মেসি–রোনালদো কি এখন ‘সাধারণ’ ফুটবলার
আকাশে ওড়ার দিন ফুরিয়ে এলে মাটিতে নামতেই হয়।
অমিত প্রতিভার বলেই এত দিন ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বে ছিলেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। মৌসুমের পর মৌসুম ধরে ক্লাব তাঁদের ঘিরে পরিকল্পনা করেছে। মাঠে তাঁদের প্রাধান্য দিয়ে ছক কষেছেন কোচরা। মহাতারকা না হলে এসব মেলে!
সবকিছুরই শেষ আছে, জীবনানন্দের ভাষায় ‘নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়’। ৩৪ ও ৩৬ বছর বয়সে এসে পুরোনো সেই দিনগুলো দুই মহাতারকার মুঠো ফসকে ক্রমশ বেরিয়ে যাচ্ছে। আগে পুরো সময় নেতৃত্ব দিতে হতো মাঠে, এখন দলের গোলের প্রয়োজনের সময়ও কোচরা তাঁদের তুলে নেন!
প্রায় দেড় যুগ ধরে বিশ্বসেরা এ দুই ফুটবলারকে এখন আর দশজন সাধারণ খেলোয়াড়ের মতোই দেখছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ ওলে গুনার সুলশার এবং পিএসজি কোচ মরিসিও পচেত্তিনো।
নইলে ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাঁদের চিত্র এমন হবে কেন! যে চ্যাম্পিয়নস লিগ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর টুর্নামেন্ট হিসেবে খ্যাত, সেখানে ইয়ং বয়েজের বিপক্ষে ম্যান ইউ ১–১ গোলে সমতায় থাকার সময়ে তাঁকে তুলে নেন সুলশার। ইউনাইটেডকে প্রথম গোলটা এনে দেওয়া রোনালদো মাঠ ছেড়েছেন কালো মুখে। ডাগআউটে মুখ ভার করে বসে ছিলেন।
মেসির মুখের চিত্রও আলাদা ছিল না। রোববার ফরাসি লিগে লিঁও–র বিপক্ষে ম্যাচে ১–১ গোলে সমতায় থাকার সময়ে মেসিকে তুলে নেন পিএসজি কোচ পচেত্তিনো। যোগ করা সময়ে মাউরো ইকার্দির গোলে পিএসজি শেষ পর্যন্ত জিতলেও পচেত্তিনোর বার্তাটা পরিষ্কার ছিল—গোলের জন্য তিনি মেসির ওপর ভরসা রাখতে পারেননি।
পর্তুগিজ তারকার মতো আর্জেন্টাইন তারকাও এভাবে বদলি হিসেবে মাঠ ছাড়তে ঠিক অভ্যস্ত নন। রোনালদো ওয়েস্ট হামের বিপক্ষে পরের ম্যাচে পুরো সময় খেলে গোল করে নিজের সামর্থ্যকে পুনরায় প্রমাণ করলেও মেসি এখনো সে সুযোগ পাননি। ফরাসি সংবাদমাধ্যম লে’কিপ জানিয়েছে, সেই ম্যাচে হাঁটুতে ব্যথা অনুভব করছিলেন মেসি, পচেত্তিনো তাই সেদিন তাঁকে তুলে নিয়েছেন।
কারণ যা–ই হোক, মেসি এভাবে মাঠ ছাড়তে অনভ্যস্ত। উঠে আসার পর তাঁর চোখেমুখেই সেই অনুভূতি ফুটে উঠেছে। ফরাসি সংবাদমাধ্যম তাঁর সমালোচনা করেছে। পরিসংখ্যান বলছে, বদলি হয়ে গোটা ক্যারিয়ারে খুব কম সময়েই মাঠ ছেড়েছেন মেসি। খেলাধুলার পরিসংখ্যানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘অপটা’র হিসেবে ২০১০ সাল থেকে ৩৭১ লিগ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ১৮ বার বদলি হয়ে মাঠ ছাড়েন মেসি। এর মধ্যে ৯ বারই উঠে আসতে হয়েছে চোটের কারণে।
হিসাবটা আরেকটু বড় করা যায়। ক্যারিয়ার শুরুর পর এ পর্যন্ত ৫৫৪টি লিগ ম্যাচে মাত্র ৫৪ বার কোচ তাঁকে বদলি হিসেবে তুলে নিয়েছেন। বার্সা কোচ রোনাল্ড কোমান তাঁকে গত জানুয়ারিতে বদলি হিসেবে তুলে এনেছিলেন, গ্রানাডার সঙ্গে সে ম্যাচে মেসি উঠে যাওয়ার সময় ৪–০ গোলে এগিয়ে ছিল বার্সা। কিন্তু পিএসজি কোচ গত রোববার ম্যাচের ১৫ মিনিট আগে যখন মেসিকে তুলে নিয়েছেন, তখনো তাঁর দল হন্যে হয়ে গোল খুঁজছে।
এই যে চোখের সামনে তাঁদের এত দিনের চিরচেনা দুনিয়াটা পাল্টে যাচ্ছে, তা মেনে নেওয়া সহজ নয় বলেই লিঁওর বিপক্ষে মাঠ ছাড়ার সময় কোচের সামনে মেসির প্রতিক্রিয়াটা ইতিবাচক ছিল না। ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘লা পারিসিয়েন’ এ নিয়ে লিখেছে, ‘প্যারিসে তাঁর (মেসির) সময়টা প্রত্যাশার চেয়েও জটিল হবে। ও ফুরিয়ে আসছে। মাথাটা ক্রমশ নিচু হচ্ছে ওর। ম্যাচে আর আগের মতো প্রভাব ফেলতে পারছে না।’
কিন্তু দুজনেই তো অসাধারণ ফুটবলার। সাধারণ সময়কে কীভাবে অসাধারণ বানাতে হয়, সেটাও তাঁদের জানা। তাই এখন দেখার বিষয়, সময়টা তাঁদের জন্য সত্যিই সাধারণ ফুটবলারদের মতো হয়ে উঠেছে কি না!