জার্মানিতে খেলতেই চাননি!

সিদ্দিকুর রহমান!
সিদ্দিকুর রহমান!

এশিয়ান ট্যুরে নতুন যোগ হয়েছে টেক সলিউশন মাস্টার্স। বেঙ্গালুরুর কর্ণাটক গলফ অ্যাসোসিয়েশন কোর্সে ৩ আগস্ট শুরু হবে এই টুর্নামেন্ট। ভারতের এই টুর্নামেন্টে খেলবেন বলে এক মাস আগেই বিমানের টিকিট কেটে রেখেছিলেন সিদ্দিকুর রহমান। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলান। ঠিক করেন জার্মানিতে খেলবেন ইউরোপিয়ান ট্যুরে। পরশু হামবুর্গের পোরশে ওপেন জিততে পারেননি, কিন্তু ইউরোপের বড় বড় গলফারকে চমকে দিয়ে যুগ্মভাবে তৃতীয় হয়েছেন। এই পারফরম্যান্সে গলফ-বিশ্বেই একটা ঢেউ তুলেছেন সিদ্দিকুর! ফেসবুকে তাঁর অফিশিয়াল পেজে তাই শুধুই অভিনন্দনের জোয়ার। 

এশিয়ান ট্যুরে নিয়মিত সিদ্দিকুরের সরাসরি ইউরোপিয়ান ট্যুরে খেলার সুযোগ কখনো মেলেনি। শর্ত সাপেক্ষে সিদ্দিকুর এর আগে খেলেছেন ‘কো-স্যাংশনড’ আফ্রো-এশিয়ান ট্যুরে মরিশাসে, সুইজারল্যান্ডে ইউরোপিয়ান ট্যুরে। কিন্তু এবারই প্রথম তাঁকে সরাসরি আমন্ত্রণ জানায় ইউরোপিয়ান ট্যুর কর্তৃপক্ষ। অবশ্য এ জন্য ইউরোপিয়ান ট্যুরের ক্যাটাগরি-২২ শর্তটি পূরণ করতে হয়েছে। সেটি পূরণ হয়েছে গত বছর এশিয়ান অর্ডার অব মেরিটে ৩০ জনের মধ্যে থাকায়। এরপর ইউরোপিয়ান ট্যুরে খেলবেন বলে নির্দিষ্ট অঙ্কের ফি দিয়ে নামও নিবন্ধন করেন। তবু জার্মানিতে খেলার নিশ্চয়তা ছিল না সিদ্দিকুরের। অপেক্ষমাণদের তালিকায় ছিলেন ৪৪তম। একেবারে শেষ মুহূর্তে জার্মানিতে খেলার আমন্ত্রণ পান।

এ-যাত্রায় সিদ্দিকুরের ভাগ্যটাও পক্ষে ছিল। আগে থেকেই নেওয়া ছিল জার্মানির ভিসা। তাই সিদ্ধান্তটা নিতে দেরি করেননি। ২৩ জুলাই ওঠেন জার্মানিগামী বিমানে। কিন্তু হামবুর্গের গ্রিন ইগল গলফ কোর্স দেখে প্রথমে একটু ভড়কে যান সিদ্দিকুর, ‘আমার ক্যারিয়ারে এর আগে কখনো এমন লম্বা কোর্সে খেলিনি। এটা ইউরোপিয়ান ট্যুরেরই অন্যতম দীর্ঘ কোর্স। কোনো টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়ার আগে ওই কোর্সের লে-আউট ও ইয়ার্ডেজ একবার হলেও দেখে নিই। এখানে সেই সুযোগ একদমই পাইনি। ইউরোপে খেলার সুযোগ পাওয়ার রোমাঞ্চটাই তখন কাজ করছিল আমার মধ্যে। কিন্তু এমন কোর্সে খেলতে মোটেও অভ্যস্ত নই। তাই ভাবছিলাম, এখানে এসে হয়তো ভুলই করেছি।’

ফিটনেস ট্রেনিংটা ভালো ছিল বলে সিদ্দিকুর অবশ্য আত্মবিশ্বাসীই ছিলেন। হামবুর্গের এই কোর্সে অবিশ্বাস্য কিছু পাটিং করেছেন, খেলেছেন বগিহীন রাউন্ড। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত একটি সপ্তাহই পার করেছেন। বাংলাদেশের সেরা গলফারের কণ্ঠে উচ্ছ্বাসটা ধরা পড়ল পরিষ্কার, ‘সত্যি একটা দুর্দান্ত টুর্নামেন্ট গেছে। আমি এতটা আশা করিনি। তবে ভাগ্যও ভালো ছিল, বিশেষ করে পাটিংগুলো হয়েছে অসাধারণ।’ শেষ রাউন্ডে ১৮তম হোলের দ্বিতীয় শটটা জলাশয়ে পড়লেও দমে যাননি সিদ্দিকুর, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে ওটা বাইরে গেল। তবে নিজেকে বারবার বলছিলাম, কোনো সমস্যা নেই। এখনো অনেক দূর যেতে পারব। একটা ভালো শটই সব বদলে দিতে পারে। আসলে ওখানে এত বেশি দর্শক ছিলেন, এত জোরে ওরা হাততালি দিচ্ছিলেন তা দেখেই উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। এরপর অসাধারণ একটা পাটিং করি।’ খেলা শেষে একটু বিশ্রামেরও সময় পাননি। ঘণ্টা দুয়েক পরই উড়াল দিতে হয়েছে ভারতের উদ্দেশে। হামবুর্গ থেকে দুবাই হয়ে সিদ্দিকুর সরাসরি গেছেন বেঙ্গালুরু।

ইউরোপিয়ান ট্যুরে তৃতীয় হওয়ার সুবাদে সিদ্দিকুর জিতেছেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৩২৯ মার্কিন ডলার (প্রায় ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা)। তবে আর্থিক উন্নতির চেয়েও বড় উন্নতিটা হয়েছে র‌্যাঙ্কিংয়ে। সর্বশেষ বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে ৩৯৪ থেকে ১১০ ধাপ এগিয়ে ২৮৪ নম্বরে উঠে এসেছেন। জার্মানি থেকে আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি নিয়ে বেঙ্গালুরুতে আরও ভালো কিছু করার প্রত্যাশায় সিদ্দিকুর, ‘ভালোর তো শেষ নেই। আমার জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ইউরোপে খেলা। সেই চ্যালেঞ্জ ভালোভাবেই উতরে গেছি। আশা করি, বেঙ্গালুরুতেও ভালো কিছু করব।’