যিশু’ অর্থাৎ উদ্ধারকর্তা। তিনি পরমেশ্বরের প্রিয় পুত্র, তিনি তাঁর প্রীতিভাজন।
সত্য হলো প্রবক্তাদের বক্তব্য। যিশু এলেন এই ধরায়। ধরা দিলেন এই ধরণিতে, মুক্তি দিতে সব মানবেরে। মানবদেহ ধারণ করে সব বন্ধন, পরাধীনতা ও দাসত্বের মধ্যে মুক্তি-প্রত্যাশী সব মানুষের সঙ্গে তিনি একাত্ম হলেন। এটাই বড়দিন। এটাই শুভ সংবাদ: মুক্তিদাতার জন্মদিন।
মুক্তিদাতা যিশুর আগমনের মুহূর্ত থেকে শুরু করে, যুগ যুগ ধরে কত মানুষ তৎকালীন ঐতিহাসিক অবস্থায় মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছেন। কত মহান পুরুষ ও নারী সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে প্রবক্তা হয়ে মুক্তির বার্তা প্রচার করে গেছেন, মুক্তির জন্য আপন জীবন সমর্পণ করে গেছেন।
আসছে বছর, আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে (১৭ মার্চ ২০২০) আমরাও স্মরণ করি তাঁর উদাত্ত আহ্বান: ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ উপরন্তু একই বছরে বাংলার প্রথম বাঙালি বিশপ ও আর্চবিশপ, যিনি সাধুশ্রেণিভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় এখন ঈশ্বর সেবকরূপে স্বীকৃত, তিনি হচ্ছেন আর্চবিশপ থিয়োটনিয়াস অমল গাঙ্গুলি। দেশের মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে গোটা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে তিনি সম্পৃক্ত করে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁরও জন্মশতবার্ষিকীতে (২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০) আমরা তাঁকে বিশেষভাবে স্মরণ করি। খ্রিষ্টবিশ্বাসী হিসেবে আগামী বছর এ দুজন মহান ব্যক্তির শতবর্ষ জন্মোৎসব পালন করে আমরাও উপলব্ধি করব মুক্তিদাতা যিশুর আগমন ও তাঁর জন্মের ব্যাপকতা ও তাৎপর্য।
সবার জন্য আমার এই কামনা: মুক্তিদাতা যিশু প্রতিটি ঘরে জন্ম নিক, প্রতিটি মানুষের অন্তর ঐশী বিশ্বাসে বলীয়ান হোক, সুখ ও শান্তি বিরাজ করুক। সবাইকে শুভ বড়দিন।
কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি ঢাকার আর্চবিশপ