বড়াইয়ে দুঃখ বাড়ে

অ্যালেন শুভ্র
অ্যালেন শুভ্র

আমার ছেলেবেলা কেটেছে ঢাকা শহরে। ঢাকা আমার প্রিয় শহর। এই শহরেই আমার অনেক কিছু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে সানডে স্কুলে যেতাম। আমার প্রথম বন্ধু, প্রথম মঞ্চে অভিনয়—সবই এই আমাদের চার্চে। প্রথম বন্ধু, প্রথম চার্চের প্রিয় জায়গা—সবই আছে, কিছু কিছু পরিবর্তন হয়েছে, যেমন প্রথম বন্ধু। প্রতিবার বড়দিনে চার্চে গেলেই এখনো তাকে খুঁজি, বন্ধু তুই যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস।
তখন আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। খুব শখ করে লাল জুতার বায়না ধরি। বাবা আমাকে জুতা জোড়া কিনেও দেন। ছোটবেলায় বড়দিনের বেশ আগেই কেনাকাটা শেষ করে ফেলতাম। জুতা জোড়া এত পছন্দ হয়েছিল, প্রায় প্রতি রাতে আমি নতুন জুতা নিয়ে ঘুমাতাম। ঘটনা ঘটল বড়দিনের আগের রাতে, অর্থাৎ প্রাক-বড়দিনের অনুষ্ঠানে। আমি বাসায় জুতা রেখে মা-বাবার সঙ্গে যাই। ঠিক পরের দিন নতুন জুতা পরে যাব চার্চে, নতুন জামা, অনেক প্ল্যান। কিন্তু বাসায় এসে দেখলাম জুতা নিখোঁজ। আমার খুবই মন খারাপ। কান্নাকাটি করে আমি আর আমি নেই। মন খারাপ করে ঘুমিয়ে যাই।
সকালে বাবা আমাকে ডেকে বলল, এখনো ঘুমাচ্ছ কেন, ওঠো। ঘুম থেকে উঠেই আমরা চার্চে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। চার্চে যাওয়ার সময় বাবা আমাকে বলল, জুতা হারিয়ে গেছে বলে কি অনেক মন খারাপ? আমি কিছু না বলে বাবার দিকে তাকালাম। বাবা বলল, তুমি কি কারও কোনো ক্ষতি করেছ?
আমি অনেকক্ষণ ভেবে বললাম, কেন?
বাবা বলল, কারও ক্ষতি করলে নিজের ক্ষতি হয়। আমি সঙ্গে সঙ্গে বাবাকে পুরো ঘটনাটা খুলে বলি। আমি আমার বন্ধুর সঙ্গে খারাপ কথা বলেছি এবং আমার নতুন জুতা নিয়ে বড়াই করেছি। বাবা বলল, কেন করেছ? কিন্তু এই কথা কোনোভাবেই মানতে পারছিলাম না। বাবা বলল, তোমার এ কাজ করা ঠিক হয়নি। তোমার বন্ধু কষ্ট পেয়েছে। তোমার তার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
পুরো ঘটনাটা আমার বোঝা হয়ে গেল। আমি ঘুম থেকে উঠেই বাবাকে বললাম, আমি অন্যায় করেছি এবং আমার বন্ধুর কাছে ক্ষমা চেয়েছি। বড়দিন আমার বন্ধুর সঙ্গে কেটেছে এবং সেই লাল জুতাটা আমি ওই দিনই খুঁজে পেয়েছি। আমাদের সবার উচিত হিংসা, অহংকার, রাগ, বড়াই না করে খুব সাদা হয়ে, সুন্দর হয়ে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে বড়দিন পালন করা। বড়দিন একটি বিশেষ দিন, বিশেষভাবেই সবার বড়দিন কাটুক।
অ্যালেন শুভ্র: অভিনেতা