বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন স্বাধীনতা সংহত করে

দেশে নিজের মানুষের মধ্যে ফিরে জনতার সঙ্গে আনন্দে উদ্বেল বঙ্গবন্ধুও, ১০ জানুয়ারি ১৯৭২। ছবি: সংগৃহীত
দেশে নিজের মানুষের মধ্যে ফিরে জনতার সঙ্গে আনন্দে উদ্বেল বঙ্গবন্ধুও, ১০ জানুয়ারি ১৯৭২। ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাসের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বিভিন্ন ব্যক্তি বা গোত্র ভিন্ন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণ করতে পারেন। জাতির আন্দোলন–সংগ্রামের পক্ষ–বিপক্ষের বয়ান এক রকম হবে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতে গ্রেপ্তার হওয়া, পাকিস্তানের কারাগারে বন্দিত্ব, বন্দিদশা থেকে মুক্তি, মুক্তির পর লন্ডনে গমন, সেখান থেকে দিল্লি হয়ে বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে সবার পর্যবেক্ষণ এক রকম নয়। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় একাত্তরের ১ মার্চ থেকে বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার প্রতিটিই যথার্থ ছিল।

বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন এবং অপছন্দ করতেন কমিউনিস্টদের মতো আত্মগোপনে থাকা। তিনি রাজনীতি করতেন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। তিনি তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমি পালিয়ে থাকার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। কারণ আমি গোপন রাজনীতি পছন্দ করি না, আর বিশ্বাসও করি না।’ (পৃ. ১৩৪) ব্রিটিশ ধাঁচের সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছিল বঙ্গবন্ধুর পছন্দ।

একাত্তরের ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিত ঘোষণার প্রতিবাদে ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করেন। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঘোষণার পরও ২৪ মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান। যদিও ছাত্র–যুবসমাজ স্বাধীনতার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু যেহেতু নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন, সে জন্য তিনি নানা রকম চাপ থাকা সত্ত্বেও কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি চেয়েছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁর কাছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করুক।

শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে না গিয়ে কামান–বন্দুক দিয়ে বাঙালিকে দমনের পথ বেছে নেয় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে মানবেতিহাসের নিষ্ঠুরতম গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু জনগণনন্দিত মেজরিটি পার্টির নেতা, তিনি বিপ্লবী নেতা নন, গেরিলা নেতাও নন, তিনি কারও ভয়ে পালাতে পারেন না। দলের কোনো কোনো সহকর্মী তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে ২৫ মার্চ সন্ধ্যারাতে আত্মগোপনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু সম্মত হননি। জনগণকে কামানের নলের মুখে রেখে তিনি আত্মগোপনে যেতে চাননি। একজন সংসদীয় গণতন্ত্রের নেতা হিসেবে তিনি তাঁর বাসভবনেই অবস্থান করেন। তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে ছেড়ে আত্মগোপন করেন।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭ ও ২৮ মার্চ বারবার ঘোষণা করা হয়, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন এবং তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গেই আছেন। শুধু বাঙালিরা নন, দেশের বাইরের সাংবাদিকদের অনেকের অনুমান ছিল, বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনীর আক্রমণের পর আত্মগোপন করেছেন। ভারতের সাংবাদিকদেরও সে রকম ধারণা ছিল। ২৭ মার্চ কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘মুজিবুর কি কাগমারীতে?’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মুজিব কোথায়? খবর নেই। কিন্তু আমাদের রাজনীতির ভাষ্যকারের কাছে খবর আছে। হয়তো তিনি ইতিমধ্যে ময়মনসিংহের কাগমারীতে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন এবং অতঃপর সম্ভবত তিনি নিরাপত্তার প্রয়োজনে আসাম সীমান্তের দিকে পূর্বনির্দিষ্ট কোনো স্থানে চলে যাবেন।’

আত্মগোপন না করে গ্রেপ্তার হওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের কয়েকটি সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তের একটি। তিনি সাংবিধানিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথে ছিলেন বলেই আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন পান। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে বিশ্বজনমত তাঁর পাশে থাকে। বায়াফ্রার মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ছিল না।

দুই

বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের কথা পাকিস্তান সরকার এক সপ্তাহ গোপন রাখে। তারপর গ্রেপ্তার করা অবস্থায় করাচিতে তাঁর ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হলে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। পাকিস্তান সরকারকে মানুষ ধিক্কার জানায়।

১০ এপ্রিল ১৯৭১। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে প্রবাসী সরকার গঠিত হয়। তাঁর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে (যার নামকরণ হয় মুজিবনগর) বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে।

ওদিকে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে নির্জন কারাগারে বন্দী রাখে। তাঁর নিরাপত্তা ও মুক্তির জন্য জনমত গঠিত হতে থাকে। ৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের ফয়সালাবাদ বন্দিশালায় বঙ্গবন্ধুর গোপন বিচার শুরু হয় এবং সেই প্রহসনমূলক বিচারে তাঁকে ‘দেশদ্রোহী’ ঘোষণা করে মৃত্যুদণ্ড দেয় সামরিক আদালত।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুক্তিকামী মানুষ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি জানান। তাঁর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাকিস্তান সরকারকে চাপ দেন বহু রাষ্ট্রনেতা। বন্ধুরাষ্ট্র ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকারও তাঁর মুক্তির জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা তাঁর মুক্তির দাবি জানায়। এর মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।

দেশ হানাদারমুক্ত হলেও বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে থাকায় মানুষ স্বাধীনতা লাভের পূর্ণ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়। ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বহু রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

তিন

বাংলাদেশে গণহত্যা ও বর্বরোচিত নির্যাতন–নিপীড়ন চালানোর জন্য সারা পৃথিবীতে পাকিস্তান ধিক্কৃত হচ্ছিল। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের পতনে পৃথিবীর মানুষের কাছে পাকিস্তানের মর্যাদা বলে কিছু রইল না। বাংলাদেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে বন্দী রাখায় আরও নিন্দিত হয়। আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে ৮ জানুয়ারি ১৯৭২, পাকিস্তানের নতুন সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেয়। প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো নিজে কারাগারে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর সঙ্গে সৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার কথাও তাঁকে জানানো হয়।

বঙ্গবন্ধুর মুক্তির কথা রেডিওর সংবাদে শোনার পর বাংলাদেশে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। আমার মনে আছে, ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা থেকে সারা রাত মুক্তিযোদ্ধারা রাইফেল–স্টেনগানের ফাঁকা আওয়াজ করে আনন্দ-উল্লাস করেন। রাস্তায় নেমে আসে লাখ লাখ মানুষ। ওই রাতে ঢাকায় আমাদের কারও চোখে ঘুম ছিল না।

৯ জানুয়ারি জানা গেল, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে সরাসরি বাংলাদেশে না এসে তিনি লন্ডনে যাচ্ছেন। ঢাকা বা দিল্লি না গিয়ে লন্ডনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল তাঁর জীবনের দ্বিতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত।

ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো রকম একটা সম্পর্ক রাখা যায় কি না। বঙ্গবন্ধু তাঁকে বলেছিলেন, দেশে ফিরে সবার সঙ্গে আলোচনা না করে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। দেশের পরিস্থিতি নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে শোনার জন্য তিনি লন্ডনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপ্রধানের মর্যাদা দেন। দুই নেতা বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন।

লন্ডন থেকে ঢাকা আসার পথে বঙ্গবন্ধু দিল্লিতে যাত্রাবিরতি করেন। দিল্লি বিমানবন্দরে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধামন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান। দিল্লিতে যাত্রাবিরতি করে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত ছিল তাঁর জীবনের তৃতীয় সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সর্বাধিক সহযোগিতার জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন দলের নেতা ও জনগণকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। সেই সঙ্গে ভারতীয় সৈন্য ফেরত নেওয়ার বিষয়েও কথা বলেন। একজন মহান জাতীয়তাবাদী নেতার যা যা করণীয়, তা সবই তিনি করেন। দিল্লিতে তাঁকে দেওয়া হয় বিপুল সংবর্ধনা।

১০ জানুয়ারি সকালে দিল্লি থেকে বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধু ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। সকাল থেকেই তেজগাঁও বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হতে থাকে। রেসকোর্স ময়দান (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ভরে যায় লাখো মানুষে। সবারই চোখ আকাশের দিকে। আমিও সেদিন সকাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান কার্যালয়ের সামনে ছিলাম। স্পষ্ট মনে আছে, সেদিন আকাশ ছিল অত্যন্ত নির্মল। এক টুকরো সাদা মেঘও ছিল না কোথাও। হঠাৎ একটা চিল উড়তে দেখলে জনতা উৎফুল্ল হয়ে উঠছিল এই মনে করে যে ওটা বুঝি বঙ্গবন্ধুর বিমান। সত্যি সত্যি যখন সেই কাঙ্ক্ষিত বিমান আকাশে দেখা যায়, উল্লাসে ফেটে পড়ে জনতা। বিমানটি কয়েকবার আকাশে চক্কর দিয়ে অবতরণ করে।

ওই বিমানে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এসেছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধি সাংবাদিক আতাউস সামাদ। বিমান থেকে নিচে তাকিয়ে বঙ্গবন্ধু যখন দেখতে পান অগণিত মানুষ, তিনি বিচলিত বোধ করেন এবং স্বগতোক্তির মতো বলেন, ‘এই মানুষগুলোকে আমি খেতে দিতে পারব তো!’ সন্ধ্যাবেলা আতাউস সামাদ আমাদের বললেন, বিমানে বঙ্গবন্ধু বারবারই শুনতে চাইছিলেন কোথায় কোথায় কী কী ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ক্ষয়ক্ষতি করেছে পাকিস্তানি বাহিনী। তিনি চিন্তিত ছিলেন কীভাবে দেশকে পুনর্গঠন করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন।

বিমানবন্দর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে দীর্ঘ সময় লাগে। একটি খোলা জিপে বঙ্গবন্ধু ছিলেন। আকাশবাণীর দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ধারাবিবরণীতে ছিলেন। একটু পরপরই একটি রবীন্দ্রসংগীত হচ্ছিল, ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়।’

তাঁর গাড়ির সঙ্গে আমরা হেঁটে আসছিলাম। বঙ্গবন্ধু শুকিয়ে অর্ধেক হয়ে গেছেন। গাড়িটি যখন কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউর আওলাদ হোসেন মার্কেটের কাছে আসে, ক্লান্ত বঙ্গবন্ধুকে দেখে কয়েকজন মুসল্লি ধরনের লোক ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন। অনেক মানুষই বঙ্গবন্ধুকে দেখে খুশিতে আবেগ সংবরণ করতে পারছিলেন না। অনেককেই মুছতে দেখেছি চোখ।

রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধু সেদিন যে ভাষণ দেন, তা ৭ মার্চের ভাষণের মতোই মূল্যবান। বাংলার মানুষ তাদের প্রিয় নেতাকে তাদের মধ্যে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।

সেদিন বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি যে কতটা প্রয়োজন ছিল, তা এখনকার প্রজন্মের অনেককেই বোঝানো সম্ভব নয়। তখন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অনেকেই মনে করছিলেন, ‘আমরা সবাই রাজা’। কেউ কাউকে মানছিলেন না। তরুণ নেতারা অস্থায়ী সরকারের কোনো কথা শুনছিলেন না। একটি নৈরাজ্যের মতো অবস্থা ছিল ২৫টি দিন। তিনি না এলে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র জমা দিতে চাইতেন না সহজে। ভারতীয় সৈন্যও হয়তো অত তাড়াতাড়ি ফিরে যেত না। অনেক দেশের স্বীকৃতি পেতেও বেগ পেতে হতো। তাঁর প্রত্যাবর্তনের দিন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সংহত হয়।