মোস্তাফিজের ভালো বোলিংটাও সুখবর

কাল দারুণ বোলিং করেছেন মোস্তাফিজ। ছবি: টুইটার
কাল দারুণ বোলিং করেছেন মোস্তাফিজ। ছবি: টুইটার

গতবার আইপিএলে ক্যামেরা বারবার খুঁজে নিত তাঁকে। মাঠের দৈত্য পর্দায় ভেসে আসত ‌‌‌‌‘আনলিশ দ্য ফিজ’সহ কত রকম স্লোগান। ডাগ আউটেও ক্যামেরার ফোকাসে থাকতেন। এবার জায়গাটা সরে গিয়েছিল মোস্তাফিজের জন্য। ক্যামেরার ফোকাসে রশিদ খান, মোস্তাফিজ আউট অব ফোকাসে থাকা কোনো চরিত্র যেন!

কিন্তু ফর্ম যে সাময়িক, ক্লাসটাই যে আসল—এ কথা নিশ্চয়ই এরই মধ্যে জেনে গেছেন বাংলাদেশের এই কাটার মাস্টার। চোট থেকে সেরে ছন্দ ফিরে পেতে যেকোনো পেসারের সময় লাগে। মোস্তাফিজের একটু বেশিই লাগছে হয়তো। তবে আসল ভয়টা, তাঁর বোলিংয়ের সেই দুর্বোধ্যতার মেঘ যেন কেটে না যায়!

আইপিএলে এক ম্যাচ খেলে অলস সময় কাটানো মোস্তাফিজ দ্রুত নিজের ‘ফিজ’ রূপে ফিরবেন নিশ্চয়ই। ইংল্যান্ড–যাত্রার আগে দেশে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য যতটুকু সময় ছিলেন, তখনই আশ্বস্ত করেছেন। আবার ফিরে আসবেন সেই মোস্তাফিজ। কাল আয়ারল্যান্ড ‌‘এ’ দলের বিপক্ষে তাঁর বোলিংয়ে সেই স্বস্তির সুবাস ছিল। ৫.২ ওভার বোলিং করেছেন। মাত্র ১৭ রানে ২ উইকেট। ছিল একটি মেডেনও।
মাশরাফি, রুবেল, সাকিবও দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু ৩.১৮ ইকোনমি রেটে বোলিং করা মোস্তাফিজের ভালো বোলিংটাই বড় সুখবর। ৭ এপ্রিল থেকে ৯ মে—এই এক মাসে মাত্র একটি ম্যাচ খেলেছেন। তারপরও দ্রুত মাঠে ছন্দ ফিরে পাওয়া অধিনায়ক মাশরাফির জন্যও স্বস্তির।

অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘ পুনর্বাসন। তারপর মাঠে ফেরার পর আবারও অস্বস্তি নিয়ে কিছুদিনের বিরতি। মোস্তাফিজের বোলিংয়ে কোথায় যেন একটা ছন্দপতনের সুর তো ছিলই। শুরুর দিকে একেবারেই অচেনা-আনকোরা ছিলেন। প্রযুক্তির সাহায্যে তাঁর বোলিংয়ের দুর্বোধ্যতা নিশ্চয়ই পড়ে ফেলতে চেয়েছে দলগুলো। শুরুর চমকের পর নিজেদের আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সব ক্রিকেটারের জন্যই তাই জরুরি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সম্পদগুলোর একটি বলে তাঁকে নিয়ে উদ্বেগটাও বেশি।

শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্টে বেশ ভালোই বোলিং করলেন, দুই টেস্টে ৮ উইকেট। উইকেটের চেয়ে তাঁর বোলিংয়ে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের ধুঁকতে থাকার দৃশ্যগুলো বাংলাদেশি সমর্থকদের চোখে বেশি আরাম দিয়েছে। কিন্তু ওয়ানডেতে তিন ম্যাচে ৬ উইকেট পেলেও রান দিয়েছিলেন ১৭১। প্রথম টি-টোয়েন্টি থাকলেন উইকেটশূন্য। তবে সফরের শেষ টি-টোয়েন্টিতে ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়েই খেলতে গিয়েছিলেন আইপিএলে।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদের দলে যোগ দিয়ে পরদিনই মাঠে নামলেন। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে সে ম্যাচে ২.৪ ওভারে দিলেন ৩৪ রান। কয়েকটি ডেলিভারি ছিল এলোপাতাড়ি। যেন লাইন পাচ্ছেন না। তাঁকে আর খেলানোর ঝুঁকি নিল না হায়দরাবাদ।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে মাশরাফি বলে গেছেন, আসল মোস্তাফিজকে তাঁর চাই। সেই মোস্তাফিজকে ফিরিয়ে আনার, তাঁকে নির্ভার রাখার, আত্মবিশ্বাস জোগানোর দায়িত্বটাও কোচ-অধিনায়কের। নিজের চেনা সতীর্থদের মাঝে ফিরে মোস্তাফিজ যেন নিজেকেও ফিরে পেতে শুরু করেছেন। কালকের বোলিংয়ে সেই ছাপ থাকল।
শুরুতে অবশ্য উইকেট পাননি। পেলেন একেবারে শেষে। নিজের ষষ্ঠ আর ইনিংসের ৪২তম ওভারে। ততক্ষণে রুবেল-মাশরাফি-সাকিবদের বোলিংয়ে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ পরাজয়ের দোরগোড়ায়। ৮ উইকেট পড়ে গেছে। ৪২ ওভারের প্রথম দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে ইনিংস মুড়ে দিলেন।
আগামীকাল ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচের আগে এটাই সবচেয়ে বড় সুখবর। এমনকি প্রস্তুতি ম্যাচে সাব্বিরের সেঞ্চুরি, তামিমের ৮৬ আর বাংলাদেশের ১৯৯ রানের জয় ছাপিয়েও!