নাটের গুরু মেসি!

জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, লিওনেল মেসি
জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, লিওনেল মেসি

২০০৯ সালের শরতের দিন। খেলা শেষে বার্সেলোনা দল ফিরছিল টিম বাসে। পেপ গার্দিওলার মুঠোফোনটা একটু কেঁপে উঠল। পকেট থেকে বের করে দেখলেন একটা খুদে বার্তা এসেছে তাঁর কাছে। পড়তে পড়তেই কুঁচকে গেল ভুরু, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি দলে আমার আর প্রয়োজন নেই, সুতরাং...’। প্রেরক কে জানেন? লিওনেল মেসি! পেছনের সিটে বসে কোচকে এই বার্তাটা পাঠিয়েছিলেন মেসি। যেন প্রচ্ছন্ন একটা হুমকিরই সুর।
ইদানীং লিওনেল মেসির নামটা প্রায়ই একটু ‘অন্যভাবে’ চলে আসছে শিরোনামে। কর ফাঁকির কেলেঙ্কারি তো এখনো টাটকা। সেটা না হয় স্পেনে অত বড় করে দেখা হয় না, কিন্তু কোচকে অপমান করা তো উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। কদিন আগেই শিরোনাম হলো, মেসি নাকি গার্দিওলাকে একসময় সেটাই করেছিলেন! সবার চেনা ‘সুবোধ বালক’ মেসির সঙ্গে যেন ঠিক মেলানো যাচ্ছে না।
হঠাৎ পুরোনো কাসুন্দি ঘাঁটা কেন? পুরো কাহিনিটা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে আরেকটু পেছনে।
২৭ জুন, ২০০৯। বার্সেলোনা ঘোষণা করল জ্লাতান ইব্রামোভিচ আসছেন ন্যু ক্যাম্পে। দামটাও মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতোই, ৬ কোটি ৬০ লাখ ইউরো! মেসি ও ইব্রা—বার্সেলোনা রোমাঞ্চিত হয়েছিল দুর্দান্ত এক যুগলবন্দীর সম্ভাবনায়।
কিন্তু সেটা টিকেছে মাত্র এক মৌসুম। ইব্রা ক্লাব ছেড়ে দিয়েছেন পরের বছরেই। ২৯ ম্যাচে ১৬ গোল, খুব একটা খারাপ বলা যাবে না। তার মানে কি অন্দরমহলের কোনো কারণেই চলে যান ইব্রা? পরে গার্দিওলাকে সুযোগ পেলেই খোঁচা মেরে পুরোনো ঝালটা মেটাতেন। বোঝাই যাচ্ছিল, বার্সেলোনায় কিছু কিছু ক্ষত তখনো দগদগে হয়ে আছে ইব্রার মনে।
কিন্তু জার্মান সাপ্তাহিক ডার স্পিগেলকে সম্প্রতি ইব্রা যা বললেন, সেটা আগের সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গেল। ‘সে (গার্দিওলা) কোচ হিসেবে দারুণ। তবে ও একটা কাপুরুষ’ জাতীয় কথা তো একরকম সরাসরি আক্রমণই! চলে এসেছে মেসির নামও, ‘প্রথম কয়েক মাস বার্সেলোনায় সবকিছু খুব ভালোই চলছিল। আমি অনেক গোল করছিলাম। কিন্তু এরপরই মেসির জন্য আমাকে বসিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেটা আমাকে বলার সাহসও ওর ছিল না।’ ইব্রার দাবি, মেসি নিজের পছন্দের পজিশন সেন্ট্রাল স্ট্রাইকারে খেলতে চেয়েছিলেন। সে জন্যই ইব্রাকে চলে যেতে হয় বেঞ্চে।
শুরুর ঘটনাটার সঙ্গে এবার মিল খুঁজে পাচ্ছেন না?

পেপ গার্দিওলা
পেপ গার্দিওলা


কিন্তু এ ঘটনা এত দিন পর আলোর মুখ দেখল কীভাবে? ইব্রার তো সেটা জানার কথা নয়। এই বোমাটা ফাটিয়েছেন দুই সাংবাদিক সেবাস্তিয়ান ফেস্ত ও আলেকজান্ডার জুলিগার। তাঁরা দুজন মিলে দ্য মিস্ট্রি অব মেসি (মেসির রহস্য) নামে একটা বই লিখেছেন। ‘এল শকস্’ নামে সেটির প্রথম পরিচ্ছেদেই আছে খুদে বার্তার ঘটনাটা। শুরুতেই এমন, না জানি পুরো বইতে কী আছে!
সেটা জানা যাবে সময় হলেই। তবে ‘বার্সা-লিকস’ ফাঁস করার জন্য ইব্রা যদি শুধু হাততালিই পাওয়ার আশা করেন, তাহলে ভুল করেছেন। গার্দিওলা কিছু বলেননি বটে, কিন্তু বায়ার্ন সভাপতি উলি হোনেস পাটকেল ছুড়েছেন। তাঁর মতে, ‘আমরা ইব্রাহিমোভিচের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করছি। আমার মনে হয় সে একজন হতাশ, ব্যর্থ লোক। কোনো ক্লাবেই সে সুখী হতে পারেনি। সে যে অনেক ক্লাবে ব্যর্থ হয়েছে, সেটাই সে আড়াল করতে চায়।’ এএফপি, ওয়েবসাইট।
দেখা যাক, ইব্রা এবার কী বলেন!