লতাকে হারিয়ে যেন নিজেকেও হারালেন টেন্ডুলকার

নিজের সই করা একটি শার্ট লতা মঙ্গেশকরের হাতে তুলে দিয়েছিলেন টেন্ডুলকার।ফাইল ছবি

ক্রিকেটের প্রতি লতা মঙ্গেশকরের অনুরাগ অনেক পুরোনো। সময় পেলেই বসে যেতেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের ম্যাচ দেখতে। আগের যুগের কপিল-গাভাস্কার থেকে শুরু করে পরের যুগের শচীন টেন্ডুলকার—লতা সবার খেলারই ভক্ত ছিলেন। নিয়মিত দেখতেন এ যুগের বিরাট কোহলিদের খেলাও। সবার মধ্যেই শচীন টেন্ডুলকারের প্রতি তাঁর অপত্য স্নেহ যেন একটু বেশিই ছিল। টেন্ডুলকারকে নিজের সন্তানের মতোই দেখতেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিয়ে করেননি। কিন্তু টেন্ডুলকারের মুখে ‘মা’ ডাকটা ঠিকই শুনেছেন। মারাঠি ভাষায় টেন্ডুলকার লতাকে ডাকতেন ‘আই’। এর অর্থ ‘মা’।

শচীনের ‘আই’ আজ চলে গেছেন অনন্তের পথে। শোকাতুর ভারত, শোকাতুর সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা লতার অসংখ্য ভক্ত। টেন্ডুলকার এ অবস্থায় ঠিক থাকেন কী করে? লতার মৃত্যুসংবাদ সকালে এলেও টেন্ডুলকার নীরবেই শোক সয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কোনো পোস্ট দেননি। ধাতস্থ হওয়ার সময় নিচ্ছিলেন হয়তো! অবশেষে লিটল মাস্টারের কাছ থেকে এল মহাপ্রতীক্ষিত সেই বিবৃতি। জানালেন, মায়ের মৃত্যুতে তাঁর নিজের এক অংশেরই মৃত্যু হয়েছে যেন!

লতা মঙ্গেশকর
ফাইল ছবি: এএফপি

টুইটারে টেন্ডুলকার জানিয়েছেন, ‘লতা দিদির জীবনের একটা অংশ হতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। আমার ওপর তাঁর ভালোবাসা ও আশীর্বাদের বর্ষিত হতো সব সময়। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আমার শরীরের একটি অংশ অবশ হয়ে গিয়েছে যেন। তিনি আজীবন তাঁর সংগীত দিয়ে আমাদের হৃদয়ে বাস করবেন।’

২০১৪ সালে ‘ভারত রত্ন’ খেতাব পেয়েছিলেন টেন্ডুলকার। ক্রিকেট কিংবদন্তি যেন এই সম্মাননা পান, সে জন্য অনেক আগে থেকেই লতা বিভিন্ন জায়গায় টেন্ডুলকারের সমর্থনে কথা বলেছিলেন। হিন্দুস্তান টাইমস তাঁদের এক প্রতিবেদনে শচীন-লতার এই অনন্য সম্পর্ক নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে তুলে এনেছে ২০১০ সালে দেওয়া লতার এক সাক্ষাৎকারের কথা। যেখানে লতা বলেছিলেন, ‘আমার কাছে শচীন টেন্ডুলকারই আসল ভারত রত্ন। ও দেশের জন্য যা যা করেছে, অনেক কম মানুষই তা করেছে। সে এই সম্মাননার যোগ্য। সে আমাদের গর্বিত করেছে।’

টেন্ডুলকার প্রথমবার যখন লতাকে ‘মা’ বলে ডেকেছিলেন, আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন কিন্নরকণ্ঠী এই শিল্পী, ‘শচীন আমাকে ওর মায়ের মতো সম্মান করে। আমিও ওর জন্য একজন মায়ের মতোই প্রার্থনা করি। যেদিন ও আমাকে প্রথম “আই” (মা) ডেকেছিল, সেদিনটার কথা আমি কখনোই ভুলতে পারি না। আমার কাছে ব্যাপারটা একটা চমক হিসেবে এসেছিল। ওর মতো একজন সন্তান পেয়ে আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি।’

সেই ‘মায়ের’ মৃত্যুতে শচীন শোকে অবশ হয়ে যাবেন, এটাই কি স্বাভাবিক নয়!