৫০তম টেস্টের আগে সাকিব

স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশিকে বল নিয়ে কিছু একটা দেখাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান। কাল মিরপুরে l প্রথম আলো
স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশিকে বল নিয়ে কিছু একটা দেখাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান। কাল মিরপুরে l প্রথম আলো

সংবাদ সম্মেলনে ৫০-৬০ জন সাংবাদিক তো ছিলেনই। তাঁদের প্রত্যেকেই বাজি ধরে বলতে পারেন, এমন সাকিব আল হাসানকে আগে কেউ দেখেননি। এক কথা, দুই কথা, কখনো এক শব্দ, কখনো শুধু মাথা দুলিয়েই উত্তর শেষ করা সাকিব নন। কালকের এই সাকিব যেন শুধু কথা বলতেই সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন। কথা, কথার সঙ্গে হাসি-রসিকতা। উৎফুল্ল সাকিব!

নিজের ৫০তম টেস্টের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বলেই কি সাকিবের এমন বদলে যাওয়া! অথবা কালই জীবনের নতুন একটি পথে পা রাখার রোমাঞ্চেও হতে পারে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হওয়া সংবাদ সম্মেলনের ঘণ্টাখানেক পর মিরপুর এক নম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়েছে তাঁর নতুন দুই ব্যবসা সাকিব’স কনভেনশন হল এবং অলরাউন্ডার ক্যাটারিংয়ের। কিছুদিন আগে একই ভবনের আরেক তলায় দ্বারোদ্ঘাটিত হয়েছে ‘সাকিব ৭৫’ রেস্তোরাঁর। সেটিতে জাতীয় দলের আরেক ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস তাঁর অংশীদার। আর নতুন ব্যবসায় সাকিবের সঙ্গে আছেন রাতাসা গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহনাওয়াজ সাবি বিন আউয়াল।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনে চনমনে সাকিবকেই দেখেছেন সবাই। তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থিতিকে মনে হয়েছে একটু আগে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হওয়া সংবাদ সম্মেলনেরই ধারাবাহিকতা, যেটির শুরু সাকিবের ৫০তম টেস্ট নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মিরপুরে আগামী পরশুই তিনি খেলতে নামবেন মাইলফলক-ছোঁয়া সেই টেস্ট। প্রশ্ন হয়েছিল, ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলার সময় কি ভেবেছিলেন ৫০তম টেস্টও খেলবেন?

সাকিব: প্রথম টেস্ট খেলার সময় চিন্তা ছিল না কতটা খেলব, কত দিন খেলব। সে সময় একটা মজা ছিল। সেটা এখন নেই। এখন পরিবেশ অন্য রকম, দায়িত্ব বেড়েছে। সবকিছুই আলাদা।

৫০তম টেস্ট খেলতে ১০ বছর লাগছে, কোনো আফসোস?

সাকিব: জীবনে খুব বেশি আফসোস নেই। যা হয়েছে, তাতেই আলহামদুলিল্লাহ। বেশি খেলতে পারলে ভালো লাগত। তবে যতগুলো ম্যাচ খেলেছি, তাতে কতটা পারফর্ম করেছি, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।

৪৯টি টেস্টের মধ্যে স্মরণীয় কোনটি? কোনটিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স মনে করেন?

সাকিব: স্মরণীয় টেস্ট ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জেতাটা (২০১৬ সালে)। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স...ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯২ (অপরাজিত ৯৬) করেছিলাম, সেটা মনে পড়ছে। আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২১৭ বড় অর্জন ছিল। বোলিংয়ের দিক থেকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে।

১০ বছর খেলার পর একটা দলের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলার সুযোগ পাচ্ছেন...

সাকিব: এটা রোমাঞ্চকর। ওদের সঙ্গে নানা সময়ে ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি খেলেছি। টেস্ট এই প্রথম। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ওদের সঙ্গে একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের টেস্টকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হয়। এ রকম দেশের সঙ্গে টেস্ট খেলাটা রোমাঞ্চকর।

সংবাদ সম্মেলনের বাকিটুকুতে মিলেছে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ নিয়ে সাকিবের চিন্তাভাবনার প্রতিফলন। যার সারমর্ম, অস্ট্রেলিয়া দলটা একটু অনভিজ্ঞ হলেও যেকোনো কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়ার দারুণ ক্ষমতা তাদের। কঠিন প্রতিপক্ষের তকমাটা তাই স্টিভেন স্মিথদের গা থেকে খসে পড়ছে না। এই দলের বিপক্ষে সাকিবের মন্ত্রও খুব সহজ-সরল, ‘টেস্ট জিততে হলে সবদিকেই ভালো করতে হবে।’

সিরিজের দুটি টেস্টও জেতা অসম্ভব নয় বলে মনে হয় সাকিবের। আত্মবিশ্বাসটা আসছে বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স থেকেও। সাকিব এ প্রসঙ্গে গত ১০-১১ বছরের উন্নতিটাকেই টেনে আনলেন সামনে। কৃতিত্বটা আবার ভাগ করে দিলেন সবাইকে, ‘প্রশাসন, সুযোগ-সুবিধা, সাপোর্ট স্টাফ, কোচ—যাঁরা এত বছরে এসেছেন, এমনকি আপনাদের (সাংবাদিক), বলবয় এবং দর্শকদেরও অবদান আছে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট যতটা পছন্দ করে, ভারতেও ততটা করে না। বাংলাদেশে এখন সবকিছুর আগে ক্রিকেট। এটা খেলোয়াড়দের জন্য অনেক সন্তুষ্টির ব্যাপার।’

এবারের সিরিজে একটা দিক দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে এগিয়ে রাখছেন বাংলাদেশকেই, ‘আমাদের স্পিন আক্রমণ ওদের চেয়ে ভালো। সব কন্ডিশনে বলব না, তবে আমাদের দেশে ওদের চেয়ে আমরাই ভালো। তাইজুল-মিরাজ অনেক দিন ধরে ভালো বোলিং করছে। এই সিরিজে ওরা দারুণ কিছু করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’ স্পিন বোলিংয়ে আলাদা করে দুজনের কথা বললেও সাকিবের পুরোনো দর্শন—সাফল্যের জন্য দলের সবাইকেই কিছু না কিছু করতে হয়।

তবে ৫০তম টেস্ট বলেই ঢাকা টেস্টে অন্যদের তুলনায় একটু বেশি প্রত্যাশা থাকবে সাকিবের কাছে। ইংল্যান্ডকে হারানো ঘরের মাঠের সর্বশেষ টেস্টে বেন স্টোকসকে আউট করে স্যালুট ঠুকেছিলেন সাকিব। এবার সাকিবকে স্যালুট ঠোকার অপেক্ষায় দেশ!