'বকেয়া'ও তো আছে কিছু টেস্ট!
বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেছে একবারই। ২০০৩ সালে টেস্ট আঙিনায় হামাগুড়ি দিতে থাকা বাংলাদেশকে ডেকেছিল মহাপরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট মৌসুমে ‘ঝামেলা’ এড়াতে ‘অফ সিজনে’ বাংলাদেশের টেস্ট দুটি ফেলা হয়েছিল নতুন দুই ভেন্যু কেয়ার্নস ও ডারউইনে। স্টিভ ওয়াহর দলের সঙ্গে দুটি টেস্ট খেলেছিল খালেদ মাহমুদের দল। ২০০৬ সালে ফিরতি সফরে অস্ট্রেলিয়া আসে বাংলাদেশে। ২০০৮ সালে আবার ফিরতি সফরে অস্ট্রেলিয়ায় যায় বাংলাদেশ। তবে অতিথির কদর তত দিনে কমে এসেছে। সেবার স্রেফ তিনটি ওয়ানডে, সবগুলোই ওই ডারউইনে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বলল, টেস্ট দুটি ‘বকেয়া’ থাকল। এরপর পেরিয়ে গেছে পাঁচ বছর, বকেয়া বুঝিয়ে দেয়নি অস্ট্রেলিয়া। বকেয়া আদায়ে জোর তাগাদা দিতে পারেনি বাংলাদেশও। উল্টো পাওনা দুটি থেকে বেড়ে হয়েছে চার টেস্ট!
আইসিসির এফটিপিতে (ফিউচার ট্যুর প্রোগাম) বাংলাদেশকে কম টেস্ট দেওয়া নিয়ে হাহাকার চলে আসছে সাড়ে তিন বছর ধরেই। উল্টো সূচি অনুযায়ী যে কটি টেস্ট খেলার কথা, তার সবগুলোও খেলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের সঙ্গে খেলতে অনীহার ব্যাপার যেমন আছে, তেমনি দায় আছে বিসিবি কর্তাদেরও। এফটিপি অনুসরণে অন্যদের বাধ্য করা কিংবা ‘বকেয়া’ আদায় করতে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক দক্ষতারও পরিচয় দিতে পারেননি বিসিবি কর্তারা। এমনিতেই নিজেদের ভাগে পড়েছে কম, টেস্ট সেখান থেকেও তাই কমে গেছে আরও।
অস্ট্রেলিয়ার কথাই ধরুন। ২০০৮ সালের পাওনা ওই দুই টেস্ট রাখা হয়েছিল ২০১০ সালের জুলাইতে। কিন্তু পাওনা শোধ করেনি অস্ট্রেলিয়া। ২০১১ বিশ্বকাপের পর আবার পূর্ণাঙ্গ সফরে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল তাদের। কিন্তু বাংলাদেশে এসে খেলে গেছে স্রেফ তিনটি ওয়ানডে। যথারীতি আশ্বাস মিলেছে পরে পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই চার টেস্ট যে খেলা হচ্ছে না, সেটি নিশ্চিত বলে দেওয়ায় ঝুঁকি খুব একটা নেই।
২০১০ সালেই পূর্ণাঙ্গ সফরে পাকিস্তান যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। নিরাপত্তাজনিত কারণে আর সব দেশের মতো বাংলাদেশও যায়নি পাকিস্তানে। সেই সিরিজ পিছিয়ে দেওয়া হয় ২০১২ সালের এপ্রিলে। পাকিস্তান তখনো নিরাপদ নয়। পিসিবির অনেক প্রচেষ্টার পরও বাংলাদেশ নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে যায়নি সেখানে। না যাওয়ার সিদ্ধান্ত অবশ্যই ঠিক ছিল। কিন্তু অন্যান্য দেশের সঙ্গে পাকিস্তান তো ঠিকই খেলছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, বাংলাদেশের সঙ্গে তবে কেন নয়? বিসিবির কূটনৈতিক ব্যর্থতা প্রতীয়মান এখানেই।
হাস্যকর রকমের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের ব্যাপারও আছে। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডকে ধবলধোলাই করার সিরিজ বাংলাদেশ ক্রিকেটেই স্মরণীয় এক অধ্যায়। কিন্তু ২ টেস্ট ও ৩ ওয়ানডের সিরিজটি স্রেফ ৫ ওয়ানডের সিরিজ করে ফেলেছিল বিসিবি অদ্ভুত যুক্তিতে। পাঁচ মাস পরের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে প্রস্তুতির জন্য দুটি টেস্ট বাদ দিয়ে বাড়ানো হয়েছিল দুটি ওয়ানডে! ওই দুই টেস্টের আর কোনো খবর নেই। ২০১০ সালের নিউজিল্যান্ড সফরে দুটি টেস্ট হওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছিল মাত্র একটি টেস্ট। বাকি এক টেস্ট হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে (পড়ুন এফটিপির গর্ভে)। উদ্ধারের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই।
ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির নতুন প্রধান আকরাম খান অবশ্য আশ্বাস দিলেন পাওনা আদায়ের উদ্যোগ নেওয়ার, ‘এ ব্যাপারটি আমার ভাবনায় আছে। এফটিপির বাইরে টেস্ট আয়োজনের পাশাপাশি চেষ্টা থাকবে পাওনা টেস্টগুলোও বুঝে নেওয়ার। কথাবার্তা, আলোচনার পাশাপাশি যেভাবে এগোলে কাজ হতে পারে, সেভাবেই চেষ্টা করব।’
চেষ্টায় যদি একটি টেস্টও ভাগ্যে মেলে, সেটাও হবে বড় প্রাপ্তি!