ডারবানের কিংসমিডে টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়ে এখন পর্যন্ত টেস্ট জেতার ঘটনা আছে ১০টি। ২০১৯ সালে কুশল মেন্ডিসের ওই মহাকাব্যিক ইনিংসে ভর করে পাওয়া শ্রীলঙ্কার দুর্দান্ত জয় বাদ দিলে সর্বশেষটি ২০০৮ সালে। টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে জেতার ঘটনা ১৮টি। রেকর্ড ব্যাটিংয়ের পক্ষে থাকলেও বাংলাদেশ অবশ্য বেছে নিয়েছে ফিল্ডিং-ই। শুরুতেই সাইটস্ক্রিন বিভ্রাটে খেলা শুরু হয়েছে ৩৫ মিনিট দেরি করে। প্রথম সেশনে পেসাররাও পিচ থেকে সুবিধা আদায় করতে পারেননি কোনো, ঠিক করে উঠতে পারেননি লেংথ। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলছেন, এমন উইকেটে তরুণ ব্যাটসম্যানদের ‘ভয়’-এর কথা ভেবেই আগে ব্যাটিং করেনি বাংলাদেশ।
এ ম্যাচ দিয়েই প্রায় এক বছর পর টেস্টে ফেরার কথা ছিল তামিম ইকবালের। তবে পেটের পীড়ায় ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছেন অভিজ্ঞ এ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে উদ্বোধন করতে আসার কথা তাই সাদমান ইসলামের। টপ অর্ডারে আছেন নাজমুল হোসেনও। এঁদের কেউই এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেননি।
দিনশেষে সংবাদ সম্মেলনে ডমিঙ্গো বলেছেন, এঁদের অনভিজ্ঞতার কথা ভেবেই আগে ব্যাটিংয়ের ‘ঝুঁকি’ নেওয়া হয়নি, ‘দিনশেষে বাংলাদেশ টেস্টে উন্নতি করতে চায়। যেসব উইকেটে পেস ও বাউন্স আছে একটু, সেখানে ব্যাটিং নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করে। কোচিং টিম এবং সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে আমরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করছি, এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যাতে আত্মবিশ্বাস কাজ করে। তবে এগুলো সহজ না, কঠিন।’
এক্ষেত্রে আরও সাহসী হতে হবে ব্যাটসম্যানদের, ডমিঙ্গো এটাও অবশ্য বলেছেন, ‘বিদেশের কন্ডিশনে ব্যাটিংয়ে ভয় কাজ করে একটু। অনেক তরুণ ক্রিকেটার আমাদের—জয় (মাহমুদুল), সাদমান, শান্ত (নাজমুল), যারা এখানে নিজেদের প্রথম টেস্ট খেলছে। আমাদের কঠিন উইকেটে খেলার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে।’
ডমিঙ্গো অবশ্য আরেকটা জরুরি কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘ব্যাটিং-বোলিং দুই দিকেই হয়তো যুক্তি ছিল। সর্বশেষ দশ বছরে এখানে আগে ব্যাটিং করার পক্ষে হারটা ৫৮ শতাংশ, ফলে খুব বেশি না (পার্থক্য)। আকাশ একটু মেঘলাও ছিল। তবে খেলা দেরিতে শুরু হওয়ায় সে মেঘটা কেটে গেছে।’
শুরুতেই খেলা শুরু হতে দেরি হওয়াতে বোলিং কন্ডিশন কাজে লাগানোর সুযোগ একটু কমই পেয়েছে বাংলাদেশ। ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা পরে এক বিবৃতিতে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছে। ডমিঙ্গো অবশ্য উইকেটশূন্য সেশনে অনভিজ্ঞ পেস আক্রমণের ‘গড়পড়তা’ বোলিংয়েরও দায় দেখেছেন, ‘আমাদের বোলিং আক্রমণ অনভিজ্ঞ। খালেদ তার চতুর্থ টেস্ট খেলছে, ইবাদত সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ, সে-ও খেলেছে ১২ ম্যাচ। তার শেষ ম্যাচটাও তিন-চার মাস আগে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আশা করি, বাজে প্রথম সেশন থেকে ছেলেরা শিক্ষা নেবে। তারা একটু নার্ভাস ছিল। তারা সহায়তা আছে, এমন উইকেটে বোলিং করতে মুখিয়ে ছিল। ফলে তারা নিজেদের ডিসিপ্লিন হারিয়েছে একটু। তবে লাঞ্চের পর দুর্দান্ত ছিল ওরা।’
চতুর্থ ইনিংসে ১৮২ বা এর বেশি রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ডারবানে জয়ের ঘটনা আছে তিনটি। তিনটিতেই লক্ষ্য ছিল ৩০০ রানের বেশি। তবে এ তিনটির একটি ১৯৫০ সালে, দ্বিতীয়টি ২০০২ সালে। সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাটির সঙ্গে অবশ্য মিশে আছে কুশল পেরেরার ১৫৩ রানের ওই অপরাজিত মহাকাব্যিক ইনিংস।
এমনিতে কিংসমিডের এই উইকেটকে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য ‘বেশ ভালো’ বলেছেন ডমিঙ্গো। এখানে পুরোনো বলে রান করা সহজ নয়, সেটি মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, পরের দিকে স্পিন ধরার কথা এখানে। দক্ষিণ আফ্রিকা এ টেস্টে খেলাচ্ছে দুজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার—কেশব মহারাজ ও সাইমন হার্মার। সে দিক থেকেও এ উইকেটে চতুর্থ উইকেটে ব্যাটিংয়ের ঝুঁকিটা তাই আরও বেশি।
অন্যদিকে সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলাচ্ছে একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যন। ফলে বাংলাদেশ দলে বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে আছেন শুধু মেহেদী হাসান মিরাজই। সাকিবের অভাবটা বোধ করারই কথা, ডমিঙ্গো তা করছেনও, ‘পাঁচজন বোলার খেলালে আদর্শ হতো। এখানেই সাকিবের মতো অলরাউন্ডার পার্থক্য গড়ে দেয়। আমরা আসলে নিশ্চিত ছিলাম না, ব্যাটিং না বোলিং—কোনটির শক্তিমত্তা বাড়াব। মিরাজ অনেক ওভার করতে পারবে, একদিকে বেঁধে রাখতে পারবে বলে মনে হয়েছে। ফলে পেসারদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করতে পারব।’
মিরাজ অবশ্য সেটি করেছেনও। সবচেয়ে বেশি ২৬ ওভার বোলিং করে নিয়েছেন ১ উইকেট। ডমিঙ্গো বলছেন, আপাতত এভাবেই এগোতে হবে তাঁদের, ‘উইকেটে যতোটা ভেবেছিলাম, ততোটা সহায়তা ছিল না বলে পেসারদের কাজটা কঠিন ছিল। সাকিবের অনুপস্থিতিতে কিছু ওভার করবে, এমন কাউকে না পাওয়া পর্যন্ত এ পদ্ধতিতেই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে আমাদের।’