অলিম্পিকে দেশের প্রথম সোনা, অনুভূতিটা কেমন?
‘অবশেষে ফিলিপাইন পেল অলিম্পিকের সোনা’, ‘দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান’—কাল টোকিও অলিম্পিকে ফিলিপাইন প্রথমবারের মতো সোনার পদক তুলে নিয়েছে। ভারত্তোলনের ৫৫ কেজি শ্রেণিতে হিদিলিন দিয়াজের হাত ধরে দেশটি পেয়েছে অনির্বচনী আনন্দের অনুভূতি।
অলিম্পিকে একেবারেই পদকশূন্য ছিল না ফিলিপাইন। ৯৭ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া অনুষ্ঠানের অংশ তারা। কিন্তু সোনার পদক এই প্রথম। পুরো ব্যাপারটাই ফিলিপাইনের মানুষের কাছে অন্য রকম এক অনুভূতি। সাধারণ মানুষের ভাষায় এটি যেন ‘সর্বময় ক্ষমতা পাওয়ার অনুভূতি’।
দিয়াজের এ সাফল্য অনেক কষ্টের পর। করোনায় পর্যুদস্ত দেশটিতে অলিম্পিক প্রস্তুতির সুযোগ পাননি। সুযোগ–সুবিধার অপ্রতুলতাও দেশের বাইরে যেতে বাধ্য করেছিল তাঁকে। ১৮ মাস ধরে মালয়েশিয়ায় বসে প্রস্তুতি নিয়েছেন। ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে রুপা জিতেছিলেন। কাল যখন স্ন্যাচে ৯৭ কেজি আর ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১২৭ কেজি ওজন তুলে ফেললেন, উচ্ছ্বসিত দিয়াজ দেখলেন দেশের ইতিহাসে ঢুকে গেছেন।
এযাবৎকালে অলিম্পিকে ৩টি রুপা আর ৭টি ব্রোঞ্জ জিতেছিল ফিলিপাইন। কিন্তু তাতে মন ভরছিল না দেশের মানুষের। অলিম্পিকে একটা সোনার পদকের আশায় প্রজন্মান্তরের অপেক্ষার অবসান হলো কাল। ৯৭ বছরের অপেক্ষার অবসান, সেটি তো সাধারণ কোনো বিষয় নয়।
অলিম্পিকে একটা দেশের প্রথম সোনার পদক। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান যে সোনার পদকে, তা নিয়ে গোটা ফিলিপাইন তো উদ্বেল হবেই। স্বাভাবিকভাবেই দিয়াজ কাল থেকে তাঁর জীবনে বড় পরিবর্তন দেখছেন। অলিম্পিকের পদকের স্বাদ পেয়ে গেছেন পাঁচ বছর আগেই। এবার সোনার পদকের স্বাদের কাছে সেটিকে বিশেষ কিছু হয়তো মনেই হচ্ছে না তাঁর। ফিলিপাইন বিমানবাহিনীর সদস্য দিয়াজকে এরই মধ্যে সরকার ও বেসরকারি খাত থেকে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৫ কোটি টাকার বেশি পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন।
কেবল টাকা নয়, বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠান মেগাওয়ার্ল্ড করপোরেশন তাঁকে একটি কনডোমিনিয়াম উপহার দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে। যে কনডোমিনিয়ামের মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৩ কোটি টাকা।
এ তো গেল দিয়াজের ব্যক্তিগত প্রাপ্তি। ফিলিপাইনের খেলাধুলাও এ সাফল্যে দারুণভাবে উপকৃত। এই প্রথমবারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্টের একজন মুখপাত্র স্বীকার করেছেন, ফিলিপাইনের ক্রীড়াবিদেরা কত কম সুযোগ–সুবিধার মধ্য দিয়ে অনুশীলন চালিয়ে যান, ‘দিয়াজকে এ অসামান্য অর্জনের জন্য অভিনন্দন। আমরা স্বীকার করছি, অনেক কম সুযোগ–সুবিধার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের ক্রীড়াবিদেরা অনুশীলন করেন। তাঁদের আর্থিক সুবিধাদিও যথেষ্ট অপ্রতুল। দিয়াজের সাফল্য আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা ক্রীড়াবিদদের সুযোগ–সুবিধা কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে কাজ করছি।’
অলিম্পিকের একটা সাফল্যের মূল্য অনেক বেশি।