হেরেও নায়ক টেন্ডুলকার
রেকর্ড বইয়ে কাহিনী থাকে না, থাকে নিরেট কিছু সংখ্যা। তাই কালকের ভারত-অস্ট্রেলিয়া হায়দরাবাদের ওয়ানডে ম্যাচটি বলবে, অস্ট্রেলিয়ার ৩৫০ রানের পেছনে ছুটে ভারত হেরেছে ৪ রানে। বলবে, ১৭৫ রান করেও ভারতকে জেতাতে পারেননি শচীন টেন্ডুলকার। তার মানে এই কলঙ্ক-তিলকটা তাঁর গায়ে থেকেই গেল যে, টেন্ডুলকার খুব একটা ম্যাচ জেতাতে পারেন না। দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে পারেন, ভালো পারেন সেটি নিজের হাতে খুন করতে।ভবিষ্যতের কোনো ক্রিকেট-গবেষক এই স্কোর দেখে প্রভাবিত হলে মহা ভুল করবেন। ম্যাচের ভিডিওটা জোগাড় করে দেখলে ওই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত তিনি করতে পারবেন কেবল মাথার চুল ছিঁড়ে। পুরো রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামকে মন্ত্রমুগ্ধ করে দেওয়া তাঁর ১৭৫ রানের ইনিংসটা ক্লিন্ট ম্যাকের বলে যখন কাটা পড়ল নাথান হরিজের ক্যাচ হয়ে, তখন জয়ের জন্য ভারতের দরকার ১৯ রান। হাতে ৩ উইকেট, বল বাকি ১৭টি। এই কয়টি রান সামনে নিয়ে টেন্ডুলকারের বাকি সতীর্থরা কী হাস্যকর স্নায়ুপীড়নের দৃষ্টান্তই না দেখালেন ২২ গজে। টেন্ডুলকারের বিদায়ের ৩ বল পর একই ওভারে রানআউট হলেন রবীন্দ্র জাদেজা, যাঁর মধ্যে বিশাল এক অলরাউন্ডারকে খুঁজছে ভারত। আর যেভাবে রানআউট হলেন তাতে মনে হতে পারত; তিনি ক্রিকেট নয়, ‘দাঁড়িয়াবান্ধা’ খেলছেন। ২ বল পর উইকেট দিয়ে এলেন আশীষ নেহরা। তখন ১১ বলে দরকার ১৬ রান। প্রাভিন কুমার ডগ বলিংগারকে ছক্কা হাঁকিয়ে সমীকরণ বানিয়ে দিলেন ১০ বলে ১০ রান। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৮ রান। পুরো স্টেডিয়াম, কিংবা কমেন্ট্রি বক্স তখন আশায় উদ্বেল হয়ে যাবে। এই প্রাভিন কুমারই তো সিরিজের প্রথম ম্যাচে হরভজনের সঙ্গে নবম উইকেটে দারুণ এক জুটি গড়ে প্রায় জিতিয়ে দিয়েছিলেন! ভদোদরায় পারেননি, মুনাফ প্যাটেলকে নিয়ে নিশ্চয়ই হায়দরাবাদে করে দেখাবেন। করে তিনি দেখালেন। তবে হাস্যকরভাবে রানআউট হয়ে। ৩ বলে ৫ রান—জয়ের বৃন্ত থেকে পরাজয় ছিনিয়ে আনলেন। ভারত আবারও হারল প্রথম ম্যাচের মতো, ৪ রানে। প্রাভিন কুমারের দোষ কী, তিনি তো নয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন! জাদেজারই বা দোষ কী, তিনি তো ৮ নম্বরে নেমেছিলেন। আস্তে আস্তে কোরাস উঠবে, রায়নারই দোষ কোথায়, তিনি তো টেন্ডুলকারের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ১১৪ বলে ১৩৭ রানের জুটি গড়েছিলেন। যুবরাজ-ধোনিকেই বা দোষ দেওয়া যাবে কীভাবে, তারা তো আগে দুটি ম্যাচ জিতিয়েছেন! অতএব টেন্ডুলকারেরই উচিত ছিল ম্যাচ জিতিয়ে আসা। তিনি পারেননি! তার পরও টেন্ডুলকার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ম্যাচ-সেরার পুরস্কার হাতে তুললেন। যখন প্যাডেল স্কুপ করতে গিয়ে আউট হয়ে ফিরলেন, মানুষের ভালোবাসার পুরস্কার পেলেন তাদের উঠে দাঁড়িয়ে দেখানো আনত শ্রদ্ধায়। এর আগে ৭ রান করেই ওয়ানডেতে প্রথম ১৭ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। তারপর ৮১ বলে ১০টি চার ও ৩টি ছক্কায় করেছেন তাঁর ৪৫তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যেটি তাঁর নবম এবং দ্রুততম। আর এই সেঞ্চুরির পথে ম্লান করে দিয়েছেন দিনের পূর্বভাগের নায়ক শন মার্শকে। বাবা জিওফ মার্শ তাঁর প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেছিলেন ভারতের বিপক্ষে। ছেলে শনও প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন ভারতের বিপক্ষে। মার্শ জুনিয়রের সেঞ্চুরি ও শেন ওয়াটসনের ৯৩ রানের কল্যাণে অস্ট্রেলিয়া উঠল ৪ উইকেটে ৩৫০ রানের পাহাড়ে। এর আগে এত রান করে ভারতের কাছে কখনো হারেনি অস্ট্রেলিয়া। এখানে তাদের চোখে পরাজয় আঁকছিলেন টেন্ডুলকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পারলেন না, ১৪১ বলে ১৯টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৭৫ রানের মুগ্ধতা-জাগানো ইনিংসটাও ডুবল পরাজয়ে। ভাঙা দল নিয়েও সিরিজে ৩-২-এ এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।