প্রস্তুতি ম্যাচের হারেও জ্বলুনি

মাশরাফির এই হতাশা আর শোয়েবের ৭২ রানের ইনিংসের পরও বাংলাদেশের দিকেই ঝুলে ছিল সম্ভাবনার পাল্লা। কিন্তু শেষবেলায় এলোমেলো হয়ে গেল সবই। পরশু এজবাস্টনে l এএফপি
মাশরাফির এই হতাশা আর শোয়েবের ৭২ রানের ইনিংসের পরও বাংলাদেশের দিকেই ঝুলে ছিল সম্ভাবনার পাল্লা। কিন্তু শেষবেলায় এলোমেলো হয়ে গেল সবই। পরশু এজবাস্টনে l এএফপি

বার্মিংহাম থেকে বাংলাদেশ দলের বাস ছুটে চলছে লন্ডনের দিকে। বাসের ভেতর তখনো ঘোরলাগা আবহ। এ কী হলো! কীভাবে হলো!
প্রস্তুতি ম্যাচের হারে এমনিতে কোনো তাৎপর্য থাকে না। এ রকম ম্যাচ হারলে দুঃখ-টুঃখও তেমন হয় না খেলোয়াড়দের। প্রস্তুতিই তো মুখ্য সেখানে। কিন্তু এজবাস্টনে পাকিস্তানের কাছে হার বাংলাদেশ দলকে কিছুটা হলেও নাড়িয়ে দিয়েছে।
কাল লন্ডনের পথে থাকা টিম বাস থেকেই কিছুটা আভাস পাওয়া গেল। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা চরম হতাশ। তিনি উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না, এই ম্যাচ কীভাবে হারা সম্ভব! একই হতাশা ছড়িয়ে গোটা দলের মধ্যে। নিজেরা ৩৪১ রান করার পর ২৪৯ রানে পাকিস্তান হারায় ৮ উইকেট। সেখান থেকে জয় ছাড়া অন্য কিছু কল্পনায়ও আসেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। হয়তো সে কারণেই শরীরী ভাষায় চলে এসেছিল কিছুটা আয়েশিভাব। সেটাই কি ডোবাল? নাকি মোস্তাফিজুর রহমান আর রুবেল হোসেনের অভাব! বাংলাদেশের বোলিং যে নখদন্তহীনই মনে হয়েছে এদিন।
এসব নিয়ে দলের মধ্যেও আছে সমালোচনা, হতাশা। ব্যাটসম্যানরা এত রান করে দিয়ে আসার পরও জিততে না-পারা মানে ব্যর্থতা বোলার-ফিল্ডারদের। ম্যাচের স্কোরকার্ডেও তা স্পষ্ট। বেশ কয়েকটি সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। পাকিস্তানকে জয় এনে দেওয়া ফাহিম আশরাফ-হাসান আলী জুটিরই ক্যাচ পড়েছে দুবার।
ম্যাচের পর টিম মিটিং না হওয়ায় খেলোয়াড়দের নিজেদের মধ্যে আলোচিত অনুভূতিগুলোর সবই অনানুষ্ঠানিক। টিম মিটিং হওয়ার কথা কাল লন্ডনে পৌঁছে। সেখানে নিশ্চয়ই প্রস্তুতি ম্যাচের ভুলত্রুটি নিয়ে কথা হবে। কিন্তু বাংলাদেশ দলের আবহে তার আগে থেকেই অশান্তি আর অতৃপ্তির চোরা বাষ্প।
ম্যাচের পরপর বিসিবির শীর্ষ পর্যায় থেকে ফোন গেছে ইংল্যান্ডে। জানতে চাওয়া হয়েছে এমন হারের কারণ, প্রকাশ পেয়েছে অসন্তুষ্টি। তবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এখানে ব্যতিক্রম। দল সূত্রের তথ্য, প্রস্তুতি ম্যাচের হারকে গোনায় ধরতে চান না কোচ। এটি তাঁর কাছে জেগে ওঠার বার্তামাত্র। কোচের বিশ্বাস, এ রকম হারের পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলোয়াড়েরা পান থেকে চুন খসতে দেবেন না, যা দলের ভালো কিছু করার সম্ভাবনা বাড়াবে। বর্তমান দলটার ওপর কোচের প্রচণ্ড আস্থাও আছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির এই দলের সঙ্গে আরও চার-পাঁচজন খেলোয়াড় মিলিয়েই ২০১৯ বিশ্বকাপ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করছেন হাথুরুসিংহে। মূল্যহীন প্রস্তুতি ম্যাচের হার ধীরে ধীরে সাজিয়ে তোলা বাগানে কীটের আক্রমণ ঘটাক, সেটি তিনি চান না।
এজবাস্টনে ম্যাচের শেষ দিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল খেলা দেখতে আসা প্রবাসী বাংলাদেশি আর পাকিস্তানি দর্শকদের মধ্যে। ম্যাচ মাশরাফিদের দিকে একটু হেললেই বাংলাদেশি সমর্থকদের উল্লাস শোনা যায়, সেটি মাঝেমধ্যে দুয়ো হয়ে ধেয়ে গেছে পাকিস্তানি সমর্থকদের দিকে। আবার পাকিস্তানের জয়ের সম্ভাবনা জাগলে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। বাংলাদেশি সমর্থকেরাই তখন দুয়োর শিকার। সমর্থকদের জন্য সহানুভূতিও শেষ দিকে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে জয়ের আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ।
মাঠের আরেকটা ব্যাপারও ছিল উল্লেখযোগ্য। এজবাস্টনে খেলা হয়েছে মাঠের এক পাশের একটি প্র্যাকটিস উইকেটে। সেটি মাঝমাঠ থেকে এতটাই দূরে যে, ৩০ গজের বৃত্ত শেষ হলে মাঠও প্রায় শেষ। এ রকম উইকেটে খেলা নিয়ে আপত্তি ছিল বাংলাদেশ দলের। তবে সমস্যাটা দুই দলের জন্যই ছিল বলে খেলা শেষে এটিকে হারের কোনো অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে চায়নি দল। খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওপেনার ইমরুল কায়েস বরং বলেছেন, ‘ওরকম পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ হারা দুঃখজনক। ম্যাচ আমাদের হাতেই ছিল, সবকিছুই ভালো হচ্ছিল। একটা সময় মনে হচ্ছিল আমরা এমনিতেই জিতে যাব। দিনটা আমাদেরই ছিল, কিন্তু আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। ওরা জয়টা ছিনিয়ে নিয়েছে।’
হারলে যন্ত্রণা থাকবেই। তবে লন্ডনে পৌঁছানোর পর সেটিকে আর বয়ে বেড়ানোর কোনো অর্থ নেই। কাল ওভালে ভারতের বিপক্ষে আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচ। এরপর তো শুরু হয়ে যাবে আসল খেলাই। যন্ত্রণাকে শক্তিতে রূপ দিয়ে এখন সেদিকেই তাকানো উচিত বাংলাদেশ দলের।