প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের পেসারদের বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন ডোনাল্ড। বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে পেসারদের পারফরম্যান্স আরও ভালো ছিল বলে মনে করেন তিনি। আগের ম্যাচের বোলিং নিয়ে প্রশংসা করতে করতেই পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের সাফল্যের মন্ত্রের কথা বলেছেন ডোনাল্ড, ‘(প্রথম টেস্টে) আমরা একটা দল হিসেবে বোলিং করেছি। রানরেট দ্রুতই কমিয়ে আনতে পেরেছি। দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের ২৭৩ রানে বেধে ফেলতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়েছি। আমি পেসারদের নিয়ে বেশ গর্বিত। পুরো দিন বোলিং করে চাপ ধরে রেখেছে তারা। আমার মনে হয়, সেন্ট জর্জেস পার্কেও সাফল্যের মূলমন্ত্র একই থাকবে।’
পোর্ট এলিজাবেথের এ মাঠটি দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে পুরোনো টেস্ট ভেন্যু। ১৮৮৯ সালে এখানেই নিজেদের প্রথম টেস্ট খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেন্ট জর্জেস পার্কের সঙ্গে যেমন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর স্মৃতি জড়িত, তেমনি এখানে এসে পুরোনো দিনে ফিরে গেলেন ডোনাল্ডও, ‘ঐতিহ্যবাহী অসাধারণ এক টেস্ট ভেন্যু এটি। এখানকার দর্শকদের সামনে খেলতে ভালোবাসতাম আমি। দর্শকদের অনেক আওয়াজ থাকে, অনেক দলের বিপক্ষেই দারুণ স্মৃতি আছে আমার। ব্যাটসম্যান বা বোলার হিসেবে এ উইকেটে সব সময়ই কিছু পাওয়ার থাকবে আপনার। সব সময়ই কিছু না কিছু ঘটে এখানে।’
ডারবানের কিংসমিডের মতো পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জেস পার্কেও স্পিনের ভূমিকা থাকবে, মনে করিয়ে দিয়েছেন ডমিঙ্গো। আর ডোনাল্ড বলছেন, এ মাঠে ব্যাটসম্যান, বোলার—সবার জন্যই কিছু না কিছু থাকবে। তবে ডমিঙ্গো বা ডোনাল্ড—দুজনের কথাতেই বারবার এসেছে এ মাঠে বাতাসের প্রভাবের কথা। ডোনাল্ড আরেকটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ২টার মধ্যে স্কোরবোর্ডের ওপর দিয়ে বাতাসটা আসা শুরু করে। বিকেলের দিকে তো ঘণ্টায় ৪০-৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি থাকে। স্কোরবোর্ডের দিক থেকে এমনভাবে বাতাস আসে, মনে হয় একটা সুরঙ্গমুখ এটি, কাঁপতে থাকে। বোলার হিসেবে মনে হবে, বাতাস আপনার পক্ষে। একটু পরই মনে হবে, এর বিপরীতে বোলিং করতে হচ্ছে।’
পোর্ট এলিজাবেথে সফল হতে কী করতে হবে, এ মাঠে ৭ ম্যাচে ৪০ উইকেট নেওয়া ডোনাল্ড জানিয়েছেন সেটিও, ‘এ মাঠে আপনাকে একটু সৃষ্টিশীল হতে হবে। ম্যাচ গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উইকেট ফ্ল্যাট হতে থাকে। ফাস্ট বোলার হিসেবে আপনার কাছে সব সময়ই কোনো না কোনো অস্ত্র থাকতে হবে। সাহসী হয়ে এগিয়ে আসতে হবে, ভিন্ন কিছু করতে হবে। কয়েক বছর আগে ডেল স্টেইন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দেখিয়েছিল, এখানেও উইকেট নেওয়া যায়। বিশেষ করে বল যখন রিভার্স সুইং করা শুরু করে। আবার এ মাঠের ইতিহাস দেখলেই বুঝবেন, থিতু হলে বড় শতকও পেতে পারেন ব্যাটসম্যানরা।’ এ মাঠে এখন পর্যন্ত হয়েছে ৩১টি টেস্ট, ড্র হয়েছে মাত্র ৫টি। ২৬ ম্যাচে ৩৯টি শতক এসেছে, ৫ বা এর বেশি উইকেটের ঘটনা আছে ৩৫টি।
ডারবানে প্রথম টেস্টে সাইটস্ক্রিন বিগড়ে যাওয়াতে প্রথম দিনই খেলা শুরু হয়েছিল প্রায় ৩৫ মিনিট দেরিতে। টসে জিতে বোলিং নেওয়ার পর কন্ডিশনের সুবিধা আদায় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে গিয়েছিল, টিম ম্যানেজমেন্ট এটি বলেছিল সরাসরি। যদিও প্রথম সেশনে ঠিক লেংথে বল করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বাংলাদেশের পেসাররা। অবশ্য এরপর ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। তবে সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পেসাররা প্রথম টেস্টের পারফরম্যান্স নিয়ে গর্বিত হতেই পারেন, বলছেন ডোনাল্ড। পেসারদের পারফরম্যান্সে গর্বিত তিনি নিজেও।
প্রথম টেস্টে চোটের কারণে খেলতে পারেননি বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলাম। কাঁধের চোটের কারণে দ্বিতীয় টেস্টের আগে শরীফুলের সঙ্গে দেশে ফিরে এসেছেন তাসকিন আহমেদও। অবশ্য প্রথম টেস্টে তাসকিনের সঙ্গে খালেদ আহমেদ ও ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গড়া পেস আক্রমণের প্রশংসা এভাবে করলেন ডোনাল্ড, ‘প্রথম টেস্টে যেভাবে বোলিং করেছে, তাতে বাংলাদেশ পেসাররা নিজেদের নিয়ে গর্ব করতেই পারে। তাদের দ্রুতই কাজ শুরু করে দিতে হয়েছিল। একটু ধাতস্থ হয়ে নেওয়ার পর দারুণ করেছে তারা। আমরা জুটি গড়ে বোলিংয়ের কথা বলেছি। বল পুরোনো হয়ে যাওয়ার পর খালেদ দারুণ করেছে, ইবাদতও ভালো করেছে। পেসারদের পারফরম্যান্স দুর্দান্ত ছিল।’