বিধ্বংসী চিগুম্বুরা

কাল মিরপুরে এমন বিধ্বংসী চেহারায় দেখা গেল এলটন চিগুম্বুরাকে  প্রথম আলো
কাল মিরপুরে এমন বিধ্বংসী চেহারায় দেখা গেল এলটন চিগুম্বুরাকে প্রথম আলো

ইনিংস শেষে বেরিয়ে আসার সময় শ পাঁচেক দর্শক দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানাল। ড্রেসিংরুম থেকে সতীর্থরা ছুটে গিয়ে অভিনন্দন জানালেন, জড়িয়ে ধরলেন। দিনভর স্টেডিয়ামজুড়ে তাঁর কীর্তির প্রশংসাগাথা। অথচ এলটন চিগুম্বুরা জানতেনই না নিজের কীর্তির কথা!
ব্যাট হাতে বিস্ময় উপহার দিয়েছেন, ম্যাচ শেষে চমকে গেলেন নিজেই। সংবাদকর্মীরা রেকর্ডের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইতেই বিস্মিত জিম্বাবুইয়ান অলরাউন্ডার, ‘রেকর্ড হয়েছে নাকি? আমি মাত্রই জানলাম!’
সিকান্দার রাজার এক ওভারে তামিম ইকবালের ঝড়ের সুবাদে আগের দিনই প্রথম আলোর খেলার পাতায় ছাপা হয়েছে লিস্ট এ-তে এক ওভারে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ৩৩ রানের ওভারে তামিম ছিলেন চারে, কাল তামিমকে পাঁচে নামিয়ে তালিকার শীর্ষে উঠে গেলেন চিগুম্বুরা। আগের রেকর্ড ছিল ২০০৭ বিশ্বকাপে হার্শেল গিবসের ৩৬, বৈধ বলের হিসাবে যে এই রানের বেশি করার উপায় নেই। আলাউদ্দিন বাবুর তিনটি ‘অবৈধ’ বলের সহায়তায় এক ওভার থেকেই এল ৩৯!
শেখ জামাল ইনিংসের সেটি শেষ ওভার। প্রথম বল বুকসমান ফুলটস, নো বলে চার। পরের বল ওয়াইড। এরপর ছয়-চার-ছয়-চার-ছয়, আবার ওয়াইড, শেষ বলে ছয়। প্রথম বলটাই ইয়র্ক করতে গিয়ে ফুলটস করার পর আর ওই চেষ্টাই করেননি আলাউদ্দিন, টানা লেংথ বল করে গেছেন। আর নিজের প্রিয় জায়গায় বল পেয়ে তাণ্ডব চালিয়ে গেছেন চিগুম্বুরা। ছক্কাগুলো সব অনায়াসে পেরিয়েছে বাউন্ডারি। দু-তিন বল পরই আলাউদ্দিন যেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না বল কোথায় ফেলবেন। শরীরী ভাষা বলছিল, ওভারটি শেষ হলেই বাঁচেন! ম্যাচ শেষেও মন ছিল তাঁর প্রচণ্ড ভার, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাই বললেন না।
ওই ওভারটিই শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দিল ম্যাচে। আড়াই শর আশপাশে সম্ভাব্য স্কোর থেকে শেখ জামালের স্কোর হয়ে গেল ২৮২। শেষ ওভারে ৩৯ দেওয়া আবাহনী ম্যাচটি হারল ২৮ রানে! প্রথম ম্যাচে জয়ের পর টানা চার ম্যাচে হেরে আবাহনী এখন ১২ দলের মধ্যে দশম! জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি যখন রেলিগেশনের শঙ্কায়, ক্লাবের কর্তারা সব তখন নানা ক্লাব থেকে কাউন্সিলর হয়ে ব্যস্ত বিসিবি নির্বাচনে। মাঠের খেলায় দলের ভরাডুবি নিয়ে ভাবার সময় কোথায়!
ওপেনিংয়ে জহুরুল হকের ৬০ রানের ইনিংসটির পরও নিয়মিত উইকেট হারিয়ে দুই শর আশপাশে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল শেখ জামাল। ৪৫তম ওভারে রান ছিল ৮ উইকেটে ২০৫। পরের অংশটুকু এগিয়েছে চিগুম্বুরার ভাবনামতো, ‘তখন চেয়েছি পুরো ৫০ ওভার খেলতে, পারলে শেষ দুই ওভারে যত বেশি সম্ভব রান করতে।’ শেষ ওভারটি অবশ্য ছাড়িয়ে গেছে ভাবনাকেও, ‘ব্যাটিংয়ের সময় রেকর্ডের কথা মনে থাকে না। আমি চেয়েছি চালিয়ে খেলতে, বলগুলোও পেয়েছি আমার জোনে।’ আলাউদ্দিনের মতো তিনিও পেস বোলিং অলরাউন্ডার বলেই কি না, সমবেদনাও ঝরল বোলারের প্রতি, ‘খেলাটাই আসলে এমন। মাঝেমধ্যে কিছুই পক্ষে থাকে না। ব্যাটসম্যান এমন উন্মত্ত চেহারায় থাকলে অনেক সময় বোলারের মাথা কাজ করে না।’
দ্বিতীয় উইকেটে শাহরিয়ার নাফীস (৪৮) ও থারাঙ্গা পারানাভিতানার (৫৬) ১০০ রানের জুটিতে রান তাড়ায় আবাহনীও খারাপ করছিল না। তবে আবুল বাশারের অফ স্পিনে পথ হারায় তারা। তিন চার ও দুই ছক্কায় ৪৩ রান করা মোসাদ্দেক বাশারের বলে নাহিদের দুর্দান্ত ক্যাচ হওয়ার পরই ম্যাচ কার্যত শেষ। ইলিয়াস সানির এক ওভারে তিন ছক্কায় আলাউদ্দিন (১৬ বলে ২৪) চেষ্টা করেছেন বোলিং-লজ্জা কিছুটা ভোলার। তবে বল হাতে তাঁর ওভারটিই গড়ে দিয়েছে ম্যাচের ভাগ্য!
সং ক্ষি প্ত স্কো র
 শেখ জামাল ধানমন্ডি: ৫০ ওভারে ২৮২/৯ (জহুরুল ৬০, জুনায়েদ ২০, মুনাবীরা ৪২, মুশফিক ১৫, নায়েব ২০, চিগুম্বুরা ৬৯*, বাশার ১০, সানি ০, নাহিদুল ৯, রাজ্জাক ১৬, শফিউল ১*; আল-আমিন ৪/৩৮, পারানাভিতানা ০/১৪, নাবিল ০/৩৯, আলাউদ্দিন ১/৯৩, শামসুল ২/৫২, মোসাদ্দেক ২/৪১)। আবাহনী: ৪৭.৫ ওভারে ২৫৪ (শাহরিয়ার ৪৮, আল-আমিন ১২, পারানাভিতানা ৫৬, ডি সরম ৯, মোসাদ্দেক ৪৩, কান্দাম্বি ২১, ইফতেখার ৪, আলাউদ্দিন ২৪, নাবিল ৮, আল-আমিন ৪, শামসুল ১*; শফিউল ৩/৫৬, নায়েব ১/৯, চিগুম্বুরা ০/১৯, মুনাবীরা ০/১৪, রাজ্জাক ০/৩৯, সানি ১/৫০, নাহিদুল ০/২৭, বাশার ৪/৩২)। ফল: শেখ জামাল ২৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আবুল বাশার (শেখ জামাল)