ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপিএল জয়

>

রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে ফাইনালটা প্রায় একপেশে বানিয়ে জিতেছে ঢাকা ডায়নামাইটস। এ জন্যই হয়তো সাকিবদের শিরোপা উৎসবটাও হলো দেখার মতো! কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে l ছবি: শামসুল হক
রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে ফাইনালটা প্রায় একপেশে বানিয়ে জিতেছে ঢাকা ডায়নামাইটস। এ জন্যই হয়তো সাকিবদের শিরোপা উৎসবটাও হলো দেখার মতো! কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে l ছবি: শামসুল হক

ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ১৫৯/৯
রাজশাহী কিংস: ১৭.৪ ওভারে ১০৩
ফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ৫৬ রানে জয়ী
বিপিএল চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে দুটো নাম যেন মিশেই গেছে! ঢাকা আর মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রথম দুই বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন ছিল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস, দুবারই দলটার অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফি। তৃতীয় বিপিএল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস শিরোপা জিতলেও মাশরাফি সেবারও চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক। মাশরাফির দল কুমিল্লা এবার আগেই ছিটকে গেছে। কিন্তু ট্রফি জয়ের জন্যই বোধ হয় থেকে গেল ‘ঢাকা’। চতুর্থ বিপিএলে শিরোপা ফিরে এসেছে নতুন নামের ‘ঢাকা’র কাছে। এবার চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটস।

রাজশাহী কিংসের সামনে ১৬০ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ঢাকা। একটা জমাট ফাইনালের আশাই করেছিল তখন সবাই। সাব্বির রহমান আগের ম্যাচটা যেভাবে জিতিয়েছেন, অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি যেভাবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেলেন দলকে, তাতে ঢাকার ১৫৯ রানের সামনে সহজে নুয়ে পড়ার কথা নয় তাদের। কিন্তু আসল জায়গায় এসেই লড়াইয়ের মেজাজ হারিয়ে ফেলল দলটা। ব্যাটিং দেখে কখনোই মনে হয়নি ঢাকাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে তারা। ১৭ ওভার ৪ বলে মাত্র ১০৩ রানে শেষ ইনিংস। মুমিনুল হক, সাব্বির রহমান আর সামিত প্যাটেল ছাড়া দুই অঙ্কের ঘরে যায়নি কারও রান।
নয় নম্বরে নামা কেসরিক উইলিয়ামসকে অবশ্য ড্রেসিং রুমে ফিরে যেতে হয়েছে আউট না হয়েই। ১৭তম ওভারে বোলার ডোয়াইন ব্রাভোর থ্রো সরাসরি আঘাত করে তাঁর ডান কনুইয়ে। হাতে ব্যথা নিয়ে উইলিয়ামস মাঠ ছেড়ে যাওয়ার পরের ওভারেই আন্দ্রে রাসেলের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে যান রাজশাহীর শেষ ব্যাটসম্যান নাজমুল ইসলাম। ঢাকা ফেটে পড়ে শিরোপা জয়ের উল্লাসে। মাঠ প্রদক্ষিণ করে দর্শকদের অভিনন্দনের জবাব দিয়ে ফেরার পথে ব্রাভো উঠে পড়লেন ডিজের মঞ্চে। নিজের গানের সঙ্গে হেলেদুলে নাচলেন নিজেই। নাচালেন অন্যদেরও।
রাতটা শেষ পর্যন্ত এত আলো-ঝলমলে হলেও কাল সন্ধ্যায় ঢাকার শুরুটা খুব স্বচ্ছন্দ ছিল না। ইনিংসের প্রথম ওভারে ১১ রান, কিন্তু সেটা যেভাবে এসেছে, তা মোটেও স্বস্তিতে ছিলেন না দুই ওপেনার মেহেদী মারুফ ও এভিন লুইস। উইলিয়ামসের বল কখনো উঠে এসেছে হেলমেট উচ্চতায়, কখনো ব্যাট ছুঁয়ে ক্যাচের সম্ভাবনা জাগিয়েছে স্লিপে। ৪২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে তো একটা পর্যায়ে কাঁপাকাঁপিই শুরু হয়ে যায় ঢাকার!
রাজশাহী কিংসের মেহেদী হাসান মিরাজ বল হাতে নিয়ে নিজের প্রথম ওভারেই ফেরান মেহেদীকে। নিজের প্রথম ওভারে উইকেট পেয়েছেন আফিফ হোসেনও। ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়ার পরের বলেই অদ্ভুতভাবে স্টাম্পড হয়ে ফিরে গেছেন নাসির হোসেন। এক ওভার পর স্যামির বলে এলবিডব্লু মোসাদ্দেক হোসেন। মাত্র ১৯ রানের ব্যবধানে তিন উইকেট হারানো ঢাকাকে পথ দেখালেন লুইস। ৩১ বলে ৪৫ রান, বাউন্ডারি আটটি। এর তিনটিই আফিফের পরপর তিন বলে। ৩৩ বলে ৩৬ রান করে তাঁকে দারুণ সংগত দিয়েছেন কুমার সাঙ্গাকারা। চতুর্থ উইকেটে দুজনের ৪১ রানের জুটিতেই ঘুরে দাঁড়ায় চ্যাম্পিয়নরা।
লুইস ও সাঙ্গাকারার ব্যাটিং ছাড়া ঢাকার ইনিংসে আছে শুধু একটা বিস্ময়—সাকিব নেমেছেন আট নম্বরে! ৭ বলে ১২ রান করে ফরহাদ রেজার বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ঢাকার অধিনায়ক। রাজশাহীর বোলিং-ফিল্ডিংয়ের প্রাণ ছিলেন এই ফরহাদ। সাকিবের আগে-পরে লুইস আর সাঙ্গাকারার মূল্যবান উইকেট দুটিও তিনিই নেন। নিজের বলে সাঙ্গাকারার ক্যাচ নেওয়া ছাড়াও সামিত প্যাটেলের বলে লং অফ বাউন্ডারিতে দুর্দান্ত আরেকটি ক্যাচ নিয়েছেন—আন্দ্রে রাসেলের। হাতে ক্যাচ জমে গেলেও সেটা নিয়েই মাঠের বাইরে চলে যাচ্ছিলেন। পরে বল মাঠের ভেতর ছুড়ে দিয়ে ফরহাদ দ্বিতীয় চেষ্টায় নিয়েছেন ক্যাচটা।
ফরহাদের এই ঔজ্জ্বল্য ম্লান হয়ে গেছে ঢাকা ডায়নামাইটস শিরোপার হাসির সামনে। পুরো টুর্নামেন্টেই ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স বলার মতো না হলেও সেই হাসিটা সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত অধিনায়ক সাকিবের মুখে। আগেই বলেছিলেন, টুর্নামেন্টে তাঁর ব্যক্তিগত কোনো লক্ষ্য নেই। যেভাবেই হোক জিততে চান শিরোপা। ফাইনালে সাকিবের ঢাকা ডায়নামাইটস সেটা জিতেছে চ্যাম্পিয়নদের মতোই।