সংগঠক থেকে নেতা

আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে শেখ মুজিব। ১৯৫২
আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে শেখ মুজিব। ১৯৫২

রাজতন্ত্র হটিয়ে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইকে সাধারণত ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয়। রাজনীতির পরিভাষায় এ ধরনের পালাবদলকে বলা হয় ‘বিপ্লব’। ১৯৫০-এর দশকে এ ধরনের বেশ কয়েকটি বিপ্লব ঘটে গেছে তৃতীয় দুনিয়ার দেশগুলোতে। ১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই মিসরের রাজা ফারুককে সরিয়ে জেনারেল মুহাম্মদ নাগিব এবং কর্নেল জামাল আবদাল নাসের এ রকম একটি বিপ্লব করে ফেললেন। ছয় বছরের মাথায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল করিম কাসেমের নেতৃত্বে ১৪ জুলাই ১৯৫৮ ইরাকে ঘটল আরেকটি বিপ্লব। ক্ষমতাচ্যুত ও সপরিবারে নিহত হলেন রাজা ফয়সাল। তিন মাসের মাথায় চালচিত্র বদলে গেল পাকিস্তানে। প্রথম দুই বিপ্লবে সামরিক বাহিনী রাজতন্ত্র বিলোপ করেছিল। তৃতীয়টিতে দেখা গেল গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ৭ অক্টোবর ১৯৫৮ জারি হলো সামরিক শাসন। ২০ দিনের মাথায় হলো আরেকটি অভ্যুত্থান, প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জাকে সরিয়ে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল মুহাম্মদ আইয়ুব খান ঘটালেন ‘রক্তপাতহীন বিপ্লব’।

১৯৫৮ সালের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানের রাজধানী করাচিতে ক্ষমতার পালাবদল ঘটছিল প্রায় প্রতিদিন। প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুনকে প্রেসিডেন্ট মির্জা অনুরোধ করলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদে যেন আওয়ামী লীগের কয়েকজনকে নেওয়া হয়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পরামর্শে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এঁরা হলেন শেখ মুজিবুর রহমান, জহিরউদ্দিন, নুরুর রহমান, দিলদার আহমদ, আদেলউদ্দিন আহমদ, আবদুর রহমান খান এবং আওয়ামী লীগের সমর্থক কংগ্রেসের পিটার পল গোমেজ। ৭ অক্টোবর সকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভা ঢেলে সাজালেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের কপালে জুটল কয়েকটি গুরুত্বহীন মন্ত্রণালয়। প্রতিবাদে তাঁরা পদত্যাগ করলেন।

রাতে শেখ মুজিব বিমানে চড়লেন। তিনি ঢাকায় ফিরে আসবেন। তিনি যখন আকাশে, তখন দেশে জারি হলো সামরিক শাসন। ৮ অক্টোবর সকালে ঢাকায় পৌঁছে তিনি জানতে পারলেন, দেশে উর্দিশাসন কায়েম হয়েছে। তিনি গ্রেপ্তারের জন্য তৈরি হলেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই প্রথম তিনি সবচেয়ে বেশি দিন মুক্ত ছিলেন। ১২ অক্টোবর তিনি গ্রেপ্তার হন।

শেখ মুজিবের এবারের গ্রেপ্তার হওয়াটা অন্যান্য বারের মতো নয়। এই প্রথম তাঁর মনে হলো, দেশে দীর্ঘদিন সামরিক শাসন থাকবে এবং এ অবস্থায় পাকিস্তানে গণতন্ত্রের কোনো ভবিষ্যৎ নেই—এই ভাবনায় তিনি আচ্ছন্ন হলেন। তাঁর জীবনটাই পাল্টে গেল।

জেলে থাকা অবস্থায় বিশেষ আইনে শেখ মুজিবকে নিরাপত্তা বন্দী হিসেবে দেখানো হয়। এই আইনে তিনি জামিন–অযোগ্য বলে বিবেচিত হন। নিম্ন আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে নয়টি মামলা হয়েছিল।

আইয়ুব খানের ক্ষমতা যাতে নিরঙ্কুশ হয়, সে জন্য তিনি দুটি অধ্যাদেশ জারি করেন। একটি হলো ‘পোডো’ (পাবলিক অফিস ডিসকোয়ালিফিকেশন অর্ডার); অন্যটি হলো ‘এবডো’ (ইলেকটিভ বডিজ ডিসকোয়ালিফিকেশন অর্ডার)। পোডো আইনে বলা হয়, কেউ যদি আদালতে দোষী প্রমাণিত হন, তা হলে এবডো আইনে তিনি ১৯৬৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না। ১৯৫৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের ৪২ জন রাজনীতিবিদকে এবডোর মাধ্যমে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। দুর্নীতির মামলা দিয়ে হয়রানি করা হতে পারে, এই আশঙ্কায় অনেক রাজনীতিবিদ এবডো মেনে নিয়ে রাজনীতি থেকে তখনকার মতো অবসরে চলে যান। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন, মৌলভি তমিজউদ্দিন খান প্রমুখ।

১৪ মাস বিনা বিচারে আটক থাকার পর ১৯৫৯ সালের ৭ ডিসেম্বর শেখ মুজিব জেল থেকে ছাড়া পান। কিন্তু জেলগেটেই তাঁকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। হাইকোর্টে রিট করে এক বছর পর তিনি ছাড়া পান। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা নয়টি মামলার আটটিই খারিজ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতির একটি মামলা চালু ছিল। ওই মামলায় ঢাকার জেলা ও সেশন জজ আবদুল মওদুদ ১৯৬০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর দেওয়া এক রায়ে শেখ মুজিবকে দুই বছরের জেল ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। মুজিব উচ্চ আদালতে আপিল করেন। তাঁর হয়ে মামলা লড়েন সোহরাওয়ার্দী। ১৯৬১ সালের ২১ জুন মুজিব উচ্চ আদালতের রায়ে ওই মামলা থেকে মুক্ত হন।

>শেখ মুজিবের ত্রিপুরা মিশন সফল হয়নি। কিন্তু স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মনের মধ্যে রয়েই গেল। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সামরিক আইন জারি হওয়ার পর থেকেই দলের কাজকর্ম বন্ধ। এনডিএফে যোগ দেওয়ার পর দলের আলাদা অস্তিত্ব আর ছিল না। শেখ মুজিব কৌশল পাল্টালেন। মনোযোগ দিলেন দল পুনর্গঠনের। সুযোগ এসে গেল কাকতালীয়ভাবে।

এরপর থেকেই শেখ মুজিবের রাজনীতির একটি মোড় পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। তিনি তথাকথিত নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির বাইরে পা ফেলেন। ১৯৬১ সালের শেষ দিকে তিনি পূর্ববঙ্গ মুক্তি ফ্রন্ট নাম দিয়ে নিজেই একটি লিফলেট ছেপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের মাধ্যমে তা বিলি করার ব্যবস্থা করেন। শাহ্‌ মোয়াজ্জেম তখন ছাত্রলীগের সভাপতি। সামরিক আইন জারি থাকা অবস্থায় ওই রকম একটি লিফলেট প্রচার করা ছিল দুঃসাহসিক কাজ। এ থেকে তাঁর মনের অবস্থা বোঝা যায়। পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে যে মুক্তি নেই, এই চিন্তা তাঁর মাথায় ঢুকে যায়। বছর পেরোতেই আমরা দেখলাম তাঁর আগরতলা মিশন, যা ছিল গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে এক অভিনব থ্রিলার।

রাজনীতিতে তখন মন্দাভাব। রাজনীতিবিদেরা নতুন শাসকদের চ্যালেঞ্জ করতে পারছিলেন না। পঞ্চাশের দশকের রাজনীতিতে ঘুণ ধরেছিল। মাঝে বছর দুয়েক আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে কোয়ালিশন সরকার ছিল। কিন্তু তা রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারেনি। এক দলের সঙ্গে অন্য দলের ঝগড়া, দলের মধ্যে নেতৃত্বের কোন্দল, মন্ত্রিত্ব নিয়ে কামড়াকামড়ি, ক্ষমতার জন্য লাগামহীন লোভ ও সুবিধাবাদ সামরিক শাসন জারির প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিল। দলীয় রাজনীতি হয়ে উঠেছিল দুর্গন্ধময়।

আইয়ুব খানকে মোকাবিলা করার জন্য সোহরাওয়ার্দীর আগ্রহে ১৯৬২ সালের ৪ অক্টোবর তৈরি হয় ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) নামে একটি প্ল্যাটফর্ম। এতে শামিল হয় আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), মুসলিম লীগ (খাজা নাজিমুদ্দিন গ্রুপ), নেজামে ইসলাম পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামী। এটি ছিল একটি জগাখিচুড়ি মঞ্চ। নিজেদের মধ্যে মিল নেই, অথচ তারা নাকি চ্যালেঞ্জ করবে আইয়ুব খানের শাসনকে! এককভাবে কোনো দলের গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার সক্ষমতা ছিল না।

১৯৬২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মাঝরাতে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন রোডের ইত্তেফাক অফিসে মঞ্চস্থ হলো এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন শেখ মুজিব এবং ইত্তেফাক–এর সম্পাদক মানিক মিয়া। তাঁরা পাশের বাড়ি থেকে ডেকে আনলেন ঢাকায় ভারতীয় উপহাইকমিশনের পলিটিক্যাল অফিসার শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জিকে। তাঁর মাধ্যমে শেখ মুজিব ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে একটি গোপন চিঠি পাঠান। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে ভারতের সাহায্য চেয়ে পাঠানো এই চিঠি পৌঁছে দেওয়া হলো নেহরুকে। চিঠির জবাবের জন্য অপেক্ষা করার ধৈর্য তাঁর ছিল না। ১৯৬৩ সালের ২৭ জানুয়ারি তিনি নিজেই রওনা হন ত্রিপুরা। তাঁর এই মিশন ছিল অত্যন্ত গোপন, ঝুঁকিপূর্ণ এবং রোমাঞ্চকর। এ দেশ স্বাধীন করার ব্যাপারে তিনি যে কত বেপরোয়া ছিলেন, এটি তার একটি উদাহরণ। দলের লোকেরা এ ব্যাপারে বিন্দুবিসর্গও জানতেন না।

শেখ মুজিবের ত্রিপুরা মিশন সফল হয়নি। কিন্তু স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মনের মধ্যে রয়েই গেল। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সামরিক আইন জারি হওয়ার পর থেকেই দলের কাজকর্ম বন্ধ। এনডিএফে যোগ দেওয়ার পর দলের আলাদা অস্তিত্ব আর ছিল না। শেখ মুজিব কৌশল পাল্টালেন। মনোযোগ দিলেন দল পুনর্গঠনের। সুযোগ এসে গেল কাকতালীয়ভাবে।

আইয়ুব খান তখন বিরোধী রাজনীতিবিদদের পক্ষভুক্ত করার চেষ্টা করছেন। লাহোরে পশ্চিম পাকিস্তান ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আলী কাসুরির বাসায় প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার পীরজাদার সঙ্গে ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ ও আহমেদুল কবীরের একটি গোপন বৈঠক হয়। এই বৈঠকের সূত্র ধরে ১৯৬৩ সালের ২ জুন রাওয়ালপিন্ডিতে আইয়ুব খানের সঙ্গে ন্যাপের সভাপতি মাওলানা ভাসানীর দেখা ও কথা হয়। ওই বছর সেপ্টেম্বরের শেষে একটি সরকারি প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে ভাসানী বেইজিং সফরে যান এবং পয়লা অক্টোবর চীনের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যোগ দেন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সে–তুং এবং প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। ঢাকায় ফিরে এসে তিনি আইয়ুব সরকারকে সমর্থন দেন। এনডিএফ এমনিতেই ছিল অকেজো। এবার তা হয়ে পড়ে অপ্রাসঙ্গিক। তারপরও সোহরাওয়ার্দী এনডিএফকেই আঁকড়ে ধরে ছিলেন।

১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর বৈরুতের একটি হোটেলে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুতে শেখ মুজিবের সামনে থেকে বড় একটি বাধা সরে যায়। তিনি আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবনের সিদ্ধান্ত নেন। দলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ১৯৬৪ সালের ৯ জানুয়ারি দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ডাকেন তাঁর ধানমন্ডির বাসায়। সভা হয় ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি। আবুল মনসুর আহমদ ও আতাউর রহমান খানের মতো জ্যেষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতারা এই বৈঠক বর্জন করেন। মুজিব সিদ্ধান্ত নেন দলের কাউন্সিল ডাকার। ২ মার্চ গ্রিন রোডে বিচারপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিমের আমবাগানে নেতা-কর্মীদের এক সমাবেশে আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবনের সিদ্ধান্ত হয়। ৬-৭ মার্চ হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল সভায় আওয়ামী লীগের নবযাত্রা শুরু হয়। পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান সভা উদ্বোধন করেন।

১৯৫৭ সালে মাওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তাঁর জায়গায় কাউকে সভাপতি করা হয়নি। মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। মুজিব দলের সভাপতি হওয়ার জন্য বিচারপতি ইব্রাহিম এবং মানিক মিয়া, উভয়কেই অনুরোধ করেছিলেন। তাঁরা এ প্রস্তাবে রাজি হননি। অগত্যা মাওলানা তর্কবাগীশকে সভাপতি করেই ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি তৈরি হলো। মুজিব যথারীতি সাধারণ সম্পাদক থাকলেন। দলে নতুন করে যোগ দিলেন মুসলিম লীগ ছেড়ে আসা শাহ আজিজুর রহমান।

শেখ মুজিব ১৯৫৩ সাল থেকেই দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ধীরে ধীরে দলটি হয়ে পড়ে সাধারণ সম্পাদককেন্দ্রিক। ১৯৬৪ সালের কাউন্সিল সভার পর থেকে আওয়ামী লীগ হয়ে গেল পুরোপুরি মুজিবনির্ভর একটি রাজনৈতিক দল। দলটি তখনো বেশ এলোমেলো। কিন্তু বরাবরের মতো দলের ভিত্তি থেকে গেল তরুণেরা, ছাত্ররা। শাহ্‌ মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, কে এম ওবায়দুর রহমান, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখের শ্রম, ঘাম ও মেধার ওপর দাঁড়িয়ে দলটি নবরূপে উদ্ভাসিত হলো। সংগঠক থেকে নেতা হিসেবে রূপান্তর ঘটল শেখ মুজিবের। এরপর আর তিনি পেছন ফিরে তাকাননি।

১৯৬৪ সালের ৫ জুন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক জরুরি সভায় শেখ মুজিব এগারো দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। অনেক আলোচনার পর প্রস্তাবগুলো গৃহীত হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ছিল:

—পাকিস্তানের উভয় অংশে বৃহৎ শিল্পকারখানা জাতীয়করণ;

—পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্যে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আলাদা মুদ্রাসহ পৃথক অর্থনীতি প্রণয়ন;

—বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব-নিকাশ ও আয়-ব্যয়ের পূর্ণ অধিকার প্রদেশের হাতে রাখা;

—পূর্ব পাকিস্তানে নৌবাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপনসহ দেশ রক্ষার উদ্দেশ্যে মিলিশিয়া বাহিনী তৈরি করা।

এসব প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ একটি খসড়া ইশতেহার প্রকাশ করে। এই ইশতেহারই পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের সব কর্মসূচি ও আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। 

মহিউদ্দিন আহমদ: লেখক ও গবেষক

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত বছর ‘ঐ মহামানব আসে’ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছিল প্রথম আলো। ক্রোড়পত্রের সেই লেখাগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো।