‘নিলামে অবিক্রীত’ পাতিদার-ঝড়ে কোয়ালিফায়ারে বেঙ্গালুরু, রাহুলদের বিদায়

৫৪ বলে ১১২ রানের ইনিংস খেলেছেন রজত পাতিদারআইপিএল

হার্শাল প্যাটেলের পঞ্চম বলটা ডট হয়ে যাওয়ার পরই উল্লাস শুরু করে দিলেন বাউন্ডারিতে থাকা বিরাট কোহলি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে যাওয়া আরেকটু নিশ্চিত হলো তখন। অবশ্য এ ম্যাচে কোহলির ওই উদ্‌যাপনের উপলক্ষ এনে দেওয়ার মূল নায়কের নাম রজত পাতিদার। সেই পাতিদার, এবারের নিলামে যিনি অবিক্রীত ছিলেন। মৌসুম শুরুর পর চোটের বদলি হিসেবে সুযোগ পান। অথচ এলিমিনেটর ম্যাচে বেঙ্গালুরুর নায়ক বনে গেলেন তিনিই।

কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে পাতিদারের ৫৪ বলে ১১২ রানের অপরাজিত ইনিংসে ২০৭ রান তোলা বেঙ্গালুরুকে টপকে যেতে পারল না আইপিএলের নতুন দল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রান তুলতেই আটকে গেল তারা। ১৪ রানে হেরে এলিমিনেটরেই থামল তাদের প্রথম মৌসুম। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে এখন রাজস্থান রয়্যালসের মুখোমুখি হবে বেঙ্গালুরু, সে ম্যাচে জেতা দল যাবে ফাইনালে। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ গুজরাট টাইটানস।

বৃষ্টির কারণে প্রায় ৪০ মিনিট দেরিতে খেলা শুরু হলেও ওভার কাটা যায়নি কোনো। ম্যাচের প্রথম ওভারে মহসিন খানের বলে অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি কট বিহাইন্ড হলে প্রথম ধাক্কা খায় টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বেঙ্গালুরু। রজত পাতিদার অবশ্য ঝড় শুরু করেন, প্রথম ৬ ওভারে বেঙ্গালুরু তোলে ৫২ রান। পাতিদারকে সঙ্গ দিয়েছেন কোহলি, দুজনের জুটিতে ৪৬ বলে উঠেছে ৬৬ রান। তবে কোহলি ঠিক নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি, ২৪ বলে ২৫ রান করে আবেশ খানের শর্ট বলে ক্যাচ দেন থার্ডম্যানে।

৪৯ বলে শতক পূর্ণ করেন পাতিদার
আইপিএল

১০ বলে ৯ রান করে ক্রুনাল পান্ডিয়ার বলে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ৯ বলে ১৪ রান করা মহীপাল লমরোর রবি বিষ্ণয়ের শিকার। পাতিদার থামেননি তাতেও। ২৮ বলে পেয়ে যান অর্ধশতক। এরপর পাশে পান কার্তিককে, সঙ্গে ভাগ্যকেও। ৭২ ও ৯৫ রানে ক্যাচ তুলেও বাঁচেন তিনি। তবে ভাগ্যের সদ্ব্যবহার করতে ভুল হয়নি তাঁর।

৪৯ বলে পেয়ে যান টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম শতক। সেটিও দারুণ স্টাইলে, মহসিনকে মিড উইকেট দিয়ে ছয় মেরে। এর আগেই ১৬তম ওভারে রবি বিষ্ণয়ের কাছ থেকে তোলেন ২৭ রান। শেষ ৫ ওভারে বেঙ্গালুরু তোলে ৮৪ রান। দিনেশ কার্তিক অপরাজিত থাকেন ২৩ বলে ৩৭ রান করে। ভাগ্যের ছোঁয়া পান তিনিও—২ রানে ক্যাচ ফেলেন লোকেশ রাহুল, বার দুয়েক বেঁচে যান রিভিউয়ে আম্পায়ারস কল হওয়ায়। তবে সেসব ছাপিয়ে পাতিদারের সঙ্গে কার্তিকের জুটিতে ওঠে ৪১ বলে ৯২ রান।

লক্ষ্ণৌর রান তাড়ায় প্রথম ওভারে কুইন্টন ডি কক ফেরেন মোহাম্মদ সিরাজকে তুলে মারতে গিয়ে ফাফ ডু প্লেসির হাতে। গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন মনন বোহরা, তবে ১১ বলে ১৯ রান করে জশ হ্যাজলউডের বলে ক্যাচ তোলেন তিনি। ২ উইকেট হারালেও পাওয়ারপ্লেতে লক্ষ্ণৌ তোলে ৬২ রান, পঞ্চম ও ষষ্ঠ ওভারে ওঠে ৩১ রান। লোকেশ রাহুল ও দীপক হুদার জুটি টানে লক্ষ্ণৌকে, খেলা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার দিকে মনোযোগ ছিল তাঁদের। ১০ বলে ১৭ রানের সময় হুদার বেশ কঠিন ক্যাচের সুযোগ যায় হাসারাঙ্গার কাছে, সেটি শেষ পর্যন্ত নিতে না পারলেও দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে ছয় হতে দেননি তিনি। ইনিংসজুড়েই হাসারাঙ্গা ফিল্ডিংয়ে ছিলেন দুর্দান্ত।

পাতিদার ও কার্তিক শেষ ৫ ওভারে তোলেন ৮৪ রান
আইপিএল

রাহুল ও হুদার জুটিতে ৬১ বলে ওঠে ৯৬ রান। ১৪তম ওভার থেকে গিয়ার বদলানো শুরু করেন তাঁরা। অবশ্য ১৫তম ওভারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ৩ বলে ২ ছয়ের পর ক্যাচ দেন হুদা, ২৬ বলে ৪৫ রান করার পর। নামার পর দ্বিতীয় বলে ছয় মেরেছিলেন মার্কাস স্টয়নিস, তবে এর বেশি কিছু করতে পারেননি। ৯ বলে ৯ রান করে হার্শাল প্যাটেলের শিকার হন তিনি।

শেষ ৫ ওভারে লক্ষ্ণৌর প্রয়োজন ছিল ৬৫ রান, সে লক্ষ্যে শেষ ২ ওভারে আসে ৩৩ রানে। লক্ষ্ণৌর তখনো কোনো আশা থেকে থাকলেও ১৯তম ওভারে জশ হ্যাজলউড শেষ করে দেন সেসব—রাহুল ও ক্রুনাল পান্ডিয়াকে ফেরান পরপর ২ বলে। ৫৮ বলে ৭৯ রান করেন রাহুল, তবে দলকে কোয়ালিফায়ারে নিয়ে যেতে যথেষ্ট হয়নি তা।