সুপার কাপ রিয়ালেরই

মৌসুমের দ্বিতীয় শিরোপা গেল রিয়ালের ঘরে। ছবি: রয়টার্স
মৌসুমের দ্বিতীয় শিরোপা গেল রিয়ালের ঘরে। ছবি: রয়টার্স

ন্যু ক্যাম্পেই কাজটা অনেক দূর এগিয়ে দিয়ে এসেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। বার্সেলোনার ঘরের মাঠে গত রোববার ৩-১ গোলে জেতার পর আজ বার্নাব্যুর ম্যাচটা ছিল অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতার। কিন্তু প্রতিপক্ষ লিওনেল মেসির দল বলেই ‘অন্য কিছু’ ঘটার একটা সম্ভাবনা বা শঙ্কা যা-ই বলা হোক না ছিল, কিন্তু সেই ‘সম্ভাবনা’ কিংবা ‘শঙ্কা’কে ফুৎকারে উড়িয়ে ২-০ গোলের জয়ে (হোম ও অ্যাওয়ে মিলিয়ে ব্যবধান ৫-১ ) মৌসুমের প্রথম শিরোপা সুপার কাপটা নিজেদের করেই রাখল জিনেদিন জিদানের দল।

দুর্দান্ত গোলের পর এসেনসিওকে নিয়ে রিয়াল-সতীর্থরা মাতলেন বাঁধভাঙা আনন্দে। ছবি: রয়টার্স
দুর্দান্ত গোলের পর এসেনসিওকে নিয়ে রিয়াল-সতীর্থরা মাতলেন বাঁধভাঙা আনন্দে। ছবি: রয়টার্স

আদ্যন্ত প্রাধান্য বিস্তার করে খেলা এই ম্যাচে রিয়াল বার্সেলোনার কাজটা অনেক বেশি কঠিন করে তুলেছিল ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই। ‘নতুন সেনসেশন’ মার্কো এসেনসিও ৩০ গজ দূর থেকে চকিতে নেওয়া এক শটেই দলকে এগিয়ে নিলেন। ৩৯ মিনিটে মার্সেলোর বাড়ানো এক বল বার্সা ডি বক্সে ধরে চমৎকার এক গোল করে করিম বেনজেমা ম্যাচের যাবতীয় উত্তেজনা একপ্রকার শেষই করে দেন।

এমন উল্লাস এসেনসিওকেই মানায়। ছবি: রয়টার্স
এমন উল্লাস এসেনসিওকেই মানায়। ছবি: রয়টার্স

রিয়াল তার শক্তির জায়গাটা আজ আবারও প্রমাণ করেছে। দলটির ভিত্তি যে কত শক্ত, সেটি বোঝা যায়, যখন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার বিপক্ষে মূল একাদশের চার খেলোয়াড়—রোনালদো, ইসকো, গ্যারেথ বেল ও কাসেমিরোকে ছাড়াই জিদানের দল স্বাচ্ছন্দ্যেই কেবল নয়, জয় তুলে নেয় রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করে খেলেই। লিওনেল মেসির দলের লজ্জাটা আরও বড় হতে পারত। মার্সেলো দারুণ একটি সুযোগ মিস করেছেন, লুকাস ভাসকেজের পা থেকে যাওয়া বলটি পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়েছে! শেষের দিকে ভাসকেজের ক্রস থেকে বেনজেমার হেড গোলে ঢোকেনি জেরার্ড পিকের কল্যাণে।

মেসি পেরে উঠলেন না রিয়াল-ফুটবলারদের সঙ্গে। ছবি: রয়টার্স
মেসি পেরে উঠলেন না রিয়াল-ফুটবলারদের সঙ্গে। ছবি: রয়টার্স

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পাঁচ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের কাছে ম্যাচের আগেই আপিল করেছিল রিয়াল। কিন্তু সেই আবেদন গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। বার্নাব্যুর বক্সে বসেই রোনালদো দেখেছেন ম্যাচটি। মাঠের দিকে তাকিয়ে নিজেও হয়তো অবাক হয়ে ভাবছিলেন, ফরাসি কিংবদন্তির জিদানের হাতে গড়া দলটির এখন তাঁকে ছাড়াও খুব ভালোই চলে। এক নেইমারের বিদায়ে বার্সেলোনার ‘ভোঁতা’ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদের ‘রোনালদোবিহীন’ একাদশের তুলনা করলে ব্যাপারটা তো তেমনই দাঁড়ায়।

বার্নাব্যুতে হতাশ মেসি। চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু দলকে টেনে ওঠাতে পারেননি। ছবি: রয়টার্স
বার্নাব্যুতে হতাশ মেসি। চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু দলকে টেনে ওঠাতে পারেননি। ছবি: রয়টার্স

বার্সেলোনা যে সুযোগ পায়নি, সেটি বলা যাবে না। সুযোগ পেয়েছে—দুর্ভাগ্যও পিছু তাড়া করেছে তাদের। নয়তো মেসি ও সুয়ারেজের দুটি প্রচেষ্টা গোলপোস্টে আটকে যাবে কেন!
এসেনসিওকে নিয়ে কিছু বলা উচিত। তাঁকে স্প্যানিশ ফুটবলের নতুন সেনসেশন কেন বলা হচ্ছে, সেটি আজ আবারও বুঝিয়ে দিলেন। ন্যু ক্যাম্পে দুর্দান্ত এক গোল করেছিলেন। সেই গোলের মুগ্ধতার রেশ কাটতে না কাটতেই আজ বার্নাব্যুর দর্শকদের উন্মাতাল করে দিলেন অসাধারণ এক গোলে। বার্সেলোনার রক্ষণ বুঝতেই পারেনি এসেনসিও যে অমন একটা জায়গা থেকে আচমকা শট নেবেন। বার্সেলোনা গোলকিপার আন্দ্রে-টের-স্টেগান তো জায়গা থেকে নড়ারই সুযোগ পাননি। কেবল দেখেছেন বলটা উড়ে এসে তাঁর ডান দিকের ওপরের কোনা ঘেঁষে প্রবেশ করল জালে।

সুপার কাপে চুমু রিয়াল-অধিনায়ক সার্জিও রামোসের। ছবি: রয়টার্স
সুপার কাপে চুমু রিয়াল-অধিনায়ক সার্জিও রামোসের। ছবি: রয়টার্স

বেনজেমার গোলটির উৎসেও আছেন এসেনসিও। তাঁর পাস ধরেই বাঁ প্রান্ত থেকে ক্রস করেছিলেন মার্সেলো। বলটা বেনজেমা রিসিভ করেন ডান পা দিয়ে, একটু ঘুরেই বাঁ পায়ের শটে তা ঠেলে দেন জালে। এসেনসিওর গোলটি যদি অবাক-মুগ্ধতা হয়, তাহলে বেনজেমার গোলটি অবশ্যই আনন্দ দেবে রিয়াল-সমর্থকদের।
বার্সেলোনা ম্যাচটি হেরেছে, সুপার কাপ খুইয়েছে—এই ব্যাপারগুলোর চেয়েও বড় দুঃসংবাদ হয়ে আসছে সুয়ারেজের চোট। একে নেইমারের অভাব পূরণ করতেই হিমশিম দলটি, তার ওপর সুয়ারেজ যদি চোটের কারণে বসে যান, সর্বনাশের আর সীমা থাকবে না তাদের। আসছে রোববার থেকেই যে শুরু হয়ে যাচ্ছে লা লিগা।