করোনা ও দুর্গতি-কথা

কার্টুন: রফিকুন নবী
কার্টুন: রফিকুন নবী

মরার উপর খাঁড়ার ঘা। এমনিতেই তো হরেক রোগবালাইয়ের বাহক নিয়ে আমাদের হালেকান অবস্থা। আজ ম্যালেরিয়া তো কাল ডায়রিয়া, এই যদি চিকুনগুনিয়া সামাল দিতে বিপর্যস্ত তো এই আবার ডেঙ্গু। কত্ত রকমের মশা-মাছি নিয়ে ভোগান্তি।

এই যখন চলছে, তখন দুম করে মেড ইন চায়না ভয়ংকর রোগটা এসে হাজির। অন্য সব রোগ নিয়ে নিশ্বাসটা নরমাল হতে না হতে এইটার থাবা। জন্মের পরপরই নিজ দেশে লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়েছে যে, তা বড়-ছোট সব দেশ-মহাদেশে জানাচ্ছিল।

সেটা যে বিনা পাসপোর্ট–ভিসায় যত্রতত্র ঘুরতে–বেড়াতে বের হবে এবং ভয়াবহ খুনি রূপ নিয়ে ভাইরাসকুলের ডন হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হবে, তা অতটা ভাবনাতেই আসেনি প্রথমে।

ভাবটা এই রকম ছিল যে, ‘কত ভাইরাস আইলো গেল, কত ছাইপাঁশ দেখলাম! এইটা কী আর করব!’ অথচ ভাইরাস এক্সপার্টরা কী আহ্লাদ করেই না একটা মনোমুগ্ধকর নাম দিয়েছিলেন। আসলে সেই ‘করোনা’ নামটা শুনে মোটেও ভয় ধরার ব্যাপার ঘটেনি। বিজ্ঞানীরা অবশ্য এমনটাই করেন। ইবোলা–নিপা ধরনের মেয়েবাচক নামকরণ তার প্রমাণ। এগুলোও ভাইরাস। আবার ভয়ংকর সব সাইক্লোন-টাইফুনের নামও রোমান্টিক ভাবনা থেকে দিয়ে দেন। কে জানে ভয়ে না আদর করে তা করেন তাঁরা।

কিন্তু এই ভাইরাস আস্ত ভিলেনের চেহারা নিয়ে তার উপস্থিতিকে বিশ্বায়ন করে ছাড়ছে। তা যত খুশি করুক গিয়ে, আমাদের ওপর আছড়ে পড়া কেন, বাবা। আমরা তো তোমার দেশকে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে দিই। আলপিন–সেফটিপিন আমদানি থেকে শুরু করে বিশাল বিশাল সেতু, রাস্তাঘাট বানানোর মতো ব্যবসাপাতি চালাচ্ছে নির্বিঘ্নে। তাও বিধ্বংসী ভাবটা নিয়ে এ দেশকেও আলাদাভাবে দেখলে না? বলতে ইচ্ছা করে, ‘ওহে করোনা, এ রকমটা কোরো না।’

কিন্তু ভাইরাসটি আপন ইচ্ছা থেকে সরল না। এই কারণে কত কিছুই না করতে হচ্ছে এখন। জীবনে আমাদের দেশের মানুষ অনেক অঘটনই দেখেছে। ভাগাভাগি, মহামারি, সাইক্লোন, যুদ্ধ ইত্যাদির মতো মারকুটে ঘটনা দেখা হয়েছে। তারপরও এই ভাইরাস রীতিমতো ভূত-পেতনির ভীতি নিয়ে হাজির। এর দৌরাত্ম্য ঠেকানোর জন্য তাই কত না ঘটনা করতে হচ্ছে। তার অন্যতম হলো দেশব্যাপী মহা ছুটি ঘোষণা।

তো মাস দুয়েক আগে যখন ছুটির ঘোষণাটা এল, তখন মনে মনে আনন্দিত হয়নি, এমন কেউ ছিল কি না সন্দেহ। যত দূর ধারণা যে ভাইরাসের ব্যাপারটা হয়তো সাময়িক একটা পরিস্থিতি সৃষ্টির ব্যাপার। অতএব, এই ছুটি বেশ উপভোগ্য হবে।

তা ছাড়া অপ্রত্যাশিত–অনির্ধারিত আচমকা ছুটি পেলে কার না স্ফূর্তি জাগে? সে রকমেরই লক্ষণ দৃশ্যমান হচ্ছিল। কিন্তু তা যে গুড়েবালির মতো হবে, তা বোঝা গেল ‘লকডাউন’-এর কড়াকড়ি ঘোষিত হওয়ার পর। সেটা থাকায় আনন্দের সব ভাবনা মাটি। সব ভন্ডুল। একেবারে গৃহবন্দী সবাই। কী শহরে, কী গ্রামে—একই কাণ্ড। এটা আসলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনা রোগটির বিস্তার ঠেকানোর একটি প্রক্রিয়া। একটি সরকারি প্রচেষ্টা।

এ দিয়ে বোঝাবার চেষ্টাটি হলো, ‘দূরে দূরে থাকো, নিজে বাঁচো, অন্যকে বাঁচাও।’ তা অন্যকে বাঁচানোর দিকটিকে নিয়ে কে কতটা ভাববে, তার ওপর তো ভরসা করার কথা নয়, তবে নিজে বাঁচার তাগিদটা অনুভূত যে হয়েছে সবার, তা লকডাউন মান্যি করার ব্যাপার দেখলে বোঝা যায়। রোগটা ধরলে মরে যাওয়ার চাইতেও হাজার ঝামেলা এবং বিপদে পড়ার আশঙ্কা তো সবারই জানা হয়েছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক যেদিক ভাইরাসটা সৃষ্টি করেছে তা হলো, ‘সংসারে কেহ কারও নয়।’ রোগটায় ধরলে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভানুধ্যায়ী কাউকেই কাছে ভিড়তে দেওয়া হবে না। আইসোলেশন আর কোয়ারেন্টিনে একা থাকতে হবে। কারোরই পাশে থাকার সুযোগ ঘটবে না। চিকিৎসা নিতে যাওয়াও নিজেকে করতে হবে। চিকিৎসক, হাসপাতাল, এই টেস্ট, সেই টেস্ট করার কাজগুলো নিয়ে হালেকান হতে হবে নিজেকেই। আর রোগে না হলেও এসব কারণে নিজের দুরবস্থা দেখে না মরলেও মরমে মরে যেতে হবে নির্ঘাত!

এসব ঝামেলা থেকে বাঁচতে নিয়মকানুন মেনে চলার কথা মুহুর্মুহু মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে সরকারি প্রচারমাধ্যমে। তো করোনা ভাইরাসটি যে যমের হাত ধরে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, রোগাক্রান্ত করছে, অবলীলায় মানুষ মেরে যাচ্ছে—তা আর জানতে বাকি নেই বিশ্বের কারোর।

যা–ই হোক, এই লকডাউন ছুটিটা যে নরমাল নয়, তা টের পাওয়া, লকডাউন সম্বন্ধে কারও সম্যক ধারণা কতটুকু ছিল, জানা নেই। আগে কোনো দিন ব্যাপারটা ঘটেনি। ইংরেজি ভাষাটায় চিরকালই আমি ঘোরতর নাজুক। ভেবে নিয়েছিলাম ‘লকআপ’ কথাটার ‘আপ’টাকে সর্বসাধারণের জন্য ‘ডাউন’ করা হয়েছে। বিনা দোষে তো আর কাউকে লকআপে দেওয়া যায় না। উভয় ক্ষেত্রেই তো ‘বন্দী’ কথাটা কোনো না কোনোভাবে যুক্ত। ট্রেনে যেমন আপট্রেন-ডাউনট্রেন আছে, দুরকমেরটাতেই যাত্রীরা কামরায় বন্দী থাকে! তেমনি কিছু!

প্রথমটায় তো অনেকেই, বিশেষ করে অতি প্রবীণেরা, পথেঘাটে পুলিশ, মিলিটারি, র‌্যাব সদস্যদের টহল দিতে দেখে প্রায় কারফিউই ভেবেছিলেন। পরিচিত বেশ কজন আধা প্রবীণ অবশ্য একটু ভিন্নতা দিয়ে ধারণা করেছিলেন যে ঠিক কারফিউ নয়, তবে কারফিউ–সদৃশ। কারফিউর সহোদর টাইপের মতো ধরা যেতে পারে।

আসলে প্রবীণ যাঁরা পাকিস্তান আমলে যৌবনদীপ্ত টগবগে যুবক ছিলেন, তাঁদের তো সেই সময়ে প্রায়শই কারফিউ দেখে দেখে ব্যাপারটা মুখস্থই হয়ে আছে। তবে লকডাউনের তফাতটা তাঁরা বুঝতে পেরেছেন। সে আমলে কারফিউর মানে ছিল, ‘শুট অ্যাট সাইট।’ দেখামাত্র গুলি করিয়া মারিবে। একাত্তরে তো মিলিটারিদের জন্য যেন অর্ডারটা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, ‘কারফিউ চলাকালীন বাঙালিদের ঘরে ঘরে ঢুকিয়া ধরিয়া লইয়া বধ্যভূমিতে আনিয়া বেদম টর্চার করিয়া হত্যা করিবে।’ সে সময়ের আতঙ্কিত হওয়ার সেই কারফিউ সবারই মনে গেঁথে আছে।

তো সেইটা ছিল মারার জন্য। লকডাউনটা উল্টো। কড়াকড়ি চলছে আপামর জনসাধারণকে বাঁচানোর জন্য। আর এই সমস্ত কিছুর দিকে যেতে বাধ্য করেছে ওই ভয়ংকর ভাইরাস করোনা।

এখন সবাই ঘরবন্দী করোনার ভয়ে। লকডাউনটা সহায়ক দিক। এখন নেকাবসম মাস্ক ভালো–মন্দ থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোর-যুবা-বৃদ্ধ সবার মুখে। পোশাকের অংশ হয়েই সেঁটে গেছে। হাতে হাতে গ্লাভস। যার সাধ্য আছে, তার পরনে আবার আপাদমস্তক ‘পিপিই’।

অভ্যাসও পাল্টেছে অনেকটাই। সবাই প্রতিনিয়ত হাত ধুচ্ছে। হাঁচি লুকাচ্ছে কনুইয়ের ভাঁজে। স্যানিটাইজারও ব্যবহার করছে। থুতু ফেলা কমেছে। এটা অবশ্য বারবার মাস্ক খোলা-পরার বিড়ম্বনা থেকে বাঁচতেও হতে পারে।

বিশ্বজুড়েই একই নিয়মে চলছে এসব। সে কারণে আমরা সে অভ্যাসের ব্যাপারে আন্তর্জাতিকতা অর্জন করেছি, তা বলাই বাহুল্য। ঘোষণা অনুযায়ী দোকানপাট, খেলাধুলা, বিয়ে-শাদি, সভা-সমিতি, সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবহন সব বন্ধ। এতে ভালো ও বিড়ম্বনার দিক সবই যে রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। পরিবহনের দিকটিকেই ভালো দিকের পর্যায়ে ফেলা যায়। দুর্ঘটনা নেই বললেই চলে। অতএব, এতে মৃত্যুর হারও তেমন গুনতিতে নেই আপাতত। আসলে তো দুর্ঘটনায় দৈনিক মৃত্যুর হারকে ‘করোনা’ এখনো ডিঙাতে পারেনি। লকডাউনের কারণে অপঘাতে বা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমায় একধরনের নিশ্চিন্তি বোধ থেকে ধন্যবাদ দেওয়া যায় লকডাউনের উৎস ওই ভাইরাসটিকে, সঙ্গে সরকারকে তো বটেই।

ভালো দিক আরও আছে। যেমন ঘর থেকে বের হওয়া নিয়মিত নয় বলে খরচপাতি কম হচ্ছে। জিনিসপত্র পাওয়াও যাচ্ছে কম। ঈদের বিরাট বাজার থেকেও বিরত থাকার সুযোগ এসেছে। রমজানে বেশি বেশি লোভনীয় ইফতার আইটেম ভক্ষণে সংযত হয়েছেন রোজদারেরা।

বিড়ম্বনার দিকটিই অবশ্য মনঃকষ্টের দিকে ঠেলেছে বেশি। সরকার থেকে শুরু করে সব রাজনৈতিক দলের সমাবেশ বন্ধ। নেতাদের একক উপস্থিতিতে টিভিতে বক্তব্য দিতে হচ্ছে। তাও আবার মাস্ক পরে বা মুখ–চোখসহ পুরো মাথা ঢেকে। তাতে অবশ্য জনগণের জন্য মুগ্ধতামেশানো যে অভিব্যক্তি তাঁরা দিয়ে থাকেন, তা মুখোশের আড়ালে থেকে যাচ্ছে। বলা বাহুল্য এই মুখোশ চিরাচরিত নয়। এটি ইংরেজি ‘মাস্ক’। এই মাস্ক ব্যবহারে অনেক মানুষের আসল মুখোশটি ঢাকা থাকছে। বলা যায় মুখোশ দিয়ে মুখোশ আড়াল করা।

যাদের বিয়ে বন্ধ হয়ে আছে, সেই হতভাগারা লকডাউনকে ও ‘করোনা’কে আপদ বলে ভাবতে পারে। বেচারাদের রোমান্টিকতা, প্ল্যান–প্রোগ্রাম—সব থমকে গেছে অনিশ্চয়তায়। তবে লকডাউনের চেয়েও করোনার বিপদ নিয়েই ভাবা হচ্ছে বেশি।

অর্থাৎ কাজিকে কোনোভাবে দূরে বসিয়ে বিয়েটা পড়িয়ে নেওয়া গেলেও পরবর্তী ঘটনাগুলো তো পালন করার উপায় নেই। নবদম্পতিকে ‘পিপিই’ পরে কমপক্ষে ৩ বা ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে থাকতে হবে। তাতে বিয়ের পোশাক-আশাক সবই বিফলে যাবে করোনা ঠেকানোর নভোচরসুলভ পোশাকটির কারণে। তার চেয়েও বেকায়দার একটি দিক সঞ্চারিত থাকবে বরং কনের ভাবনায়, তা হলো সন্দেহ। না, সন্দেহবাতিকের ব্যাপার থেকে নয়, পরস্পরকে সন্দেহটা করোনাভাইরাসের ক্যারিয়ার কি না!

ব্যাপারটা বড়সড় বিপত্তিই বটে। অতএব, সুদিনের অপেক্ষায় মন শক্ত করে রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কবে নাগাদ যে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া যাবে, কে জানে?

করোনা নিয়ে আরও অনেক কিছুই ভাবার আছে। এই ভাইরাসের স্বভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে যে তারা বিনা পাসপোর্ট-ভিসায় সারা পৃথিবী ঘুরতে পারছে। তা করতে বুদ্ধি ধরেছে মানুষের হাত-নাক-চোখ দিয়ে ঢুকে প্রথমে ক্যারিয়ার বানিয়ে নেওয়া। তারপর তাদের শরীরে চেপে পুরো দুনিয়াটাকে একহাত দেখে নিতে বিদেশের পথে বেরিয়ে পড়া।

এসব ব্যাপারে বড়-ছোট, ধনী-গরিব, বড় পাওয়ার, মেজ বা ছোট পাওয়ার কিংবা পাওয়ারহীন বলে কোনো বাছবিচার বা ভয়ভীতি নেই। আবার এটাও মনে হয় যে আপাতদৃষ্টিতে সাম্যবাদে বিশ্বাসী মনে হলেও ব্যালান্স করতে গরিব দেশগুলোকেও একটু নাড়িয়ে দেখে নিচ্ছে কি না।

ধনতন্ত্রের সবচেয়ে গর্বিত দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে বেশি করে ধরতে দেখে তার পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, জার্মানি, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন ইত্যাদিকে জোরেশোরে ধরা দেখে মনে হয় চ্যালেঞ্জ দিয়ে এগিয়েছে। আর শুরুও করেছে নিজ দেশ চীনকে দিয়ে, যারা ধনে-দৌলতে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিজেদের শ্রেয় মনে করে। যুদ্ধবিগ্রহ দিয়ে যারা অন্যদের শঙ্কিত-কম্পিত রাখে, করোনাভাইরাস নেমেছে যেন তাদের দর্প চূর্ণ করতে। পৃথিবীর এ কোণ-সে কোণে যেসব যুদ্ধ চলছিল, অস্ত্রের শক্তি দেখানোর পালা চলছিল, সেসব দিব্যি বন্ধ হয়ে গেছে।

তো তারাই যখন দিশেহারা, তখন আমরা আর কত দূর সামাল দিতে পারি। এখন আমাদের দেশটিকে উঠতির দিকে হাঁটি হাঁটি পা পা এবং হামাগুড়ি ছেড়ে মাত্রই একটু এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় থাকা ভেবে ভাইরাসটি যদি কম জ্বালাতন করেই বিদায় নেয় তো রক্ষে।

বোঝাই যাচ্ছে দারুণ শক্তি নিয়ে ভাইরাসটার উদ্ভব। এটাকে বিলুপ্ত করার পন্থা কী, তা ভেবে এক্সপার্টরাও বিভ্রান্ত। পৃথিবীর মানুষ সেদিকে তাকিয়ে আছে অধীর অপেক্ষায়। ভাইরাসটি বিগ পাওয়ারদের ঘায়েল করে সুপার-ডুপার পাওয়ার হয়ে পড়ছে। তাতে অদৃশ্য ভাইরাসটির বিরুদ্ধে ওষুধযুদ্ধে লিপ্ত হওয়া ছাড়া মানুষের আর কোনো উপায় নেই।

তো, আমরাও এখন ঘরবন্দী জীবনে ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। মুঠোফোনই এখন সবার সহায়। মাঝেমধ্যে সুস্থ থাকাথাকি–জাতীয় কুশল বিনিময়টুকু অন্তত করতে পারা যায়। তাও মুঠোফোনের টাকা ফুরিয়ে গেলে বাইরে গিয়ে ফ্লেক্সি করার ঝামেলা থেকে বাঁচতে কথা–বলাবলি হয় কার্পণ্য করে। আলাপ সারতে হয় খুবই সংক্ষেপে। বেশি বলার মতো কথা অবশ্য জমাও থাকে না। কথার মধ্যে কুশল বিনিময়, অসুস্থতা বা কারও মৃত্যু নিয়ে বলাবলিটাই প্রধান এখন।

তবে ইদানীং মৃত্যুসংবাদ পেলে কথাটা অন্য রকম হয়। যেমন:

‘হ্যালো। ভালো আছেন?’

‘এই তো চলছে। ঘরবন্দী অবস্থায় যেমন থাকা, আপনারা ভালো?’

‘জি, আছি একরকম। একটা দুঃসংবাদ...অমুক মারা গেছেন সকালে।’

‘ইন্না লিল্লাহ...। হায় হায়, বলেন কী? কী হয়েছিল?’

‘জি না, অন্য কিছু না, নরমাল ডেথ। হার্ট অ্যাটাক।’

বলা বাহুল্য, ‘নরমাল’ শব্দটা মনে কেমন যেন লাঞ্ছনার মতো বাজে। মনে হয়, ‘ভাইরাসে নয়। করোনায় তো মরেনি।’

এখন সবার একটাই কামনা, কবে এই মারণ ভাইরাসকে নির্মূল করা যাবে। এ নিয়ে আমাদের বহুল প্রচলিত স্লোগানটির অনুকরণে বলা যায়, ‘এক দফা এক দাবি, করোনা তুই কবে যাবি’। এ নিয়ে আমার একটি ছড়া যুক্ত করার ইচ্ছা দমন করা গেল না।

মানুষ হওয়ার গর্বটাকে

করলি ধূলিসাৎ

সময় এলেই মারবে তোকে

করবে কুপোকাত

ও করোনা, ভাবছিস তুই

করলি বাজিমাত?

সময় এলেই বুঝবি তখন

মানুষের কী ধাত।