আমার নামে মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে: মেসি
তাঁর বিদায়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরের দিন বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিত করেছিলেন, লিওনেল মেসির বার্সা ছাড়ার পেছনে দায়টা আগের বোর্ডের। লাপোর্তা বলেছিলেন, স্প্যানিশ লা লিগার অনমনীয় মনোভাবের কথাও।
আজ যখন লিওনেল মেসি বার্সেলোনার নিজের বিদায়ী সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন মেসি বুঝি বার্সার সাবেক সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউকে ধুয়েই দেবেন। লিগের সভাপতি হাভিয়ের তেবাসকে নিয়েও কিছু বলতে পারেন, এমনও ভেবেছিলেন অনেকে। এমনকি বার্সার বর্তমান সভাপতি হোয়ান লাপোর্তার সঙ্গে তাঁর কোনো ঝামেলা হয়েছে কি না, এ নিয়েও সংশয় ছিল অনেকের। তেমন কিছু থাকলে মেসি তা-ও বলবেন, ধারণা এমনই ছিল।
কিন্তু কিছুই হলো না। বার্সা থেকে বিদায়বেলায় মেসির সংবাদ সম্মেলনে কোনো বিতর্কই থাকল না। তেবাসের সঙ্গে তাঁর যে অল্প কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়েছে সেগুলোকে বন্ধুত্বপূর্ণ বলে জানালেন মেসি। লাপোর্তা ও বার্সা তাঁকে ধরে রাখতে চেষ্টা কম করেনি বলেও জানালেন। আর তাঁর সঙ্গে কেউ প্রতারণা করেছে কি না, প্রশ্নে মেসি সরাসরিই বলে দিলেন ‘না।’ তবে তাঁকে নিয়ে অনেক মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
বার্তোমেউর অধীন আগের বোর্ডের ওপর মেসি যে বিরক্ত ছিলেন, সে আর এখন গোপন কিছু নয়। গত বছরের আগস্টে তাই বার্সা ছাড়তে চেয়ে ক্লাবে বুরোফ্যাক্সও পাঠিয়েছিলেন মেসি। আইনি জটিলতায় তখন ক্লাব ছাড়তে পারেননি। আজ সংবাদ সম্মেলনে মেসিই বলেন, ‘গত বছর (ক্লাবে থাকতে) চাইনি, সেটা বলেছিও। এ বছর আমি থাকতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি।’ তখনো ধারণা করা যাচ্ছিল, বার্তোমেউর বোর্ডের অপরিণামদর্শী পরিচালন পদ্ধতির ব্যাপারে আরও খোলাসা করেই কিছু বলবেন মেসি।
কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে যখন প্রশ্ন হলো, আগের বোর্ডের সভাপতি বার্তোমেউ, কিংবা বর্তমান বোর্ডের সভাপতি লাপোর্তা, কেউ তাঁর সঙ্গে কোনো প্রতারণা করেছেন কি না, মিথ্যা বলেছেন কি না, মেসি বিদায়বেলায় বিতর্ক ছড়ানো থেকে বিরত থাকলেন, ‘না (কেউ প্রতারণা করেনি)। আমরা সম্ভাব্য সবকিছুই করেছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত চেষ্টায় সফলতা এল না। আপনি যখন নিয়মিত কথা না বলবেন, আপনার ব্যাপারে অনেক কিছুই বলা হবে। কিন্তু সেসবের সবকিছু সব সময় সত্যি হয় না। আমি শুধু আমার দিক থেকে কী হয়েছে সেটা বলতে পারি। আমি সব সময় সৎ থেকেছি, কাউকে ধোঁকা দিইনি। এটা আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল’— বলেছেন মেসি।
তবে তিনি নিয়মিত কথা বলেন না বলে সেটির সুযোগ নিয়ে তাঁর ব্যাপারে মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে বলেও জানিয়ে দিলেন মেসি, ‘আমি বেতন ৫০ শতাংশ কমাতে রাজি হয়েছি, সেটা নিয়ে দুই পক্ষের সম্মতি হয়েছে, এরপর তারা (বার্সা) আমার কাছে আরও কিছুর দাবি করেনি। অনেক কিছুই এখন (সংবাদমাধ্যমে) বলা হচ্ছে যেগুলো সত্যি নয়।’
বার্সার সঙ্গে চুক্তি নবায়নে মেসির দিক থেকে বেতন অর্ধেক কমানো ছাড়া আরও কিছু করা সম্ভব ছিল কি না, এ নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা চলছিল দুদিন ধরে। সে প্রশ্নে মেসি বলেন, ‘আগেও বলেছি, আমি থাকার জন্য যা করা সম্ভব সব করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হলো না।’
লিগের সভাপতি হাভিয়ের তেবাসের জেদের কারণেই মেসিকে বার্সা ছাড়তে হচ্ছে, এমন একটা কথা শোনা যায় ইউরোপে। অনেকের মতে, করোনার এই সময়ে তেবাস চাইলে বেতনের সীমা বাড়িয়ে দিতে পারতেন, গত বছরও বার্সাকে সে সুবিধা দিয়েছিলেন তিনি। মেসির মতো একজন খেলোয়াড়কে হারানো যেখানে লিগ নিয়ে আকর্ষণ কমিয়ে দেবে, সেখানে তেবাস বার্সার বেতনের সীমা বাড়িয়ে মেসিকে নিবন্ধনের সুযোগ করে দিলে তাতে স্প্যানিশ লিগেরই লাভ হতো—এমনই যুক্তি অনেকের। সে কারণে তাঁর বার্সা ছাড়ার পেছনে তেবাসের ভূমিকা নিয়ে কোনো ক্ষোভ আছে কি না, এমন প্রশ্ন আজ হয়েছিল মেসির সংবাদ সম্মেলনে।
তবে মেসি তেবাসকে নিয়ে নেতিবাচক কিছু বলেননি, ‘আমি শুধু জানি লা লিগার কারণে এটা (তাঁর বার্সায় থাকা) সম্ভব হয়নি। ক্লাবের দেনাও বেশি হয়ে গিয়েছিল। ক্লাবের পক্ষে দেনা আর বাড়ানো সম্ভব নয়। তেবাসের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই, তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছেই মাত্র কয়েকবার। প্রতিবারই আলোচনাগুলো বন্ধুত্বপূর্ণই ছিল। তেবাসের সঙ্গে আমার কোনো বিবাদ নেই।’