আনন্দে ভেসে যেতে যেতেও সামনের দিকে চোখ

পুরস্কার বিতরণী শেষে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে হঠাত্ থমকে দাঁড়ালেন জেমি সিডন্স। তিনি একাই কেন হাঁটছেন...! ঘাড় ফিরিয়ে যে-ই দেখলেন খেলোয়াড়েরা সবাই সিরিজ জয়ের ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনের জন্য তৈরি হচ্ছেন, ‘ইউ টার্ন’ নিয়ে নিজেও চলে গেলেন সেখানে। শিষ দিয়ে, হাতের ইশারায় ডেকে নিলেন ফিজিও-ট্রেনারদেরও।রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে বাংলাদেশের ১ উইকেটের জয় আনন্দে ভাসায়নি, এমন লোক কাল জিম্বাবুয়ে দলের ড্রেসিংরুম ছাড়া আর কোথাও ছিল না। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামে যে আনন্দের ঢেউ আছড়ে পড়ল, তাতে সবচেয়ে বেশি ভেজার কথা ওই সিডন্সেরই। শেষ ম্যাচে যেসব অতৃপ্তি পুষিয়ে নেওয়ার কথা আগের দিন বলেছিলেন, নাঈম ইসলামের দারুণ এক ইনিংস এল তারই অন্যতম স্মারক হয়ে।ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে তবু যেন একটু অতৃপ্তি ঝরে পড়ল ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কণ্ঠে, ‘আমাদের টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের আরও সচেতন হওয়া উচিত...।’ ব্যাটসম্যানদের সমালোচনায় সাকিবকে সাময়িকভাবে আর বাড়তে দেয়নি নাঈমের অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংসটাই, ‘... অনেক সময় দলকে সাত-আট নম্বর ব্যাটসম্যানের ওপরও নির্ভর করতে হয়। আমরা জানি, টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা কিছু করতে না পারলেও এমন কেউ আছে, যে ম্যাচ জেতাতে পারে—এ কারণেই আমাদের দলটা এখন এত ব্যালান্সড। এর আগে রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ) ওয়েস্ট ইন্ডিজে একটা ম্যাচ জিতিয়েছেন। আজ নাঈম ভাই জেতালেন...।’ব্রেন্ডন টেলর সেঞ্চুরি করেছেন, নাঈম খেলেছেন ম্যাচ জেতানো ইনিংস। এই দুই ব্যাটের নিচে চাপা পড়ে গেছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামের উইকেট বিতর্ক। আর কাল সাকিব তো বলেই দিলেন, ‘সকালে একটু ময়েশ্চার থাকলেও উইকেট অনেক ভালো ছিল।’ জয়ের দিনে ব্যর্থতার কথা বলতে নেই। তার পরও প্রতিপক্ষ যখন জিম্বাবুয়ে, তখন তো আর সব ব্যর্থতা ভুলেও থাকা যায় না। সংবাদ সম্মেলনে তাই সঙ্গত কারণেই উঠল সিরিজের পাঁচ ম্যাচেই ওপেনার জুনায়েদ ইমরোজের ব্যর্থতার প্রসঙ্গ। সাকিব জুনায়েদের জন্য ঢাল বানালেন উইনিং কম্বিনেশন না ভাঙার দলীয় নীতিটাকে, ‘পাঁচটা ম্যাচেই ভালো শুরু করেছিলেন উনি। ব্যাটিংয়ের সময় ভালোই করেন সবকিছু, কিন্তু হঠাত্ একটা শটে আউট হয়ে যান। তবে আমরা উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে চাইনি। আর আমাদের মনে হয়েছিল, ওনার বড় স্কোর করার সামর্থ্য আছে।’উল্টো এক কারণে সাকিবকে আলাদা করে বলতে হয়েছে আবদুর রাজ্জাকের কথাও। পাঁচ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য সিরিজ বাংলাদেশের এই বাঁহাতি স্পিনার। ম্যাচ শেষে সাকিব বললেন রাজ্জাকের ওপর তাঁর আস্থার কথা, ‘আমি শুরু থেকেই রাজ ভাইয়ের (রাজ্জাক) সঙ্গে খেলছি। ওনার ওপর আমার আলাদা বিশ্বাস আছে। নিজেদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া আছে আমাদের। বোলিংয়ের সময় নিজেরা অনেক কথাও বলি। আজ এটা করা যাবে, ওটা হচ্ছে না... সেসব অনেক সময় কাজেও লেগে যায়।’ বোলিং অ্যাকশন আর ইনজুরি কাটিয়ে রাজ্জাক এই সিরিজে যেন নতুন করে মেলে ধরলেন নিজেকে। তাই বলে এখনই খুব বড় কোনো লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছেন না তিনি, ‘আমি আসলে একসঙ্গে পুরো ক্যারিয়ার নিয়ে কখনোই ভাবি না। ছোট ছোট চিন্তা করে এগোই। ঢাকা লিগে খেলব, সেখানে ভালো খেলতে হবে। এই সিরিজে কিছু ভুল হয়েছে, সেগুলোও কাটিয়ে উঠতে হবে।’শুধু রাজ্জাক নন, আগামী বছরের ব্যস্ত সূচির কথা মাথায় রেখে প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের জন্য দলের সবাইকেই একটা ‘কমন প্রেসক্রিপশন’ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক সাকিব, ‘এ বছর দল হিসেবে আমরা খুবই ভালো খেলছি। এখন থেকে আর পেছনে দেখার সময় নেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে যার যেখানে সমস্যা আছে, সবাই সেখানে কাজ করবে। ভারত-শ্রীলঙ্কা কঠিন প্রতিপক্ষ। তাদের বিপক্ষে কোনো ভুল করা যাবে না।’সিরিজের শেষ ম্যাচে ঠিক এই প্রতিজ্ঞাটাই ছিল জিম্বাবুয়ের সহ-অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজার। শেষ পর্যন্ত তাঁর জুটল হতাশা, ‘আত্মবিশ্বাসী ছিলাম...এই উইকেটে ২২০ রান জেতার মতো স্কোর। বাংলাদেশের ইনিংসটা আমাদের আরও ২০-৩০ রান আগেই শেষ করে দেওয়া উচিত ছিল।’ হতাশাটা সবচেয়ে বেশি সম্ভবত ব্রেন্ডন টেলরেরই। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেও পেতে হলো পরাজয়ের বিস্বাদ। তবে সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। পরাজয়-হতাশা এসবের মধ্যে থেকেও তাই সেই সিরিজের জন্য ইতিবাচকতার সন্ধান করলেন তিনি, ‘হেরে যাওয়ায় হতাশ তো অবশ্যই। তবে ৮০ রানের মধ্যে তিন-চার উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ওই সেঞ্চুরি করেছি, দলকে ভালো একটা জায়গায় নিয়েছি, সে জন্য ভালোও লাগছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার আগে এটাকে ইতিবাচকই বলব আমি।’