রিয়াল–বার্সার মুখোমুখিতে ফিরছে ১২০ বছর আগের নজির
শততম জয় পাবে রিয়াল মাদ্রিদ?
এল ক্লাসিকোর সেই দিন আর নেই। একসময় ম্যাচের কয়েক দিন আগে থেকেই শোরগোল শুরু হতো সংবাদমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি থাকতে ক্লাসিকোর সেই দিনগুলো এখন সোনালি অতীত। ধরা যাক, রোনালদো এখনো রিয়ালে এবং মেসিও বার্সেলোনায়—তাহলে কিন্তু আজ রাতে স্প্যানিশ সুপার কাপের ক্লাসিকো নিয়ে হইচই পড়ে যেত। রিয়াল যে শততম জয়ের মাইলফলক গড়ার সামনে দাঁড়িয়ে, সেটি নিয়েও কথা হতো।
কথা যে একদম হচ্ছে না, সেটাও নয়। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এএস যেমন জানিয়েছে, আজ বাংলাদেশ সময় রাত একটায় সুপার কাপ সেমিফাইনালে রিয়াল জিতলেই মাইলফলকটি গড়বে—ক্লাসিকোয় শততম জয়! ধ্রুপদি এ দ্বৈরথের অফিশিয়াল হিসাবে রিয়ালের জয়সংখ্যা ৯৯, বার্সেলোনার ৯৬। সব ধরনের ম্যাচ মিলিয়ে ক্লাসিকোয় রিয়াল-বার্সার জয়ের সংখ্যা আরও বেশি। জাভি-ইনিয়েস্তারা দূর অস্ত, মেসি-রোনালদো-রামোসরা থাকতেও এসব সংখ্যা নিয়েও তর্কবিতর্ক হতো। এখন রিয়ালে বেনজেমা-ক্রুসরা থাকলেও বার্সেলোনার সবচেয়ে বড় তারকা কোচ জাভি হার্নান্দেজ! ক্লাসিকোর আবেদনটা তাই আর আগের মতো নেই।
ক্লাসিকোয় এ পর্যন্ত ২৪৭ অফিশিয়াল ম্যাচে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী জয় দেখেনি ৫২ ম্যাচে। দুই দলই অবশ্য চার শতাধিক গোল করেছে। রিয়ালের গোলসংখ্যা ৪১২, বার্সার ৪০২। ক্লাসিকোর অফিশিয়াল ম্যাচ যতগুলো শহরে আয়োজিত হয়েছে, তার মধ্যে সৌদি আরবের রাজধানী (রিয়াদ) পঞ্চম। সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হয়েছে স্পেনের রাজধানি মাদ্রিদে—১২৩। এরপরই বার্সেলোনা—১১৯। লা লিগায় প্রতি মৌসুমে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে নিয়মের কারণে এ দুটি শহরের ম্যাচসংখ্যা এমনিতেই বাকি তিনটি শহরের চেয়ে বেশি হওয়ার কথা। রিয়ালের ঘাঁটি যেমন মাদ্রিদে, বার্সার তেমনি বার্সেলোনায়।
মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার পর স্পেনের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ভ্যালেন্সিয়ায় আয়োজিত হয়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক অফিশিয়াল ক্লাসিকো ম্যাচ—৪। মাত্র এক ম্যাচ আয়োজন করে এরপরই জারাগোজা। পরিসংখ্যানে জায়গা করে নিয়েছে রিয়াদের কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামও। ১৩তম ভেন্যু হিসেবে ক্লাসিকোর প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ গড়াবে এ স্টেডিয়ামে।
স্প্যানিশ সুপার কাপে এ পর্যন্ত ১৪ বার বার্সার মুখোমুখি হয়েছে রিয়াল। ৮ জয় নিয়ে এগিয়ে মাদ্রিদের ক্লাবটি। ড্র হয়েছে ২ ম্যাচ। বাকি ৪ ম্যাচ জিতেছে বার্সেলোনা। তবে শিরোপা জয়ের হিসেবে কিন্তু বার্সাই এগিয়ে। ১৩ বার সুপার কাপ জিতেছে ক্যাম্প ন্যুর ক্লাবটি। ১১ বার জিতেছে রিয়াল। যদিও গত চার বছরের মধ্যে বার্সা স্প্যানিশ সুপার কাপের মুখ দেখেনি। চমকে দেওয়া পরিসংখ্যান হচ্ছে, এই যে আজ সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে রিয়াল-বার্সা, সেটি ক্লাসিকোর ইতিহাসে আলাদা জায়গা পাবে। ১২০ বছর পর এই প্রথমবারের মতো এক ম্যাচের সেমিতে মুখোমুখি হবে রিয়াল-বার্সা। সবশেষ এমন দেখা গেছে ১৯০২ সালের ১৩ মে করোনেশন কাপে। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে সেটাই প্রথম অফিশিয়াল ম্যাচ, যেখানে ৩-১ গোলে জিতেছিল বার্সা।
ক্লাসিকোয় সবশেষ চারটি অফিশিয়াল ম্যাচেই জিতেছে রিয়াল। এই ১২০ বছরে টানা জয়ের ধারায় এর চেয়ে ভালো পারফরম্যান্স দেখা গেছে মাত্র দুবার—১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে টানা সাত ক্লাসিকো জিতেছে রিয়াল। পেপ গার্দিওলার অধীন বার্সার সোনালি সময়ে টানা পাঁচ ক্লাসিকো জিতেছে কাতালান ক্লাবটি (২০০৮ থেকে ২০১০)। স্প্যানিশ সুপার কাপে গত ১৭ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম ক্লাসিকোয় মেসি-রামোসকে দেখা যাচ্ছে না। সবশেষ এমন দেখা গিয়েছে ২০০৫ সালে। সুপার কাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (২০), সময় (১৬৭২), গোল (১৪) ও জয়ের (৯) রেকর্ড বার্সার সাবেক ফরোয়ার্ড মেসির।
কোচ হিসেবে এটাই প্রথম ক্লাসিকো জাভির। বার্সার খেলোয়াড় হিসেবে ৪২টি ক্লাসিকোয় খেলেছেন তিনি। জাভিকে ছাপিয়ে যেতে পেরেছেন শুধু মেসি (৪৫) ও রামোস (৪৫)। বার্সেলোনায় ফিরে আসা রাইটব্যাক দানি আলভেজকেও হাতছানি দিয়ে ডাকছে রেকর্ড বই। আজ খেললে স্প্যানিশ সুপার কাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার রেকর্ড গড়বেন ৩৮ বছর বয়সী আলভেজ। ২০০৪ সালে ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে ৩৯ বছর বয়সে মাঠে নেমে রেকর্ডটি গড়েন ইতালির সাবেক ডিফেন্ডার আমেদেও কারবোনি।