হ্যাভ আ নাইস জার্নি

বারবার তাকাচ্ছিলেন তার দিকে। চোখে চোখ পড়লে নামিয়ে নিচ্ছিলেন বটে, কিন্তু ওই দিকে দৃষ্টি না দিয়েও দিব্যি আঁচ করতে পারে এখনো তাকিয়ে আছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দূরযাত্রার বাসের বিশ্রামাগার এটা। এখন লোকজনের তেমন ভিড় নেই, কারণ একটু আগেই ঘোষণা করা হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারগামী বাসটি আজ এক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়বে। এ নিয়ে দু–একজন যাত্রী কাউন্টারে বসা লোকজনের সঙ্গে বচসা করেছে বটে, কিন্তু শেষমেশ যা হয়, হাল ছেড়ে দিয়ে কেউ চা খেতে বা সিগারেট ফুঁকতে চলে গেছে বাইরে, কেউবা এখানে ঠায় বসে থাকার চেয়ে এক চক্কর উদ্দেশ্যহীন হেঁটে আসতে গেছে সামনের রাস্তায়।

লোকটা কোথাও যাননি। সেই তখন থেকেই একটা সংবাদপত্র চোখের সামনে খুলে বসে আছেন। আসলে তাকাচ্ছেন তার দিকেই, কিন্তু সে চোখ তুললেই পত্রিকার পাতার দিকে গভীর মনোযোগ। এখন কেউ গিয়ে যদি তাকে জিজ্ঞেস করে, আপনি আসলে কোন নিউজটা বা ফিচারটা পড়ছেন ভাইজান? নিশ্চিত থতমত খাবেন, কোনো উত্তর দিতে পারবেন না। সংবাদপত্র পাঠের ভঙ্গিটি আসলে অভিনয় এবং বলা যায় দুর্বল অভিনয়।

ঘরটাতে অল্প কজন মানুষ। তার মধ্যে একজন যদি গোয়েন্দার মতো সন্দেহভাজন অপরাধীর দিকে তাকিয়ে থাকেন, তাহলে ব্যাপারটা রীতিমতো অস্বস্তিকর। কিন্তু এ কথা কে বোঝাতে যাবে তাকে?

রুমমেট সিনথিয়াকে নক দিল মেসেঞ্জারে।

হাই সিনথি...

হাই, বাসে?

না, এখনো ছাড়ে নাই। এক ঘণ্টা লেট।

তাইলে হেডফোন লাগায়া গান শুনতে থাক।

শুনতেছি। প্রবলেম হইল একটা লোক হাঁ কইরা তাকায়া আছে আমার দিকে। আছে তো আছেই।

তোমার দিকে তো তাকাইবই সুন্দরী। লোকটা দেখতে কেমুন? একটা ছবি তুইলা পাঠা, দেখি জিনিসটা কেমুন।

ভ্যাট। পাগল।

স্মার্ট হ্যান্ডসাম হইলে তাকাইতে দে, চুলেরে ঝাঁকায়া, মাঝে মাঝে ফ্যাশন ক্যাটওয়াকের মতো একটু হাঁটাহাঁটি কর। কবি-শিল্পীদের মতো উড়াধুড়া অইলে জানালা দিয়া আকাশের দিকে তাকায়া থাক। আর গাড়ল টাইপের অইলে সোজা সামনে গিয়া ক, অ্যাই হালা তোর সমস্যা কী? লাইফে আর দেহস নাই?

হা হা হা।

হাসস ক্যান?

দুঃখে হাসি। লোকটারে আমি চিনি, উনি কিন্তু আমারে চেনেন না।

ওমা তাই নাকি! কিসের একটা স্মেল পাচ্ছি! ‘লোকটা লোকটা’ বলতেছিস, তোর বাপের বয়সী?

আরে না। তোর বড় ভাইয়ের বয়স।

আমার বড় ভাইটারে তো চান্স দিলি না, এইটার চেহারা মুবারক কেমন?

নাক বোঁচা, চোখ ছোট। এই ছোট চোখের মানুষ আমার একেবারে না–পসন্দ, বুঝছস। হাসলে চোখটা খোলা না বন্ধ বুঝাই যায় না। হা হা হা।

চেহারা বেশি খারাপ?

আরে না। কোরিয়ান টিভি সিরিয়ালের নায়কদের মতো। পাকা কলার মতো গায়ের রং।

ওয়াও! হ্যাভ আ নাইস ডে।

থ্যাংকিউ। বাই।

সেলফোনটা ব্যাগের ভেতর চালান করে দিয়ে এবার সরাসরি তাকাল লোকটার দিকে। বেচারা দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার সময়ই পেলেন না। ধরা পড়ার লজ্জা আর অপ্রস্তুত ভাবটা কাটানোর জন্যই বোধ হয় উঠে দাঁড়ালেন এবার। হেঁটে দরজার বাইরে গিয়ে দাঁড়ালেন। দূরে কোথাও না, ঠিক দরজার ও প্রান্তে দাঁড়িয়ে বোধ হয় আজকের আবহাওয়াটা কেমন বোঝার চেষ্টা করছেন। প্রকৃতির রূপ বোঝার জন্যই ওখানে দাঁড়িয়ে ঘামছেন, নাকি নিজের অস্থিরতা কাটাচ্ছেন, কে জানে। আজ রোদ ঝলমলে আকাশ। শীতাতপকক্ষে বসে মে মাসের শেষ দিকটার এই গরমের আঁচ টের পাওয়া যাচ্ছে না বটে, কিন্তু বাইরে পথের কুকুরগুলোরও জিব যে লম্বা হয়ে গেছে, সেটা দিব্যি অনুমান করা যায়।

এই ফাঁকে নিজেও একবার ওয়াশরুমের দিকে এগোল মনিকা। আয়নার সামনে দাঁড়াল। বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল নিজেকে। নেহাত সাদামাটা সাজ। লম্বাটে মুখ। ছোট কপাল, তাতে ছোট একটা বিন্দুমাপের টিপ। সোজা ঝরঝরে দীর্ঘ চুলকে পেছন দিকে টেনে কাঁধের ওপর একটা ব্যান্ড দিয়ে শক্ত করে আটকে দিয়েছে, এবার কোমর পর্যন্ত গোছাটা এদিক–ওদিক দুলুক। হাসলে একটা গজদাঁত দেখা যায়। ছোটবেলায় এটা নিয়ে বন্ধুরা, এমনকি ঘরের লোকজন এত যে খ্যাপাত, বেচারি পারতপক্ষে ঠোঁট ফাঁক করে হাসত না। বড় হওয়ার পর সেই গজদন্তের হাসি নিয়ে তো এখন প্রশংসার ফুলঝুরি। হাসলে নাকি মুক্তা ঝরে। ঝরুক, সে কারণে-অকারণে হাসে। এখন ফাঁকা ওয়াশরুমে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজে নিজেই দাঁত কেলিয়ে একবার মুক্তা ঝরাল। দীর্ঘ গ্রীবা, গলায় একটা সরু চেইন। সবই ঠিক ছিল, রংটা আরেক পরত ফরসা হলে ভালো হতো বোধ হয়। দরকার নেই, শুধু রাঙা আলু হলে হয় না, চেহারায় একটু মায়া, একটু লাবণ্য থাকতে হয়, সেটা তার আছে। গ্রীবা বাঁকিয়ে রাজহাঁসের মতো অহংকারী একটা ভঙ্গিতে আয়নার সামনে থেকে সরে এসেছিল।

লোকটা দরজার ও প্রান্ত থেকে ফিরে এসে আবার আগের চেয়ারটাতে বসেছেন। ওয়েটিংরুমে একটা বেশ বড় আকারের টিভি ছিল, আগে চোখে পড়েনি। এখন বিরক্ত যাত্রীদের মনোরঞ্জনের জন্য বোধ হয় সেটি চালু করা হয়েছে। তাতে একটা বাংলা ছবি চলছে। লোকটা এবার সিনেমা দেখার ভঙ্গি করে আড়চোখে তার দিকে তাকাচ্ছেন, মনিকার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে।

অদ্ভুত লোক তো! হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে তো আছেই। মনিকার কথা না হয় বাদই গেল, আর কেউ লক্ষ করলে কী ভাববেন। উঠে সোজা লোকটার মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়াবে কি না ভাবছিল, ঠিক তখুনি লোকটা রাজ্যের দ্বিধা ও সংশয় নিয়ে এগিয়ে এলেন তার দিকে।

আপনাকে দেখে খুব চেনা চেনা লাগছে। আগে কি কোথাও আপনাকে...? কণ্ঠে একধরনের বিব্রত ভাব।

এ রকম লাগে। সুন্দরী মেয়েদের দেখলে চেনা চেনা লাগে...আগে কোথাও দেখেছি মনে হয়...এটা নতুন কিছু না।

মনিকার গলায় কি একটু রূঢ়তা ছিল? লোকটা ভড়কে গেলেন, আহত কণ্ঠে বললেন, আমাকে ওই ধরনের লোক ভাববেন না প্লিজ। আপনাকে সত্যি আমার খুবই চেনা লাগছে...কিছুতেই মনে করতে পারছি না।

শান্ত গলায় মনিকা পাশের চেয়ারটি দেখিয়ে বলল, বসেন।

জি?

বসেন।

বসলেন ভদ্রলোক, তারপর প্রায় চমকে ওঠা গলায় বললেন, কী আশ্চর্য! এই যে একটা গন্ধ পেলাম আপনার শরীর বা জামাকাপড় থেকে...এই গন্ধটাও না আমার খুব পরিচিত! জবাকুসুম তেলের না হাসনাহেনা ফুলের ঠিক বুঝতে পারছি না, তবে খুবই পরিচিত একটা গন্ধ...।

হা হা হা। ফুলেরও না, তেলেরও না, এটা পারফিউম। অনেককাল ধরে এই পারফিউমটা ব্যবহার করি আমি।

লোকটা তাকিয়ে আছেন তার দিকে, তার এই বিভ্রান্ত চেহারাটা খুব উপভোগ্য মনে হলো মনিকার, বলল, একটা ক্লু দিতে পারি। মনে করুন তো, এই গন্ধটা একসময় দিনে রোজ একবার কি দুইবার নাকে লাগত...একটা মেয়ে আসত আপনার কাছে..., খুব কাছে না, একটু দূরে..., তার চেহারাটা দেখা যেত না...।

লোকটা চোখ বন্ধ করেছেন। ভাবছেন। নিজে নিজে কী যেন বিড়বিড় করছেন, তারপর হঠাৎ প্রায় চিৎকার করে উঠলেন, ইয়েস! আই গট ইট!

কী পেলেন? মনিকার চেহারায় দুষ্টুমির হাসি।

আজ থেকে দুই বছর আগে, তখন ২০২০ সাল, পৃথিবীজুড়ে চলছিল করোনাভাইরাসের তাণ্ডব! তখন...।

কথা বলতে বলতে ডা. শাহীন ইকবাল চোখ বন্ধ করলেন আরও একবার। যেন সেই দিনগুলোকে বন্ধ চোখের পর্দায় ফিরিয়ে আনতে চাইছেন তিনি। মনিকাও আর একবার মনে করতে চাইল সেই দুঃসময়ের দিনগুলো।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ছিলেন মনিকার বাবা আবদুল হাদী। করোনাভাইরাসের রোগী যখন শনাক্ত হতে শুরু করল এই দেশে, তখন বাবাকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল পুরো পরিবার। নভোচারীর মতো প্রটেকশন পোশাক পরে প্রতিদিন হাসপাতালে যেত বাবা। রাতে ফিরে এসে গোসল করে কাপড়–জামা ধুয়ে খেতে বসত একা। আম্মা ভাত-তরকারি সব একসঙ্গে একই প্লেটে দিয়ে একটু দূরে দাঁড়াতেন। মনিকা আর তার ছোট ভাইটার তখন বাবার কাছে ঘেঁষার অনুমতি ছিল না।

নিজেদের পরিবারেরই যখন এই অবস্থা তখন একদিন আরেকজন অসুস্থ ডাক্তারকে নিয়ে এসে হাজির আবদুল হাদী। বাড়ির বাইরের দিকে একটা বাঁশ-বেড়া টিনের ছাউনির ঘর ছিল। টিউটর এলে ছেলে-মেয়ের পড়তে বসা, বাবার বন্ধুরা এলে কখনো আড্ডা দেওয়া—এসব ছাড়া আর কোনো কাজে লাগত না। সবাই বলে বাংলা ঘর। সেই বাংলা ঘরে ঠাঁই হলো ডা. শাহীনের। তার শরীরে নাকি করোনা পজিটিভ পাওয়া গিয়েছিল। আইসোলেশনে থাকতে হবে, তাই বাবা তাঁর অধস্তন এই তরুণ চিকিৎসককে নিয়ে এসেছিল নিজের বাড়িতে। ইন্টার্নশিপ শেষ হওয়ার পর প্রথম পোস্টিং হয়েছিল কক্সবাজার হাসপাতালে। চাকরিজীবনের শুরুতেই এ রকম একটা জীবনের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেল বেচারা। বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলত, এই হচ্ছে ডাক্তারের জীবন!

একা ওই ঘরটাতে প্রায় বন্দিজীবন কাটত শাহীনের। বাবা মাঝেমধ্যে দেখে আসত, ওষুধপত্র দিয়ে আসত। মনিকার দায়িত্ব ছিল এক বেলা নাশতা আর দুবেলা ভাত-তরকারি বাংলা ঘরের দাওয়ায় রেখে আসা। খাওয়া শেষে বাসন তিনি ধুয়ে রাখতেন, সেগুলো ফিরিয়ে আনা। খুব সাবধানে যেতে হতো, মুখে মাস্ক, মাথায় কাপড় দিয়ে কোনোরকমে খাবারটা দিয়েই দ্রুত ফিরে আসা। তার মধ্যেও মাঝেমধ্যে একটু দূর থেকে দেখেছে। চুল–দাড়িতে উষ্কখুস্ক লোকটাকে দেখে খুব মায়া হতো। মায়ায় জড়িয়ে যাওয়ারই তো বয়স তখন। সবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ফার্স্ট ইয়ার। ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে এ রকম দুর্দশাগ্রস্ত সুদর্শন তরুণ চিকিৎসককে দেখে মায়া না লাগার কোনো উপায়ই তো নেই! তা ছাড়া লকডাউনের কারণে যানবাহনের চলাচল, অফিস-আদালত সব বন্ধ ছিল বলেই কি না কে জানে প্রকৃতি খুব সুন্দর হয়ে উঠেছিল তখন। চারপাশে অজস্র ফুল ফুটেছিল সেবার, আর কোকিল! অহর্নিশ কোকিলের ডাকে দিবানিদ্রার সুখ হারাম হয়ে যেত মনিকার। অসুস্থ ডাক্তারের জন্য বড় মায়া পড়ে গিয়েছিল।

কিন্তু শাহীনের বোধ হয় সে রকম কিছু হয়নি, ফুল–পাখির ছবি–গানে মুগ্ধ হওয়ার সময় তো নয় তার। সপ্তাহ দুয়েক বন্দিজীবন কাটিয়ে সুস্থ হয়েই একটা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ঢাকা চলে গিয়েছিলেন লোকটা। আজ এতকাল পরে তার মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছি! একটা চেনা গন্ধ, জবাকুসুম তেলের, না হাসনাহেনা ফুলের। হুম, অথচ তোমার কথা ভেবে মনিকার কত অনিদ্র রাত কেটেছে ডাক্তার!

আপনি তো কক্সবাজার, মানে আপনার বাড়িতে যাচ্ছেন তাই না? শাহীন ইকবাল বললেন।

হ্যাঁ।

কেন যাচ্ছেন আমি বোধ হয় জানি। একটা বিয়ের সম্বন্ধ...মানে পাত্রী দেখতে আসার কথা তাই না?

হ্যাঁ। আপনি কী করে জানলেন?

কারণ আমিই যাচ্ছি পাত্রী দেখতে। লাজুক হাসি শাহীনের মুখে।

সারা শরীর যেন জ্বলে উঠল রাগে, বলল, ওহ্, আপনি! বাহ্, বেশ দিগ্বিজয়ে বেরিয়েছেন। পাত্রী দেখে পছন্দ হলে দয়া করে বিয়ের জন্য সম্মতি জানিয়ে আসবেন, আর পছন্দ না হলে চা-নাশতা খেয়ে ফিরে আসবেন। পরে জানিয়ে দেবেন যে পছন্দ হয়নি। তাই না?

না ব্যাপারটা ঠিক সে রকম নয়।

ব্যাপারটা ঠিক সে রকমই। বাট এত সোজা না, আমার প্ল্যানটা ছিল অন্য রকম। আমি পাত্রী সেজে নিজের চেহারা দেখাতে রাজি হয়েছিলাম কেন জানেন?

কেন? এবার কাঁচুমাচু ভাব ডাক্তারের অভিব্যক্তিতে।

জানতাম পাত্র আমাকে পছন্দ করবে। নিজের চেহারা–সুরত যে ভালো সেটা তো জানি। কী ঠিক না? সরাসরি মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করে বসল মনিকা।

জি ঠিক। সেই কাঁচুমাচু অভিব্যক্তি এখনো চেহারায়।

আমি ভেবে রেখেছি পাত্র যখন দেখেশুনে জানাবেন যে পছন্দ হয়েছে, তখন তার মুখের ওপর বলব, আমার পছন্দ হয়নি। আমি বিয়ে করব না।

পাত্র না দেখেই এ সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন? এবার ডাক্তারের চেহারায় বিস্ময়।

জি। না দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ, এ জমানায় যে ছেলে বাড়িতে গিয়ে পাত্রী দেখার বন্দোবস্ত করেন তাকে শুট অ্যাট সাইট...মানে দেখামাত্র নাকচ করাটা যেকোনো শিক্ষিত মেয়ের পবিত্র দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।

চুপসে গেছেন ভদ্রলোক। খুব অপরাধ বোধ থেকেই যেন বললেন, আসলে আপনাকেই বিয়ে করতে চেয়েছিলাম আমি...কী যেন নাম আপনার?

মনিকা।

হ্যাঁ মনিকা, সেই যে করোনার দিনগুলোতে আপনার মায়াময় রূপ দেখেছিলাম...

রূপ কোথায় দেখলেন, তখন তো মাস্ক পরা ছিল।

ঠিক দেখিনি, তবে ওই যে বললাম, একটা গন্ধ, হাসনাহেনা ফুলের না জবাকুসুম তেলের...সেই গন্ধটা, আর...।

আর?

জানালা দিয়ে দেখতাম হেঁটে আসছেন...ওই হাঁটার ভঙ্গি, মানে পুরো একটা আদল...শুধু মুখটাই তো আর সবকিছু না। খুব ভালো লেগে গিয়েছিল জানেন...।

ভালো লেগে গিয়েছিল ভালো কথা। সে কথা জানালেই তো হতো। ঘটা করে পাত্রী দেখতে যাওয়া কেন?

এটা আসলে আপনার বাবা, মানে আমাদের হাদী স্যারের ডিসিশন। আমি সরাসরি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। উনিই বললেন, সেই কবে কী অবস্থায় দেখেছিলে...একবার আসো দেখে যাও।

ও আচ্ছা। যাক, দেখা তো এখন হয়েই গেল। এখন কী করবেন? কক্সবাজার যাওয়ার আর দরকার আছে?

না, মানে আপনি বললে যেতে পারি।

চলেন তাহলে, ভ্রমণের জায়গা হিসেবে কক্সবাজার তো মন্দ নয়। বলে গজদাঁত দেখিয়ে হাসল মনিকা।

মুক্তোঝরা হাসি দেখে অনেকক্ষণ পর নিজেও একটু হাসতে পারল ডা. শাহীন ইকবাল। ব্যাগ থেকে বাসের টিকিটটা বের করে মনিকা বলল, এটা নিয়ে কাউন্টারে যান, আপনারটার সঙ্গে মিলিয়ে পাশাপাশি দুইটা সিট দিতে বলেন।

টিকিটটা হাতে নিয়ে অদ্ভুত এক বোকা বোকা হাসিতে মুখ ভরিয়ে মনিকার দিকে তাকাল ডাক্তার। তারপর ছুটে গেল কাউন্টারের দিকে।

মনিকা সেলফোন বের করল। ফেসবুক মেসেঞ্জারে সিনথিয়াকে লিখল—নাক বোঁচা, চোখ ছোট, পাকা কলা রঙের লোকটার পাশে বসে কক্সবাজার যাচ্ছি।

সিনথিয়ার উত্তর, ওয়াও! হ্যাভ আ নাইস জার্নি!