নিজের মতো করেই ইতিহাস গড়ছি : গারবিনিয়ে মুগুরুজা

উইম্বলডনের শিরোপা জয়ের পর সাংবাদিকদের বলেছেন, র‍্যাঙ্কিং নয়, আরও আরও গ্র্যান্ড স্লাম জেতাই তাঁর মূল লক্ষ্য। গত বছর ফ্রেঞ্চ ওপেনের পর এবার উইম্বলডন—এরই মধ্যে দুটি গ্র্যান্ড স্লাম জিতেও ফেলেছেন। বয়স মাত্র ২৩, ‘আরও আরও’ গ্র্যান্ড স্লাম জেতার অঢেল সময় গারবিনিয়ে মুগুরুজার সামনে পড়েই আছে। স্প্যানিশ মেয়ের স্বপ্নই যে নিজের মতো ইতিহাস গড়া। গত রোববার উইম্বলডনের চ্যাম্পিয়নস ডিনারের পর স্প্যানিশ দৈনিক মার্কাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উইম্বলডনে মেয়েদের এককের নতুন চ্যাম্পিয়ন বললেন তাঁর অতীতের গল্প, বর্তমানের রোমাঞ্চ আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন—

* উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ঘুমোতে পেরেছেন?

মুগুরুজা: খুব বেশি ঘুমাইনি। (জেতার পর) তাড়াতাড়িই ঘুম এসে গিয়েছিল, কিন্তু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেও যাই। গত দুই সপ্তাহে যা যা ঘটেছে, সব মনে হতে থাকে। এরপর আর ঘুমাতে পারিনি।

* ট্রফি পাশে নিয়েই ঘুমিয়েছিলেন?

মুগুরুজা: না, ওটা সঙ্গে ছিল না। ওরা আমাকে ট্রফিটা দিয়েছেই রোববারের চ্যাম্পিয়নস ডিনারে।

* ট্রফিগুলোর আসল অনুভূতি পেতে রজার ফেদেরার সব কটিরই প্রমাণ আকারের ট্রফি বানিয়ে ঘরের শেলফে রাখেন। আপনিও তা-ই করবেন?

মুগুরুজা: ওরা কেমন ট্রফি দেয়, সেটা আগে দেখি। অবশ্যই (ওরা যে ট্রফিটা দেবে) সেটা শুধুই স্যুভেনির। তারপর ট্রফি নিয়ে কী করা যায়, ভাবতে হবে।

* শিরোপা জেতার পর যত বার্তা পেয়েছেন, সব কটি দেখার, সেগুলোর উত্তর দেওয়ার সময় পেয়েছেন?

মুগুরুজা: শুধু আমার পরিবার, আর আমার সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের বার্তার উত্তর দিয়েছি। সব কটি এখনো দেখার বাকি, তবে সব কটিরই উত্তর দেব।

* ফাইনাল শেষে নেটে ভেনাস উইলিয়ামস কী বলেছিলেন, মনে আছে?

মুগুরুজা: অনেক আওয়াজ ছিল তখন। তবে আমি ওকে বলেছিলাম, ‘ভালো খেলেছ’, সে-ও আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে।

* পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের পর টানেলে কিং হুয়ান কার্লোসের (স্পেনের সাবেক রাজা) সঙ্গে দেখা হয়েছিল আপনার। কেমন লাগল?

মুগুরুজা: টানেলে তাঁর সঙ্গে একেবারে মুখোমুখি দেখা হয়ে গেছে। খুব রোমাঞ্চিত ছিলাম। উনি আমার খেলা দেখতে এসেছেন! তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে আগে চিনতাম না। উনি আমাকে বলেছেন, তাঁর ছেলে (ফেলিপে সিক্স, স্পেনের বর্তমান রাজা) আমাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন।

* গত বছর রোলাঁ গারোতে জেতার পর সব সময়ই বলেছেন, ওই জয়টাই আপনার সেরা। উইম্বলডন শিরোপাকে কীভাবে দেখছেন?

মুগুরুজা: রোলাঁ গারোতে জেতার পর যে অনুভূতির মধ্য দিয়ে গেছি, সেটি থেকে শেখার চেষ্টা করব। শান্ত থাকার, এই জয়টাকে উপভোগ করার চেষ্টা করব। দুটি সাফল্যের মধ্যে তুলনা করা কঠিন। প্যারিসে শিরোপা জেতার পরের দিনই আমি খেলতে নেমে গিয়েছিলাম। (উইম্বলডন জয়ের) এই মুহূর্তটা আমি আরেকটু বেশি সময় ধরে উপভোগ করতে চাই।

* প্রথম মেজর (২০১৬ ফ্রেঞ্চ ওপেন) জেতার পর বলেছিলেন, পা মাটিতে রাখারই চেষ্টা করবেন, না হলে সেটা বড় পতনও ডেকে আনতে পারে। কী মনে হয়, গত এক বছরে সেটা করতে পেরেছেন?

মুগুরুজা: আমি সব সময় পা মাটিতে রাখারই চেষ্টা করি। আরেকবার বলি, এই জয়ে আমার জীবন বদলাবে না। সবাই ভাবছেন, আমি বদলে যাব। আমি বলি, বদলাব না। আমার দায়িত্ব, চাপ হয়তো আরও বাড়বে, কিন্তু আমি সেই একই মানুষ থাকব।

* এক মাস আগে প্যারিসে (২০১৭ ফ্রেঞ্চ ওপেনে) কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিয়েছিলেন। আর শনিবার টেনিসের তীর্থভূমির সবুজ কার্পেটে কেঁদেছেন আনন্দের কান্না...

মুগুরুজা: হ্যাঁ, সত্যি! কত দ্রুতই না সবকিছু বদলে যায়! টেনিসের এই একটা ভালো দিক, দ্রুতই আপনাকে সব ভুলিয়ে দিতে পারে। সম্ভবত প্যারিসে আমি একটু ভয়ে ভয়ে ছিলাম, কারণ প্রথমবার কোনো গ্র্যান্ড স্লামে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খেলতে নেমেছিলাম।

* ২০১৫ সালে সেরেনা উইলিয়ামস (ফাইনালে মুগুরুজাকে হারানোর পর) আপনাকে বলেছিলেন, আপনি একদিন উইম্বলডন জিতবেন। ভেনাসকে হারানোর আগে মনে মনে কি এমন কিছু কল্পনা করেছিলেন?

মুগুরুজা: আমি তো ভেবেছিলাম, কখনোই জিতব না। কারণ, সেরেনার বিপক্ষে অনেক বড় একটা সুযোগ হারিয়েছিলাম। তেমন কিছুর পর আবার ফাইনালে ওঠা, শিরোপা জেতা সহজ নয়। এবার ভেনাসের বিপক্ষে যখন ফাইনালে উঠলাম, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম, আরেকবার এমন সুযোগ হাতছাড়া করব না।

* উইম্বলডনের প্রথম স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়ন কনচিতা মার্টিনেজ আপনার কোচ। কোর্টে নামার আগে তাঁর শেষ উপদেশ কী ছিল?

মুগুরুজা: তিনি আমাকে বলেছিলেন, বড় করে নিশ্বাস নাও। এটা অনেক বড় একটা মুহূর্ত, এমন মুহূর্তগুলোতে আমরা সবাই-ই স্নায়ুচাপে ভুগি, কিন্তু সেটি নিয়ে যেন দুশ্চিন্তা না করি। আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন তিনি।

* উইম্বলডন ট্রফিতে যখন নিজের প্রতিবিম্ব দেখলেন, কেমন লেগেছিল?

মুগুরুজা: স্বপ্ন সত্যি হওয়ার অনুভূতি। তার ওপর আপনি যখন উইলিয়ামস বোনদের কাউকে ফাইনালে হারাবেন, সেটির অনুভূতি অন্য রকম। কারণ আপনি জানবেন, আপনি সেরাদের একজনকে হারিয়েছেন।

* বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানের দিকেও একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন। ওটাও কি আপনার একটা লক্ষ্য?

মুগুরুজা: গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপাই বেশি জিততে চাইব, তাতে নাম্বার ওয়ানের দিকে আপনি এমনিতেই এগিয়ে যাবেন। (র‍্যাঙ্কিংয়ের চেয়েও) হাতে ট্রফি ধরার অনুভূতিটাই বেশি পছন্দ আমার।

* শনিবার (শিরোপা জেতার পর) বলেছিলেন, খেলাটাতে ইতিহাস গড়তে চান। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, ইতিহাস আপনি এরই মধ্যে গড়তে শুরু করে দিয়েছেন।

মুগুরুজা: নিজের মতো করেই ইতিহাস গড়ছি আমি। বড় টুর্নামেন্ট, বড় মঞ্চ আমার সব সময়ই পছন্দের। সেগুলোতে জিততেও চাই।

* আপনার সিভিটা যে খুব অদ্ভুত, সে ব্যাপারে খেয়াল আছে? ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত চারটি শিরোপা জিতেছেন, তার অর্ধেকই গ্র্যান্ড স্লাম!

মুগুরুজা: একটু অদ্ভুতই এটা। কারণ, অন্যদের তো (গ্র্যান্ড স্লামের বাইরে) অন্য ট্রফি অনেক বেশি থাকে।

* ফাইনালের পর স্বীকার করেছিলেন যে আপনি চ্যাম্পিয়নস ডিনারে নাচতে চান, আর সেটা যদি হয় রজার ফেদেরারের সঙ্গে, তাহলে আরও ভালো। এটা কি জানতেন যে ১৯৭৬ সাল থেকে চ্যাম্পিয়নদের নাচের চল আর নেই?

মুগুরুজা: এই সেদিনই এটা শুনলাম। আর নিজেকে বলছিলাম, “গারবিনিয়ে, এই পুরোটা সময় তোমাকে ঠকানো হয়েছে।” খুব করে চাইছিলাম সুন্দর একটা পোশাক কিনতে, আর এই ট্র্যাকস্যুট ছেড়ে সেটি পরতে।

* চার বছর আগেই উইম্বলডনে আপনার অভিষেক হয়েছিল, আর এখন আপনার হাতে শিরোপা। সবকিছু কি একটু বেশিই দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে?

মুগুরুজা: সময়ের হিসাবে খুব বেশি দিন হয়তো হয়নি, তবে আমার কাছে তো মনে হচ্ছে, একটা জীবন পেরিয়ে গেছে। আমি ভেবেছিলাম, ঘাসে কখনোই আমি ভালো খেলব না। কিন্তু এখন এটা আমি ভালোবাসি।