তামিম ইকবাল বাস্তবতাটা জানেন ভালোভাবেই। ১০০ পয়েন্ট নিয়ে এ মুহূর্তে আইসিসি বিশ্বকাপ সুপার লিগে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকলেও সে অবস্থান ধরে রাখাটা শক্ত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ১০ পয়েন্ট হারানোর পর নিজের হতাশাটা তাই লুকাননি বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। হতাশার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, এ চক্রে শীর্ষ চারে থেকেই পরের বিশ্বকাপে খেলতে চায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক হিসেবে তাঁর লক্ষ্য সেটিই।
আফগানিস্তানকে দ্বিতীয় ম্যাচে হারিয়েই ইংল্যান্ডকে টপকে শীর্ষে উঠেছিল বাংলাদেশ। তবে সিরিজ শেষে ১০০ পয়েন্টেই আটকে থাকতে হলো। তৃতীয় ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে নিজের হতাশা জানাতে গিয়ে তামিম বলেছেন, ‘খুবই হতাশ, আমি আজকে খেলা শুরুর আগেও বলেছি, এই ম্যাচটা সম্ভবত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সিরিজ জিতে গেছি, তবুও এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল। কারণ, এখন আর সে পরিস্থিতি নেই যে আপনি (সিরিজের) একটা (শেষ) ম্যাচ নাও জেতেন সমস্যা নেই। প্রতিটি ম্যাচেই পয়েন্ট আছে, প্রতিটি ম্যাচেরই আলাদা মূল্য আছে। সেদিক থেকে আমি খুবই হতাশ, কারণ নিজেদের খেলাটা খেলতে পারিনি, যেটা আমরা দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেছি।’
এসব অবশ্য এখন পুরোনো কথাই। ওয়ানডেতে এখন আর ‘ডেড রাবার’ বলে তো কিছু নেই। আবার বিশ্বকাপ সুপার লিগের এখনকার যে পরিস্থিতি, তাতে ২০২৩ সালে ভারতে হতে যাওয়া টুর্নামেন্টের জন্য বাংলাদেশের পথটা মোটামুটি নিরাপদই। তবে তামিম ভবিষ্যত নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চান না, ‘আমি আসলে হতাশ পয়েন্ট হারিয়ে, কারণ, আপনি কখনো ভবিষ্যত বলতে পারেন না। আমাদের দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে হবে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে হবে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে খেলতে হবে। কোনো কিছুই নিশ্চিত নয় যে আপনি পারবেনই । যখন আপনার এ ধরনের সুযোগ থাকবে (ঘরের মাঠে আফগানদের বিপক্ষে) তখন সেটির সর্বোচ্চ সুবিধাটা তুলে নিতে হবে।’
বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে খুব বেশি ভাবনা নেই, তামিম অবশ্য বলেছেন সেটিও। তবে তাঁর লক্ষ্যটা শুধুই বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়া নয়, ‘যদি এক-দুইটা ম্যাচও জিতি এরপর, হয়তো আমরা বিশ্বকাপের জন্য কোয়ালিফাই করব। কিন্তু এটা আমার লক্ষ্য নয়, আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য হল বাংলাদেশ সেরা চারে থেকে শেষ করবে।’
তামিম আদতে একটা বার্তাও দিতে চান, ‘যদি বলতে চাই যে ২০২৩ সালে আমরা বিশ্বকাপ জিততে চাই এবং ৭-৮ নম্বর দল হয়ে বিশ্বকাপ কোয়ালিফাই করি, তাহলে কোনো লাভ নেই। যদি আমরা শীর্ষ চারে থেকে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে এটা একটা মানে রাখে। তো অধিনায়ক হিসেবে আমি চাইব শীর্ষ চারে থেকে শেষ করতে। আমি পয়েন্ট কত পাব, সেটা বলতে চাই না। আমি শীর্ষ চারে থেকে বিশ্বকাপে যেতে চাই।’
প্রথম ম্যাচে আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজের রেকর্ড গড়া জুটিতে স্মরণীয় জয় পাওয়া বাংলাদেশ পরের ম্যাচে পেয়েছিল দাপুটে জয়। প্রথম ম্যাচে পাওয়া ছন্দটা বেশ ভালোভাবেই কাজে এসেছিল। সে ধারাবাহিকতাটাই ধরে রাখতে চেয়েছিলেন তামিম, ‘এই একটা ম্যাচ ছিল, যেটা আমি খুব করে চেয়েছি জিততে। কারণ, আপনি যদি দেখেন প্রথম ম্যাচে আমরা বেশ ভাগ্যবান ছিলাম। ওরা দুজন (আফিফ-মিরাজ) যে ব্যাটিং করেছে তা অসাধারণ, এ রকম ব্যাটিং প্রতিদিন পাওয়া যাবে না। আমাকে বলতেই হবে আমরা খুবই ভাগ্যবান। পরের ম্যাচেই আমরা খুব ‘সলিড’ গেম খেলেছি। ফলে আমি ভেবেছি আজকের ম্যাচটায় আমরা খুব দাপটের সঙ্গে শেষ করতে পারব। সেদিক থেকে আমি বলব, খুবই হতাশ।’
শেষ ওয়ানডেতে টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়ার পর বাংলাদেশ এগোচ্ছিল ঠিক পথেই। ২২তম ওভারেও ১ উইকেটে ১০৪ রান ছিল তাদের। তবে পথ হারিয়ে স্বাগতিকেরা গুটিয়ে যায় ১৯২ রানেই, রহমানউল্লাহ গুরবাজের শতকে আফগানিস্তান শেষ পর্যন্ত পায় সহজ জয়। ব্যাটিংয়ের পর ফিল্ডিংয়ে গড়বড় করেছে বাংলাদেশ, বোলিংটাও ছন্দে ছিল না ঠিক। তবে তামিম এমন হারের দায় নিচ্ছেন নিজের ওপরই, ‘এটা আমার কাজ ছিল যে সবাইকে ঠিক রাখা, যেন তারা তাদের সেরাটা দিতে পারে। আমি আমার দলের কারও দিকে আঙুল তুলতে চাই না—যে সে খেলার মানসিকতায় ছিল না বা একটু রিল্যাক্সড ছিল।’