নাটকের পর সৌম্যদের সামনে সিলেটের আত্মসমর্পণ
শেষ ওভারে সিলেট সানরাইজার্সের প্রয়োজন ছিল ৩৬ রান। ‘মরা’ ম্যাচটাতে হুট করেই প্রাণ ফেরালেন আলাউদ্দিন বাবু, প্রথম ৩ বলে কামরুল ইসলামকে ৩ ছয় মেরে। কিন্তু চতুর্থ বলে ১ রানের বেশি নিতে পারলেন না, রোমাঞ্চ মিলিয়ে গেল তাতেই। অধিনায়ক-নাটক, বল টেম্পারিং বিতর্কের ম্যাচের শেষটা তাই জমল না শেষ পর্যন্ত। সৌম্য সরকারের ৬২ বলে ৮২, মুশফিকুর রহিমের ৩৮ বলে ৬২ রানের ইনিংসে খুলনা টাইগার্স তোলে ১৮২ রান। এর মধ্যে ৫ রান এসেছে পেনাল্টির সুবাদে।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রাতে শিশিরের প্রভাব ছিল স্পষ্ট, তবে সেটির কোনো সুবিধা আদায় করতে পারেনি সিলেট। ১৬৭ রানেই থেমে ১৫ রানে হেরেছে তারা, বোলিংয়ে ২ উইকেট নিয়ে দারুণ এক দিন কাটিয়েছেন সৌম্য। ৭ ম্যাচ শেষে একটি জয়, কার্যত প্লে-অফের আশা প্রায় শেষই হয়ে গেল সিলেটের। অন্যদিকে ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে মিনিস্টার ঢাকাকে টপকে তিনে উঠে এসেছে মুশফিকের খুলনা।
ম্যাচ শুরুর আগেই হয়েছে নাটক। হুট করেই বদলে ফেলা হয় সিলেটের অধিনায়ক, মোসাদ্দেক হোসেনের বদলে টস করতে নামেন রবি বোপারা। সেই বোপারার বল টেম্পারিং কাণ্ডেই সিলেট পরে গুনল পেনাল্টি। দিনটা সিলেটের হচ্ছে না, হয়তো এ সবই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল সেটির। অথচ টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়ে শুরুটা আশাজাগানিয়াই হয়েছিল তাদের, খুলনা প্রথম ওভারেই হারায় ২ উইকেট। পাওয়ারপ্লেতে ৪৬ রান উঠলেও ষষ্ঠ ওভারে গিয়ে ফেরেন ১৮ বলে ২৩ রান করা ইয়াসির আলী। ইয়াসিরকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন বিপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা ডানহাতি পেসার এ কে এস স্বাধীন।
এরপরই সিলেট পিষ্ট হয় সৌম্য ও মুশফিকের জুটিতে। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ওঠে ১৩১ রান, সঙ্গে ৫ রানের পেনাল্টি। বিপিএলের এ মৌসুমে চতুর্থ উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ জুটি, যেকোনো উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ। মৌসুমে সিলেটের সবচেয়ে সফল বোলার বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলামকে এদিন বোলিং-ই করানো হয়নি, যদিও ফিল্ডিং করেছেন তিনি।
সৌম্য-মুশফিকের জুটিতে প্রথম ৩ ওভার আসেনি কোনো বাউন্ডারি। তবে নবম ওভারে প্রথমবার বোলিং করতে এসেই বল টেম্পারিং বিতর্কে জড়ান রবি বোপারা, টেলিভিশনের ফুটেজে আঙুল দিয়ে বল খোঁচাতে দেখা যায় তাঁকে। আম্পায়াররা বল বদলান, ৫ রান পেনাল্টি দেওয়া হয় খুলনাকে। দশম ওভারে মোসাদ্দেকের কাছ থেকে ১২ রান তোলেন মুশফিক-সৌম্য। পরের ২ ওভারে ১২ রান ওঠে, তবে মুশফিক-সৌম্য চড়াও হন এর পর থেকেই।
প্রথম ৩৮ বলে ৪০ রান করা সৌম্য ছন্দ বদলান বোপারাকে ছয় মেরে। প্রথম ৩ ম্যাচে ১৪ রান করা সৌম্য এর আগের ম্যাচে করেছিলেন ৩১ বলে ৪৩। আজ পেলেন মৌসুমের প্রথমের অর্ধশতক। ৪৩ বলে অর্ধশতক পান, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৬২ বলে ৮২ রান করে। ইনিংসে এ বাঁহাতি মারেন ৪টি করে চার ও ছয়। প্রথম ১৮ বলে ১৭ রান করা মুশফিকও আগ্রাসনের শুরুটা দেখান আলাউদ্দিন বাবুকে ছয়ের পর চার মেরে। ৩২ বলে অর্ধশতক পান খুলনা অধিনায়ক, ৩৮ বলে ৬২ রানের ইনিংসে মারেন ৬টি চার ও ২টি ছয়। প্রথম ১২ ওভারে ৯১ রান তোলা খুলনা শেষ ৮ ওভারেই তোলে ৯১ রান।
রান তাড়ায় সিলেটের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান লেন্ডল সিমন্স ভুগেছেন। পাওয়ারপ্লের শেষ বলে গিয়ে নাবিল সামাদের বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে করেছেন ১৭ বলে ১০ রান। এরপরও প্রথম ৬ ওভারে ৪১ রান উঠেছিল এনামুল হকের দ্রুতগতির ব্যাটিংয়ে। সপ্তম ওভারে মেহেদী হাসানকে এনামুলের মারা দুই ছয়ের পর মনে হচ্ছিল, ছেড়ে কথা বলবে না সিলেট। এরপর অবশ্য এনামুল মিইয়ে গেলেন, প্রথম ২২ বলে ৪২ রান করেছিলেন, পরের ১১ বলে করেছেন মাত্র ৫ রান। এনামুল আউট হওয়ার পর ৩ বলের ব্যবধানে মোহাম্মদ মিঠুন ও বোপারাকেও হারিয়ে ফেলে সিলেট।
একদিকে কলিন ইনগ্রাম টিকে ছিলেন, তবে সেভাবে হাত খুলতে পারেননি। ২৮ বলে ৩৭ রান করে যখন আউট হলেন, সিলেটের প্রয়োজনীয় রানরেট তখন ১৮-এর ওপরে। শেষদিকে আলাউদ্দিনের ওই ৩ ছয়ের সঙ্গে ২২ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন মোসাদ্দেক। তবে যথেষ্ট হয়নি সেসব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১৮২/৩ (সৌম্য ৮২*, মুশফিক ৬২*; সোহাগ ১/২৭, স্বাধীন ১/৩৩)
সিলেট সানরাইজার্স: ২০ ওভারে ১৬৭/৬ (এনামুল ৪৭, মোসাদ্দেক ৩৯*, ইনগ্রাম ২৫, আলাউদ্দিন ২৫*; পেরেরা ২/২৩, সৌম্য ২/২৭, নাবিল ১/২৭, খালেদ ১/২৯)
ফল: খুলনা ১৫ রানে জয়ী