মাশরাফিদের রোমাঞ্চের ভারত

গত ২৫ বছর কলকাতার ইডেনে খেলা হয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। ফাইল ছবি
গত ২৫ বছর কলকাতার ইডেনে খেলা হয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। ফাইল ছবি
টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর কখনোই দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারতে যায়নি বাংলাদেশ। এবার ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভেন্যুগুলোতে খেলার হাতছানি। লিখেছেন নাইর ইকবাল

গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের সূচি যেদিন চূড়ান্ত হলো, সেদিন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের সেকি উত্তেজনা! অস্ট্রেলিয়ার যে মাঠগুলো টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর থেকেই আমাদের জন্য ছিল স্বপ্ন-মঞ্চ। সেই স্বপ্ন-মঞ্চেই ওঠার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ। দুবার অস্ট্রেলিয়া সফরে গেলেও মেলবোর্ন, ব্রিসবেনের মতো মাঠে খেলার সুযোগ হয়নি। এমসিজি, এসসিজি, ওয়াকা, গ্যাবায় খেলার সুযোগ না হলে ওটাকে আবার অস্ট্রেলিয়া সফর বলে নাকি!

গত বিশ্বকাপেই মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দুটো ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছিল বাংলাদেশের। ব্রিসবেনের গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেস্তে না গেলে সেখানেও ক্রিকেটের স্বাদ পেতেন মাশরাফি-সাকিবরা।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও মাশরাফিদের জন্য আরেক রোমাঞ্চের হাতছানি নিয়ে হাজির।
২০০০ সালে বাংলাদেশ যেদিন টেস্ট অঙ্গনে অভিষিক্ত হলো, সেদিন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। এর দেড় দশক পেরিয়ে ১৬ বছরের দিকে ছুটছে ঘড়ি। এর মধ্যে সব টেস্ট খেলুড়ে দেশেই দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলার সুযোগ পেলেও ভারতের মাটিতে আর খেলা হলো না। ভৌগোলিক দিক দিয়ে নিকটতম প্রতিবেশী, কিন্তু ঘরের পাশের নন্দন–কানন কলকাতার ইডেন গার্ডেন, বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামীতে খেলার সৌভাগ্য হয়ে উঠল না মাশরাফিদের।
ভারতের মাটিতেই কিন্তু প্রথম ওয়ানডে জয় বাংলাদেশের। ১৯৯৮ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে হায়দরাবাদের সেই ঐতিহাসিক ওয়ানডে জয়ের স্মৃতির ওপর প্রায় দেড় যুগের ধুলো। সুখস্মৃতির সেই জায়গাটাতেই তো দ্বিতীয়বার ফিরে যাওয়ার সুযোগ হয়নি বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মের কোনো ক্রিকেটারের।
যে কলকাতার মাঠে আজ থেকে ২৫ বছর আগে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ম্যাচসেরা হয়েছিলেন আতহার আলী খান, সেখানে ফিরে গিয়ে ধারাভাষ্য দেওয়ার সুযোগ হয়নি তাঁরও। আইপিএলে কলকাতার এই নন্দন-কাননে সাকিব-মাশরাফি যখন নাইট রাইডার্সদের হয়ে খেলেছেন, তখন নিশ্চয়ই তাঁদের হয়তো লাল-সবুজ জার্সি পরে খেলার স্বপ্নটাও উঁকি দিয়ে গেছে।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তাঁদের সেই স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্র।
ভারতের মাটিতে কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ না খেললেও এখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ বেশ কয়েকবারই পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৯০ এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে খেলেছিল বাংলাদেশ। চণ্ডীগড় ও কলকাতায় ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলেছিল। জাতীয় দলের নির্বাচক ফারুক আহমেদের হৃদয়ে চণ্ডীগড়ের মাঠটি আলাদা জায়গা নিয়ে রাখারই কথা। এই মাঠেই যে নিজের একমাত্র ওয়ানডে ফিফটি পাওয়া।
মাঝখানে দীর্ঘ বিরতি। ১৯৯৮ সালে ক্রিকেটের উদীয়মান দুই দেশ বাংলাদেশ ও কেনিয়াকে নিয়ে ভারত আয়োজন করল একটি ত্রিদেশীয় ওয়ানডে টুর্নামেন্ট। ‘কোকাকোলা কাপ’ নামে পরিচিত সেই প্রতিযোগিতাতেই হায়দরাবাদে কেনিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ পেয়েছিল ইতিহাসের প্রথম ওয়ানডে জয়টি।
সেই প্রতিযোগিতায় ভারতের বিপক্ষে দুটো ম্যাচ হয়েছিল মোহালি ও মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে কেনিয়ার বিপক্ষে ফিরতি লেগের ম্যাচটি হেরে যাওয়ায় সেবার ফাইনালে খেলা হয়নি বাংলাদেশের। ফাইনালে যেতে পারলে ঐতিহাসিক ইডেনে খেলার সৌভাগ্য তো হতোই। ঢাকা থেকে আকাশপথে ২৫০ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে থাকা ক্রিকেটের ঐতিহাসিক এক মাঠ। তাতে এখনো খেলার অভিজ্ঞতাই হলো না বাংলাদেশের!
২০০৬ সালে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে শেষবারের মতো ভারতের মাটিতে খেলার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। মোহালিতে শ্রীলঙ্কা, এরপর জয়পুরে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এরপর আর ভারতের মাটিতে জাতীয় দলের খেলাই হয়নি। ১০ বছর পর ভারতেই আরও একটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পা রাখা। এই দলে কেবল সাকিব আর মাশরাফিরই আছে ভারতের মাটিতে খেলার অভিজ্ঞতা।
কলকাতা কিংবা বেঙ্গালুরুর ‘আইকনিক’ স্টেডিয়ামে খেলার আগে অবশ্য একটা শর্ত পূরণের তাগাদা আছে বাংলাদেশের সামনে। সুপার টেন–এ উঠতে আগে খেলতে হবে প্রথম রাউন্ড। হিমাচল প্রদেশের ছবির মতো সুন্দর মাঠ ধর্মশালায় আইসিসির সহযোগী সদস্য তিন দেশ হল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড আর ওমানের বিপক্ষে প্রথম পর্ব খেলে গ্রুপসেরা হলেই মিলবে সেই টিকিট। কেবল তখনই আতিথ্যের ডালা সাজাবে ইডেন কিংবা চিন্নাস্বামী।
দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারলে কলকাতা ও বেঙ্গালুরুতে দুটি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ মিলবে। ইডেনে কলকাতার দর্শকদের সামনে প্রথম খেলার প্রতিক্রিয়া কী হয়, সেটিও দেখার। দুই বাংলা ভাগ হয়ে গেলেও ভাষা আর সংস্কৃতির সর্ম্পকটা তো আছেই। কলকাতার দর্শকদের জন্যও তো আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে একসঙ্গে এতগুলো বাংলা ভাষাভাষী দেখার অভিজ্ঞতাও হবে অভূতপূর্ব।
অবশ্য এই বছর আরেকটি বৃত্ত ভাঙতে যাচ্ছে। এবারই প্রথম ভারতে টেস্টও খেলবে বাংলাদেশ। একমাত্র সেই টেস্টটি ইডেনে হওয়ার সম্ভাবনা আছে। দিনক্ষণ আর ভেন্যু অবশ্য এখনো ঠিক হয়নি।
ক্রিকেটে তীর্থ বলুন কিংবা বাণিজ্যের রঙ্গশালা, ভারতে বাংলাদেশের নতুন এই পথচলা শুভ হোক!