ভোট দিতেও মেসি-রোনালদো 'শত্রুতা'!

এবারও মেসি-রোনালদো ভোট দেননি পরষ্পরকে!
এবারও মেসি-রোনালদো ভোট দেননি পরষ্পরকে!

‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।’ খুবই গণতান্ত্রিক কথা।

কিন্তু বিপত্তি ওই ‘যাকে খুশি তাকে দেওয়া’ নিয়েই। একবার ভেবে দেখুন তো, যোগ্য প্রার্থী বিবেচনায় আপনি আপনার আপনজনকে ফেলে ভোট দিলেন তারই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে। এবং ভোটের পরদিনই প্রকাশ করা হলো আপনি কাকে ভোট দিয়েছেন তার তালিকা! এ অবস্থায় আপনার কী করণীয়? বিবেক বিবেচনা ভুলে আপনজনকে ভোট দেওয়া, নাকি স্বজনপ্রীতি বাদ দিয়ে সঠিক ব্যক্তিকে নির্বাচন?

তবে যুদ্ধ এবং ভালোবাসায় যেমন সবকিছুই বৈধ, খেলাধুলায়ও বুঝি তেমনি স্বজনপ্রীতি তেমন খারাপ কিছু নয়। এবারের ব্যালন ডি’অরেই এর ভূরি ভূরি প্রমাণ পাওয়া যাবে। ফিফার টেকনিক্যাল টিম কর্তৃক নির্বাচিত ২৩ জনের তালিকার ওপর মূলত চলে ভোটাভুটি। সেই তালিকা থেকে সারা বিশ্বের প্রতিটি দেশের জাতীয় দলের কোচ, অধিনায়ক এবং সাংবাদিকদের ভোটে নির্বাচিত হন বিজয়ী। প্রত্যেক ভোটার প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় এভাবে তাঁর পছন্দের তিনজনকে ভোট করতে পারেন। এর মধ্যে নির্বাচিত প্রথমজন ৫, দ্বিতীয়জন ৩ এবং তৃতীয়জন পাবেন ১ পয়েন্ট।

এ সুযোগের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার করেছেন কোচ এবং অধিনায়কদের অনেকেই। নিজ নিজ দল, দেশ, মহাদেশ বা জাতির প্রতি অনেকেরই দেখা গেছে বেশ ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’। আইভরি কোস্টের অধিনায়ক দিদিয়ের দ্রগবার প্রথম পছন্দ যেমন স্বদেশি ইয়াইয়া তোরে। তালিকায় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে মেসি এবং রোনালদো থাকলেও দ্রগবার তালিকায় সংকুলান হয়নি ফ্রাঙ্ক রিবেরির নাম। তুর্কি বংশোদ্ভূত মেসুত ওজিলকেই প্রথম পছন্দ তুর্কি কোচ ফাতিহ তেরিমের। ইতালির কোচ সিজার প্রানদেল্লির তালিকায় প্রথমেই আছে আন্দ্রে পিরলোর নাম। জার্মান অধিনায়ক ফিলিপ লাম বায়ার্ন সতীর্থকেই রেখেছেন প্রথম পছন্দ হিসেবে। ফ্রান্স জাতীয় দলের অধিনায়কের প্রথম পছন্দও এই ফরাসি।

স্পেন অধিনায়ক ইকার ক্যাসিয়াসের প্রথম পছন্দও তার রিয়াল মাদ্রিদ সতীর্থ রোনালদো। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় পছন্দ? এ ক্ষেত্রে তিনি আরও কৌশলী। রোনালদোর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মেসিকে কোনো পয়েন্ট দেওয়ার পথেই হাঁটলেন না। তাঁর দ্বিতীয় পছন্দ রিবেরি হলেও তৃতীয় পছন্দ আরিয়েন রোবেন।

যাঁদের নিয়ে এত কথা, তাঁরা নিজেরা কাকে ভোট দিলেন? কোচ, অধিনায়ক বা ক্রীড়া সাংবাদিকের কোনটিই না হওয়ায় রিবেরির ভোটাধিকারই ছিল না। তবে অধিনায়ক হিসেবে নিজ নিজ দেশের পক্ষে ভোটদানের সুযোগ পাওয়া মেসি-রোনালদোও হাঁটলেন নিরাপদ সড়কেই। মেসির পছন্দের তালিকায় নেই রিবেরি বা রোনালদো। একই অবস্থা রোনালদোর তালিকায়ও। মেসির পছন্দ তাঁর বার্সোলোনা সতীর্থ ইনিয়েস্তা, জাভি ও নেইমার। আর রোনালদোর তালিকা রামাদেল ফ্যালকাও, গ্যারেথ বেল ও মেসুত ওজিলদের নিয়ে।

তবে সবাই আবার ভালোবাসায় ভেসে যাননি। যেমন ব্রাজিলের কোচ বা অধিনায়ক। স্কলারি বা থিয়াগো সিলভার তালিকায় নেই কোনো ব্রাজিলীয়। কোচ এবং অধিনায়কেরা তাঁদের ভালোবাসাকে প্রথমে স্থান দিলেও এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা তাঁদের পেশাসুলভ নিরপেক্ষতাকে স্থান দিয়েছেন ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ওপরে। তাঁদের ভোট সবচেয়ে বেশি গেছে রিবেরির ব্যালটে, অনেকের চোখে যে রিবেরিই আসলে ছিলেন এবারের ব্যালন ডি’অরের সবচেয়ে যোগ্য দাবিদার।

বাংলাদেশের অধিনায়ক মামুনুল ইসলামের ভোট গেছে মেসি, রোনালদো এবং জাভির ব্যালটে। কোচ ক্রুইফের পছন্দ মেসি, রোনালদো এবং ইব্রাহিমোভিচ। আর সাংবাদিক মাহমুদ রায়হান নির্বাচন করেছেন যথাক্রমে রিবেরি, রোনালদো এবং মেসিকে।

প্রতিবছরই ব্যালন ডি’অরের পর ফিফা প্রকাশ করে থাকে ভোটের এ তালিকা। ফিফা একে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির অংশ দাবি করলেও এই তালিকা নিয়ে আছে নানা মুনির নানা মত। কে কাকে ভোট দিলেন, সেই তালিকা প্রকাশিত হবে, এ তথ্য মাথায় রেখেও কেউ কেউ ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজের বন্ধু-সতীর্থদেরই বেছে নিতে প্রভাবিত হন। এই ঝামেলায় যাবেন না, এজন্য তো জোয়াকিম লো এবার ভোটই দিলেন না। জার্মানির কোচের যুক্তি, এক শিষ্যকে ভোট দিতে গিয়ে অন্য শিষ্যর মন খারাপ করার কোনো ইচ্ছাই তাঁর নেই!