আর ফিরবেন না বোল্ট

মা-বাবাকে নিয়ে লন্ডন অলিম্পিক স্টেডিয়ামে উসাইন বোল্ট। পরশু তোলা ছবি l এএফপি
মা-বাবাকে নিয়ে লন্ডন অলিম্পিক স্টেডিয়ামে উসাইন বোল্ট। পরশু তোলা ছবি l এএফপি

এক দিন আগেই ব্যথিত উসাইন বোল্টকে দেখেছিল বিশ্ব অ্যাথলেটিকস। নিজের শেষ দৌড়টা শেষ করার আগেই মুখ থুবড়ে পড়ে গেছেন ধরণির দ্রুততম মানব। বিয়োগান্ত সেই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পর পরশু আবার লন্ডনের অলিম্পিক স্টেডিয়াম দেখল উসাইন বোল্ট। এসেছিলেন দর্শকদের কাছে বিদায় নিতে! আয়োজকেরাই পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন—বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ দিনে মাঠে আনা হবে বোল্টকে। দর্শকেরা যাতে বিদায় সম্ভাষণ জানাতে পারেন সর্বকালের সেরা স্প্রিন্টারকে!

বোল্ট আগের দিনের দুর্ঘটনা ভুলে যথারীতি প্রাণবন্ত। এক দিন আগে কী ঘটেছে, সেটি যেন মনে করতে নেই! গ্যালারির দিকে মুখ করে ট্র্যাকে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানাচ্ছেন দর্শকদের, তো শূন্যে তির ছোড়ার চিরচেনা ভঙ্গি করে দিচ্ছেন আনন্দ। একসময় তিনি মুখোমুখি সংবাদমাধ্যমের। বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে চিরকালই যে প্রশ্নটার মুখোমুখি হতে হয় তারকাদের, ব্যতিক্রম হয়নি এদিনও।

আবার কি কখনো ফেরার চিন্তাভাবনা করবেন?

‘না’—দ্ব্যর্থহীন বোল্টের উচ্চারণ, ‘আমি অনেককেই দেখেছি, অবসরের পর ফিরে এসেছে এবং আরও খারাপ করেছে। অনুশোচনার আগুনে পুড়েছে। আমি সেসব লোকের একজন হতে চাই না।’

চেয়েছিলেন শেষটা সাফল্যের রঙে রাঙাতে। সেটি না হওয়াটা বোল্টের কাছে ‘পীড়াদায়ক’। কিন্তু এটিকে বড় করে দেখেন না, ‘খেলাটায় আমি যা অর্জন করেছি, একটা চ্যাম্পিয়নশিপ সেটি বদলে দেবে বলে বিশ্বাস করি না।’ রোববারের দুর্ঘটনাটা যদিও মনে রেখেছেন, ‘কেউ একজন বলছিলেন, মোহাম্মদ আলীও শেষ লড়াইয়ে হেরে গিয়েছিলেন। তাই এটা নিয়ে মন খারাপের কিছু নেই।’

২১ আগস্ট পা রাখবেন একত্রিশে। আরও ১৯ বছর পর কী অবস্থায় দেখা যাবে তাঁকে? হাসতে হাসতেই এক সাংবাদিক প্রশ্নটা করেছিলেন। ‘কোনো ধারণা নেই’—এটুকু দিয়ে শুরু করলেও, উত্তরের পরের অংশে বোল্ট দিয়েছেন নিজের রসবোধের পরিচয়, ‘আশা করি, তত দিনে বিয়ে করব। তিনটি বাচ্চা থাকবে। তখনো হয়তো ট্র্যাকে থেকেই খেলাটির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’ নিজের ছেলেমেয়েদের স্প্রিন্টার বানাবেন কি না, সেই প্রশ্নেরও উত্তর দিয়েছেন, ‘আমার বাচ্চাদের আমি ট্র্যাকে দেব কি না বলতে পারছি না। আমি সেসব অভিভাবকের মতো হব না যাঁরা, জোর করে ছেলেমেয়েদের সেটা করান, যা করতে তারা আগ্রহী হয় না।’

অ্যাথলেটিকসে কী উত্তরাধিকার রেখে যাচ্ছেন? জবাব দিতে একটু সময় নিয়েছেন বোল্ট, ‘কঠোর পরিশ্রম করে আমি প্রমাণ করেছি যেকোনো কিছুই সম্ভব। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি কিশোরদের জন্য এটাই ভালো বার্তা, “নিজেকে এগিয়ে নাও, শক্তিশালী হও, যতটা পারো ভালো মানুষ হও”।’ ডোপকে সব সময়ই ‘না’ বলতে নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বোল্ট।

অবসর-পরবর্তী এই সময়টিতে কী করবেন? এই প্রশ্নে উত্তর দিতে বেশি ভাবতে হয়নি বোল্টকে, ‘প্রথমে আমি যা করব তা হলো—আমোদ-ফুর্তি। পার্টি করব, পান করব। এখন শরীরটা একটু এলিয়ে দিতে চাই।’ রয়টার্স, আইএএএফ।