চরম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কা পার করছে আরেকটি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ দিন। কলম্বোয় প্রেসিডেন্টের বাসভবন দখল করে নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা, আগের মতোই তাঁদের পাশে আছেন কুমার সাঙ্গাকারা-রোশান মহানামারা। গলের বিক্ষোভকারীদের যেতে দেওয়া হয়নি কলম্বোয়, তবে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার টেস্ট বাইরের উত্তাপ টের পেল ঠিকই।
গল দুর্গে প্রবেশ নিষিদ্ধ গতকাল থেকেই। প্রথম টেস্টে বিক্ষোভকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরই নেওয়া হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত। তবে বিক্ষোভকারীরা ঠিকই ঢুকে গেছেন সেখানেও। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিন মাঠে যখন শ্রীলঙ্কার দাপট চলছে, বাইরে চলছে বিক্ষোভ। ধীরে ধীরে সেটির কলেবর বেড়েছে। আর মাঠে দিমুথ করুণারত্নে, কুশল মেন্ডিসরা ধীরে ধীরে কমিয়ে এনেছেন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রথম ইনিংসের ব্যবধান।
এমন নয় যে অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়েরা শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাপারে কিছুই জানেন না। ইউনিসেফের দূত অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক ভিডিওতে শ্রীলঙ্কার সহায়তায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছনে। দুই কিশোরী ক্রিকেটারের কাছে শুনেছেন তাঁদের সংগ্রামের গল্প।
মাঠে অবশ্য করুণারত্নে-মেন্ডিসের লড়াই দেখতে হলো কামিন্সদের। অভিষিক্ত প্রবত জয়াসুরিয়ার ৬ উইকেটের পর করুণারত্নে ও মেন্ডিসের ৮০ পেরোনো দুই ইনিংসে দ্বিতীয় দিন শেষে শ্রীলঙ্কা তুলেছে ২ উইকেটে ১৮৪ রান। করুণারত্নে ফিরলেও দিন শেষে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে নিয়ে অপরাজিত আছেন ৮৪ রান করা কুশল মেন্ডিস।
এর আগে ৩৫ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংসে ৩৬৪ রানেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ৫ উইকেটে ২৯৮ রান নিয়ে অস্ট্রেলিয়া দিন শুরু করে দাপটের সঙ্গেই। তবে পরিস্থিতি বদলাতে খুব বেশি সময় লাগেনি। স্টিভ স্মিথ শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১৪৫ রানে।
২৮ রান করা অ্যালেক্স ক্যারিকে ফিরিয়ে শ্রীলঙ্কাকে দিনের প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন জয়াসুরিয়া, স্মিথের সঙ্গে ক্যারির জুটিতে ওঠে ৭৭ রান। তবে এরপর স্মিথকে সেভাবে আর কেউ সঙ্গ দিতে পারেননি। ক্যারিকে ফেরানোর পরের ওভারেই মিচেল স্টার্ককেও ফেরান জয়াসুরিয়া, স্লিপে দারুণ ক্যাচ নেন কুশল মেন্ডিস। ওই উইকেট দিয়েই অভিষেকে ৫ উইকেট নেওয়া মাত্র ষষ্ঠ শ্রীলঙ্কান বোলার হয়ে যান তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার শেষ তিন ব্যাটসম্যানই হন এলবিডব্লু। কামিন্স কাসুন রাজিতার শিকার, মিচেল সোয়েপসন আরেক অভিষিক্ত মহীশ তিকসানার। এর আগেই নাথান লায়নকে ফিরিয়ে শ্রীলঙ্কার হয়ে অভিষেকে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগারের মালিক হন জয়াসুরিয়া, ১১৮ রানে নেন ৬ উইকেট। গত বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে ৯২ রানে ৬ উইকেট নেওয়া প্রবীণ জয়াবিক্রমা তালিকার শীর্ষে।
ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কাকে এরপর বেশ খানিকটা সময় আটকে রাখে অস্ট্রেলিয়া। নবম ওভারে মিচেল স্টার্কের বলে ক্যামেরন গ্রিনের হাতে যখন ধরা পড়েন পাতুম নিসাঙ্কা, শ্রীলঙ্কার রান তখন মাত্র ১২। ১৫তম ওভারে আসে প্রথম বাউন্ডারি, কামিন্সকে সেটি মারেন মেন্ডিস। নিসাঙ্কা ফিরলেও, সেভাবে রান না উঠলেও করুণারত্নে ও মেন্ডিস অস্ট্রেলিয়াকে উইকেট দেননি। ৩০ ওভারে ১ উইকেটে ৬৫ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যায় শ্রীলঙ্কা।
পরের সেশনে অবশ্য স্বাগতিকেরা প্রায় ৩.৬১ হারে তোলেন ১১৯ রান। ক্যারিয়ারের ৩০তম অর্ধশতক পেরিয়ে ১৫তম শতকের দিকে এগোচ্ছিলেন করুণারত্নে। তবে সোয়েপসনের স্কিড করে যাওয়া বলটা ফ্লিক করতে গিয়ে মিস করে এলবিডব্লু হন তিনি, রিভিউও নষ্ট করেন। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ককে ফিরতে হয় শতক থেকে ১৪ রান দূরেই। ম্যাথুস ও মেন্ডিস অবশ্য এরপর আর উইকেট হারাতে দেননি। ৩৬ বল খেলে ৬ রানে অপরাজিত ম্যাথুস। মেন্ডিস শতক থেকে ১৬ রান দূরে দাঁড়িয়ে।