বাংলাদেশ গেমসে সাফল্যের অপর নাম যেন বাংলাদেশ আনসার! এবারের আসরেও বেশির ভাগ খেলাতেই ছিল আনসারের দাপট। ১৩২টি সোনা, ৮০টি রুপা ও ৫৭টি ব্রোঞ্জ জিতে টানা পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশ গেমসের চ্যাম্পিয়ন তারা।
১৯৮২ সালে বক্সিং দিয়ে আনসারের খেলাধুলায় আসা। এরপর সময় যত গড়িয়েছে, খেলার জগতে ধীরে ধীরে বেড়েছে তাদের দাপট। বর্তমানে আনসারের অ্যাথলেট ৯১২ জন। এর মধ্যে স্থায়ী চাকরি ২৯৬ জনের। ভাতাভুক্ত খেলোয়াড় ৩৩৮ জন। বাকি ২৭৮ জন ভিডিপির (ভিলেজ ডিফেন্স পার্টি) সদস্য হিসেবে আছেন। আনসারে কোচই আছেন ৭০ জন। বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের ৩১টি খেলার মধ্যে ২৭টিতে অংশ নিয়েছেন আনসারের খেলোয়াড়েরা।
১৯৯২ সালের বাংলাদেশ গেমস দিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের শুরু আনসারের। এরপর ১৯৯৬, ২০০২, ২০১৩ এবং এবারও সেরার মুকুট জিতল তারা। তৃণমূল থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় বাছাই, দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ, অনুশীলনের জন্য নিজস্ব সুযোগ-সুবিধা, খেলোয়াড়দের বেতন-ভাতার পাশাপাশি সাফল্যের জন্য আর্থিক প্রণোদনা, চাকরিতে পদোন্নতি—সব মিলিয়েই এমন ধারাবাহিক সাফল্য আনসারের।
নবীন অ্যাথলেটদের প্রথমে গাজীপুরের শফিপুর আনসার একাডেমিতে দেওয়া হয় দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ। এরপর একের পর এক ধাপ পেরিয়ে আনসারের চূড়ান্ত দলে জায়গা পান খেলোয়াড়েরা। বাংলাদেশ গেমসে আনসারের টানা সাফল্যের পেছনে এটাকেই বড় কারণ বলছেন সংস্থাটির সহকারী ক্রীড়া পরিচালক রায়হান উদ্দিন ফকির, ‘বাংলাদেশ গেমসে ভালো করার পেছনে কাজ করেছে আমাদের প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্প। সারা দেশে প্রায় ৬১ লাখ আনসার সদস্য আছেন। দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, স্কুল, কলেজে কেউ কোনো খেলায় ভালো করলেই আমরা খবর পেয়ে যাই। এরপর ওই খেলোয়াড়কে প্রাথমিক ক্যাম্পে অনুশীলনের সুযোগ দিই। দক্ষ কোচের মাধ্যমে ওদের দুর্বলতাগুলো দূর করার চেষ্টা করি।’ খেলোয়াড়দের আর্থিক সুযোগ-সুবিধার দিকেও বিশেষ দৃষ্টি আছে আনসারের। রায়হান উদ্দিন ফকির বলছিলেন, ‘খেলোয়াড়ের আর্থিক সুযোগ–সুবিধা, থাকা–খাওয়া, যাতায়াত ভাতা—এসব আমরা নিয়মিতই দিই। ভাতাভুক্ত খেলোয়াড়েরা ভালো করলে তাদেরও আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয়।’
শফিপুর আনসার একাডেমিতে প্রশিক্ষণের সব রকমের সুযোগ-সুবিধাই আছে। সারা বছরই কোনো না কোনো অনুশীলন ক্যাম্প চলে সেখানে। আর্চারির জন্য আছে আলাদা শেড। জুডো, কারাতে, হ্যান্ডবল, তায়কোয়ান্দো, ফেন্সিংয়ের সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি আছে আধুনিক সুইমিং পুলও। অবশ্য কারাতে ও জিমন্যাস্টিকসের অনুশীলনের সুবিধা অত ভালো না থাকায় অন্যত্র অনুশীলন করতে হয়েছে।
গত বছর দেশের অন্যতম বড় সার্ভিসেস দল বিজেএমসি বিলুপ্ত হওয়ার পর সেখান থেকেও অনেক খেলোয়াড় আনসারে যোগ দিয়েছেন। তবে রায়হান ফকির বলেছেন, ‘আমরা প্রতিভা অন্বেষণের মাধ্যমে আসা খেলোয়াড়দেরই বেশি গুরুত্ব দিই। তৈরি খেলোয়াড়েরা এখানে খুব কমই সুযোগ পায়।’
চার বছর ধরে আনসারের হয়ে খেলছেন টেবিল টেনিস খেলোয়াড় সাদিয়া রহমান। এবারের বাংলাদেশ গেমসে ব্যক্তিগত ও দলীয় মিলিয়ে আনসারের হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি পদক (৩টি সোনা ও ১টি ব্রোঞ্জ) জিতেছেন সাদিয়া। আনসারের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই সাদিয়ার, ‘আনসার থেকে যে টাকা পাই, তা দিয়ে পড়াশোনার খরচটা চালাতে পারি। যেহেতু আমাদের কোনো ডিউটি পালন করতে হয় না, তাই নির্ভার হয়ে খেলতে পারি।’